ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

রেজিস্ট্রেশনবিহীন যান পেলেই ব্যবস্থা ॥ ট্রাফিক পুলিশ

বেপরোয়া ‘লাটভাই’দের বিরুদ্ধে পুলিশের বিশেষ অভিযান

প্রকাশিত: ০৬:০৭, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৮

বেপরোয়া ‘লাটভাই’দের বিরুদ্ধে পুলিশের বিশেষ অভিযান

আজাদ সুলায়মান ॥ রাজধানীতে যত্রতত্র পার্কিং করা ও বেপরোয়া গতির মোটরসাইকেল চলাচলে শৃঙ্খলা ফেরাতে শুরু হয়েছে পুলিশের বিশেষ অভিযান। হঠাৎ অভিযানে নামে ট্রাফিক পুলিশ। চালকের লাইসেন্স রয়েছে কিনা নিয়মের বাইরে যাত্রী বহন করছে কিনা, ট্রাফিক আইন মানছে কিনা-মূলত এসব বিষয়ই অভিযানে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। জানতে চাইলে ট্রাফিক নর্থ জোনের ডিসি প্রবীর রায় জনকণ্ঠকে বলেন, শুধু এ্যাপসভিত্তিক পাঠাও বা উবারের মোটরসাইকেলই ধরা হচ্ছে না, রেজিস্ট্রেশনবিহীন মোটরসাইকেল পেলেই সরাসরি ধরে থানায় পাঠানো হচ্ছে। কোন খাতির নেই। অপরাধের ধরন বুঝে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। রাজপথে চলাচলকারীদের সুবিধার্থে এ অভিযান। রাজধানীতে হঠাৎ অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে মোটরসাইকেল। সকাল থেকে রাত অবধি রাজপথের সর্বত্র চোখে পড়ে দুর্বার গতিতে বেপরোয়া ছুটছে মোটরসাইকেল। যার বেশিরভাগই বিভিন্ন এ্যাপসভিত্তিক- পাঠাও, ডাকো, হ্যালো, এসো ও উবারের মতো প্রতিষ্ঠানের রেজিস্ট্রি করা। নগরবাসী জরুরী প্রয়োজনে যানজট এড়াতে দ্রুততম সময়ে গন্তব্যে পৌঁছতে- এসব মোটরসাইকেল ব্যবহার করে। সিএনজিচালিত অটোরিক্সার তুলনায় কম ভাড়া ও কম সময়ে গন্তব্যে যেতে মোটরসাইকেল নির্ভরযোগ্য হওয়ায় হঠাৎ বেড়ে গেছে মোটরসাইকেলের সংখ্যা। রাজধানীর প্রতিটি সড়কেই মোটরসাইকেলের দাপট চোখে পড়ে। দল বেঁধে মিছিলের মতো হয়ে তাদের যাত্রী নিয়ে ছুটতে দেখা যায়। অনেক ক্ষেত্রে বেপরোয়া গতিতে চলায় পথচারীদের জন্য হুমকি হয়ে ওঠে। এতে দুর্ঘটনার হারও বেড়েছে আশঙ্কাজনক হারে। মোটরসাইকেলের দাপটে এখন নগরবাসীও নানা বিড়ম্বনার শিকার। ভিকারুননিসা স্কুলের এক অভিভাবক বলেন, ওদের আচরণ অনেকটা ‘লাটভাই’য়ের মতোই, কিছু বললেই বিপত্তি। এ বিষয়ে বিআরটিএ’র অপারেশন শাখার এক কর্তা জানালেন, প্রতিদিনই রাজধানীতে কোথাও না কোথাও মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটছে। ওরা নিজেদের নিরাপত্তাহীন করার পাশাপাশি অন্যের জন্যও হুমকিস্বরূপ হয়ে উঠছে। ওরা সংঘবদ্ধ হওয়ায় এখন কাউকে সমীহ করতে চায় না। বেপরোয়া গতির মোটরসাইকেলের ত্যক্তবিরক্ত মগবাজারের এক পিঠাওয়ালা জনকণ্ঠকে অভিযোগ করেন, গত দশ বছর ধরে এখানে বসে পিঠা বানাচ্ছি। আগে কখনও এভাবে এক সঙ্গে এত মোটরসাইকেল দল বেঁধে চলতে দেখিনি। এখন তারা এমনভাবে চলে, দেয়ালের সঙ্গে পিঠ ঘেঁষে বসেও দুশ্চিন্তায় থাকি। সেদিন এক মোটরসাইকেল এমনভাবে এসে ঘেঁষে দাঁড়াল যে সামনে একটা লোক দৌড়ে তাকে সাইড দিতে গিয়ে পড়ে যায়। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের গোলচক্করে দুই পথচারী সাইড না দেয়ায় মোটরসাইকেল আরোহী তাদের ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। প্রতিবাদ করলে মুহূর্তেই বেশ ক’টি মোটরসাইকেল এসে জড়ো হয়ে পাল্টা হুঙ্কার দিয়ে চলে যায়। বিমানবন্দর গোলচক্কর পুলিশ ফাঁড়ির পূর্বপাশের ডাবের দোকানের সামনে দেখা যায় জনাবিশেক মোটরসাইকেল রাস্তার ওপর জটলা বেঁধে অপেক্ষা করছে যাত্রী ধরার জন্য। এত মোটরসাইকেল রাস্তার ওপর এলোপাতাড়ি ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকায় সাধারণের চলাচলে বিঘœ ঘটে থাকে। তারা কিভাবে এখানে বসে থাকে প্রশ্ন করা হলে কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশ পরিদর্শক সিদ্দিকুর রহমান ভূঁইয়া জনকণ্ঠকে বলেন, যানবাহন আইনের ব্যত্যয় ঘটলেই পাকড়াও করা হচ্ছে। প্রতিদিনই কমপক্ষে দশ/বারোটি করে মোটরসাইকেল আটক করে থানায় পাঠানো হয়। বৃহস্পতি ও শুক্রবারও গোটাদশেক মোটরসাইকেলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। রাজধানীতে হঠাৎ মোটরসাইকেলের উৎপাত বেড়ে যাওয়া সম্পর্কে সিদ্দিকুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, ওরা যদি আইন মেনে চলে, অন্যের চলাচলের জন্য হুমকি ও প্রতিবন্ধকতার কারণ না হয়-তাহলে তো আর সমস্যা হয় না। ওরা চাইলে একটু নিরাপদ দূরত্বে গিয়ে রেলস্টেশনের কাছাকাছি ফাঁকা জায়গায় গিয়ে দাঁড়াতে পারে। কিন্তু তা না করে এখানে এসে প্রধান সড়ক বা সার্ভিস রুটের ওপর এমনভাবে জড়ো হয়ে থাকে, তাদের জন্য প্রাইভেট কার চালানো কঠিন হয়ে পড়ে। গত পরশু দিন এমনই এক অপ্রীতিকর ঘটনার সাক্ষী হতে হয়েছে। গোলচক্কর প্রধান সড়কের ওপর একটি প্রাইভেটকার মোটরসাইকেলের কারণে প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়ে প্রতিবাদ করায় সঙ্গে সঙ্গেই বিপদে পড়ে যান। মুহূর্তেই কয়েকটি মোটরসাইকেল ওই কারটিকে ঘেরাও করে ফেলে। এটা দেখে ছুটে যাই এবং জানতে চাইলে মোটরসাইকেল চালকরা সবাই একযোগে ‘ক্ষমা’ চেয়ে রেহাই পায়। এমনটি অহরহ ঘটছে। এদের বিরুদ্ধেই চলছে অভিযান। বিমানবন্দর সড়ক ছাড়াও নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে ট্রাফিক সার্জেন্টদের অভিযান পরিচালনা করতে দেখা যায়। ওসব পয়েন্টে সার্জেন্ট ছাড়াও রয়েছে ট্রাফিক ও আনসার সদস্য। অভিযান পরিচালনাকালে, যেসব মোটরসাইকেল চালক ও যানের বৈধ কাগজপত্র নেই, চালকের হেলমেট নেই, অনুমোদনের বাইরে, দুজনের বেশি যাত্রী বহন করছে, সিগন্যাল অমান্য করছেন তাদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। ফার্মগেট পুলিশ বক্সের সামনে এ অভিযান পরিচালনা করেন ট্রাফিক পশ্চিম জোনের টিআই মোহাম্মদ খাদেমুল ইসলাম। তিনি অভিযানের বিষয়ে বলেন, মোটরসাইকেলের শৃঙ্খলা ফেরাতে নির্দেশ অনুযায়ী আমরা অভিযান পরিচালনা করছি। বিভিন্ন অপরাধে মোটরসাইকেলের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়েছে। এছাড়া চারটি গাড়িকে রেকারিং করে ডাম্পিংয়ে পাঠানো হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত আমাদের এ অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানান টিআই খাদেমুল ইসলাম।
×