ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিমানের কার্গো ব্যবস্থাপনায় যুক্তরাজ্যের ডিএফটির সন্তোষ

প্রকাশিত: ০৬:২২, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৮

বিমানের কার্গো ব্যবস্থাপনায় যুক্তরাজ্যের ডিএফটির সন্তোষ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর বিমানের কার্গো ব্যবস্থাপনা সরেজমিনে পরিদর্শন করেছে যুক্তরাজ্যের ডিপার্টমেন্ট ফর ট্রান্সপোর্ট (ডিএফটি)। চার দিনব্যাপী এই পরিদর্শনের সময় সন্তোষ প্রকাশ করলেও ডিএফটি বেশ কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়ে গেছে। সার্বিকভাবে কার্গো ব্যবস্থাপনার যথেষ্ট উন্নতি ও আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন হলেও আরও ভাল করার মতো সুযোগ রয়েছে বলে ডিএফটির প্রতিনিধিরা মন্তব্য করেছেন। বিশেষ করে সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের অনুমতি ছাড়া সরাসরি কার্গোসহ বিমানবন্দরে প্রবেশের ওপর নজরদারি বাড়ানোর পরামর্শ দেন। ডিএফটি প্রতিনিধিদের পরিদর্শনের সময়ও এ ধরনের কিছু দৃশ্য তাদের গোচরীভূত হয়েছে বলে জানিয়েছে কার্গো হাউসের একাধিক সূত্র। এ বিষয়ে সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষও বিব্রত। জানতে চাইলে সিভিল এভিয়েশন চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল নাইম হাসান জনকণ্ঠকে বলেন, ‘অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে এখনকার কার্গো নিরাপত্তা ব্যবস্থা অনেকটাই নিরাপদ। ডিএফটি সন্তোষ প্রকাশের সঙ্গে ভাল বলে মন্তব্য করেছে। বিভিন্ন এজেন্সির লোকজনের দায়িত্ব পালনের সময় তাদের নিরাপত্তা পাস প্রদর্শনে বাধ্যবাধকতার বিষয়ে আমরা বরাবরই সচেষ্ট। ’ উল্লেখ্য, হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরের বর্তমান আমদানি ও রফতানি কার্গো হাউসের তত্ত্বাবধানকারী প্রতিষ্ঠান সিভিল এভিয়েশন। নিরাপদে উড়োজাহাজ উড্ডয়ন ও অবতরণ এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই এর প্রধান দায়িত্ব। কিন্তু উপযুক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকার অজুহাতে ২০১৬ সালের মার্চ মাসে যুক্তরাজ্য হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সে দেশে সরাসরি পণ্য পরিবহনে (কার্গো) নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পাশাপাশি তারা বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন পরামর্শ দেয়। তাদের পরামর্শ অনুসারে, যুক্তরাজ্যের বেসরকারী সংস্থা রেডলাইন সিকিউরিটিকে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নত করার দায়িত্ব দেয়া হয়। এরপর যুক্তরাজ্য একের পর এক শর্তারোপ করতে থাকে। যুক্তরাজ্যের পরামর্শ অনুযায়ী বিমানবন্দরে আধুনিক যন্ত্রপাতি বসানো হয়। বর্তমান মেম্বার (অপস) মোস্তাফিজুর রহমানের সার্বিক তত্ত্বাবধানে কার্গো ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে ব্যাপক কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়। এর মধ্যে ছিল উড়োজাহাজের হোল্ডে রাখার মতো ভারি ব্যাগ তল্লাশির জন্য ডুয়েল ভিউ এক্সরে স্ক্যানিং মেশিন, হ্যান্ড ব্যাগ তল্লাশির জন্য ডুয়েল ভিউ স্ক্যানিং মেশিন, লিকুয়িড এক্সপ্লোসিভ ডিটেকশন সিস্টেম (এলইডিএস), আন্ডার ভেহিকল স্ক্যানিং সিস্টেম (ইউভিএসএস), ফ্যাপ বেরিয়ার গেট উইথ কার্ড রিডার, বেরিয়ার গেট উইথ আরএফআইডি কার্ড রিডার, এক্সপ্লোসিভ ডিটেকশন সিস্টেম (ইডিএস), এক্সপ্লোসিভ ট্রেস ডিটেকশন (ইটিডি)। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিমানবন্দরের ৮নং গেটে তিনি বিশ্বমানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে জরুরী ভিত্তিতে আকাশপথে অত্যাধুনিক ইকুইপমেন্ট এনে তা সংযোজন করেন। এ জন্য গেটের বাইরে স্বল্পতম সময়ে দুটি পৃথক শেড নির্মাণ করেন। এখন বিমানবন্দরে প্রবেশে এ গেটে আগের মতো আর বাইরে লাইনে দাঁড়িয়ে রোদে পোড়া ও বৃষ্টিতে ভিজতে হয়না। এভাবে গত তিন বছরে সিভিল এভিয়েশন নিরাপত্তা ও অন্য অবকাঠামোগত সুবিধা নিশ্চিত করেছে। বিশ্বের অত্যাধুনিক ইডিএস মেশিনসহ ডুয়েল মোড স্ক্যানার ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি সংযোজিত করার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় শেড নির্মাণ ও পরিষ্কার পরিছন্নতায় দেশী বিদেশী পর্যবেক্ষকরাও সন্তোষ প্রকাশ করেন। এয়ার কমোডর মোঃ মোস্তাফিজুর রহমানের সার্বিক তদারকি ও দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রমের দরুন কার্গো হাউসের কার্যক্রম গতিশীল হয়েছে বলেই এখন চব্বিশ ঘণ্টা সেবা দেয়া সম্ভব বলে মনে করছে আমদানিকারকরা। একপর্যায়ে ডিএফটির সুপারিশের ভিত্তিতে এ বছরের শুরুতে কার্গোর ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয় যুক্তরাজ্য। তবে কার্গোর প্রতি তাদের সার্বিক নজরদারি বহাল থাকে। এরই মধ্যে প্রায় ৮ মাস পেরিয়ে যাওয়ায় সর্বশেষ কার্গো নিরাপত্তার চিত্র সরেজমিনে পরিদর্শন ও পর্যবেক্ষণে আসে ডিএফটি-এর একটি প্রতিনিধি দল।
×