ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বাণিজ্য যুদ্ধের পর এবার ট্যারিফ যুদ্ধের আশঙ্কা

প্রকাশিত: ০৬:৫৫, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৮

বাণিজ্য যুদ্ধের পর এবার ট্যারিফ যুদ্ধের আশঙ্কা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাণিজ্য যুদ্ধের কবল থেকে নিরাপদে থাকতে ট্যারিফ কমিশনের সক্ষমতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বাণিজ্য যুদ্ধ উপশম হওয়ার পথ বের হচ্ছে। হয়তো নিজেদের স্বার্থে উভয় দেশ শীঘ্রই সঠিক সিদ্ধান্তে আসবে। কিন্তু ট্যারিফ যুদ্ধ কখনও বন্ধ হয় না। আগামীতে এক দেশ আরেক দেশের সঙ্গে ট্যারিফ যুদ্ধে লিপ্ত হবে। আর এটাই হবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় যুদ্ধ। বাংলাদেশও এই যুদ্ধের বাইরে নয়। তাই ট্যারিফ কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠান ও দফতরগুলোর সক্ষমতা বাড়ানো প্রয়োজন। শনিবার বিকেলে ঢাকা ক্লাবের স্যামসন এইচ চৌধুরী সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশ ট্রেড এ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন ও ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ট সেক্রেটারিস অব বাংলাদেশের (আইসিএসবি) এক যৌথ আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। ‘বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ট্যারিফ কমিশনের ভূমিকা’ শীর্ষক এই আলোচনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অর্থনীতিবিদ ও ট্যারিফ কমিশনের সদস্য ড. মোস্তফা আবিদ খান। এছাড়া বক্তব্য রাখেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান ও সরকারের সচিব জহিরুদ্দিন আহমেদ এনডিসি ও আইসিএসবির সাবেক সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ড. ফিরোজ ইকবাল খান প্রমুখ। জহিরুদ্দিন আহমেদ দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশের বেশকিছু পণ্যের ওপর পাকিস্তান, তুরস্ক, ভারত ও চীন এ্যান্টি-ডাম্পিং আরোপ করে রফতানিতে বাধা তৈরি করলেও এ ব্যাপারে আমাদের নেগোশিয়েনসের কৌশলটি জানা নেই বললেই চলে। ১৯৯৫ সালে ট্যারিফ কমিশন গঠনের পর এ পর্যন্ত একটি পণ্যের ওপরও এ্যান্টি-ডাম্পিং আরোপ করতে পারেনি বাংলাদেশ। অথচ বাংলাদেশ বিশ্বের বড় আমদানিকারক দেশগুলোর মধ্যে একটি। কিন্তু এদেশের অনেক পণ্যের ওপর এ্যান্টি-ডাম্পিং আরোপ করা হয়েছে। বিশ্ববাণিজ্য সংস্থাসহ (ডব্লিউটিও) সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে এ সংক্রান্ত কয়েকটি মামলা এখন পরিচালনা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, এ কারণে ট্যারিফ কমিশনের সক্ষমতা বাড়ানো প্রয়োজন হয়ে পড়ছে। এই সংস্থাটি গঠনের পর এখন পর্যন্ত এ ধরনের সমস্যা নিরসনে কোন আইনকানুন প্রণয়ন করা হয়নি। তবে গত কয়েক বছরে আমরা বেশ এগিয়েছি। ইতোমধ্যে সংস্থাটির নাম পরিবর্তন করে বাংলাদেশ ট্রেড এ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। নতুন সরকার গঠনের পর পরবর্তী সংসদে এটি পাস হতে পারে। অথবা বিশেষ অধ্যাদেশ জারি করে নামটি পরিবর্তন করবে সরকার। ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, বর্তমান সরকার দেশের অর্থনৈতিক উন্নœয়ন ও জনগণের জীবনমান উন্নয়নে ভিশন-২১, ভিশন ২০৩০ এবং ভিশন-২০৪১ দিয়েছে। সরকারের এই লক্ষ্য অর্জনে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নয়ন। রফতানি বৃদ্ধি করতে হলে ট্যারিফ যুদ্ধের সামনে পড়বে বাংলাদেশ। সেই যুদ্ধ মোকাবেলায় প্রস্তুতি নেয়া প্রয়োজন। আগামী বিশ্বে ট্যারিফ যুদ্ধ বিশ্বের সবচেয়ে বড় যুদ্ধ হিসেবে দেখা দিবে। এ কারণে ট্যারিফ কমিশনের নলেজ শেয়ারিং ও টেকনোলজি ট্রান্সফারের মতো বিষয়গুলোতে দক্ষতা অর্জন করতে হবে। কমিশনে দক্ষ জনবল একটি বড় সমস্যা। এই সমস্যা দূরীকরণে আইসিএসবি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে। তিনি বলেন, আইসিএসবিতে অনেক প্রফেশনাল বিশেষজ্ঞ রয়েছেন। এই বিশেষজ্ঞদের নলেজ শেয়ারিংয়ে এই সংগঠনটির সঙ্গে এমওইউ চুক্তি স্বাক্ষর করবে ট্যারিফ কমিশন। এ ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে অনুমতি নেয়া হয়েছে। দুটি সংস্থা যাতে এক ছাতার নিচে আবদ্ধ হয়ে কাজ করতে পারে সেলক্ষ্যে এই চুক্তি করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ডব্লিউটিওর মতো জায়গায় সঠিকভাবে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন একটি বড় বিষয়। শুল্ক-অশুল্কজনিত সমস্যা দেশের রফতানি বাণিজ্যে একটি বড় বাধা। এই বাধা ও সঙ্কট দূরীকরণে পেশাদারিত্বের মূল্যায়ন করে এ বিষয়ে অভিজ্ঞদের কাজে লাগাতে হবে। মূল প্রবন্ধে ড. মোস্তফা আবিদ খান বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ট্যারিফ কমিশন বেশকিছু কাজ করে থাকে। বিশেষ করে ব্যবসা বাণিজ্যে কাস্টমস এ্যাক্ট বাস্তবায়ন, শুল্কহার নির্ধারণ, বাজার পরিস্থিতি ও পণ্যমূল নির্ধারণ, বহির্বিশ্বের সঙ্গে সাপটা, সাফটা, বিমসটেক, এফটিএ, ডি-৮, পিটিএ এবং অন্যান্য দ্বিপাক্ষিক চুক্তি সংক্রান্ত বিষয়ে সরকারকে তথ্য প্রদান করে সহায়তা করছে। এছাড়া জাতিসংঘ ও বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে।
×