ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

স্বাগতিক বাংলাদেশের সাফল্য বলতে একটি ব্রোঞ্জ

প্রকাশিত: ০৭:০৪, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৮

স্বাগতিক বাংলাদেশের সাফল্য বলতে একটি ব্রোঞ্জ

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ শনিবার ঢাকার পল্টনের শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ ইনডোর স্টেডিয়ামে শেষ হয়েছে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক চ্যালেঞ্জ ব্যাডমিন্টন। সেখানে গিয়ে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে দেখা গেছে অনিয়ম আর বিশৃঙ্খলার ভয়াবহ চিত্র। যার ফলে বহির্বিশ্বের কাছে ভুলুণ্ঠিত হয়েছে স্বাগতিক বাংলাদেশের মান-মর্যাদা। ক্রীড়ামোদীরা তাই অভিযোগের তীর ছুড়েছেন আসরের আয়োজনের দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ ব্যাডমিন্টন ফেডারেশনের দিকে। তারা ফেডারেশন চালানোর জন্য যোগ্য কি না, প্রশ্ন উঠেছে সেটা নিয়েও। ইনডোর স্টেডিয়ামে পুরো টুর্নামেন্টটি অনুষ্ঠিত হয়েছে কোন শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই। ফলে বিদেশ থেকে আগত শাটলাররা তীব্র গরমে খেলতে যথেষ্ট অস্বস্তিবোধ করেছেন। সবচেয়ে বেশি হ-য-ব-র-ল অবস্থার সৃষ্টি হয় প্রতিযোগিতার সমাপনী দিনে, নির্দিষ্ট করে বললে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে। প্রতিযোগীরা কে কোন্ স্থান অধিকার করেছেন সেটা বোঝানোর জন্য আলাদা আলাদা উচ্চতার সিঁড়ি বা ধাপ ব্যবহার করার নিয়ম আছে। অথচ এখানে তার কোন বালাই ছিল না। বরং সব প্রতিযোগীকেই সমতল এক মঞ্চেই ডেকে নেয়া হয়। ফলে তাদের দূর থেকে দেখে আর বোঝার উপায়ই ছিল না কে কোন্ স্থান অধিকার করেছেন। শুধু তাই নয়। পুরস্কার বিতরণের সময় শুরুতেই একটি ইভেন্টের চ্যাম্পিয়নদের না ডেকে বরং তাদের দাঁড় করিয়ে রেখে তাদের জায়গায় পাঠানো হয় রানার্সআপধারীদের এবং পুরস্কারও দিয়ে দেয়া হয়। তার মানে রানার্সআপধারীদের পরিচয় করিয়ে দেয়া হয় চ্যাম্পিয়ন জুটি হিসেবে। এমনকি বিদেশী সেমিফাইনালিস্ট জুটিকে ভুল করে রানার্সআপ ভেবে গিফট দিলেও তা ফিরিয়ে নেয়া হবে বলে তাদের জানানো হয়। আরও আছে। চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপদের জন্য প্রাইজমানি ছিল। তবে মেডেল ছিল না। বরং তাদের দেয়া হয় সস্তামূল্যের ক্রেস্ট। যা নিয়ে সংবাদ মাধ্যমের কাছে তাৎক্ষণিকভাবেই অনেক প্রতিযোগীই ক্ষোভ প্রকাশ করেন। আরও একটি ‘মহা’ভুল করে ফেলে ব্যাডমিন্টন ফেডারেশন। ব্রোঞ্জ মেডেলিস্ট ঘোষণা দিয়েও ক্রেস্টে সেটা না লিখে বরং লেখা হয় ‘সেমিফাইনালিস্ট’। এটা যে ওই খেলোয়াড়ের জন্য কতটা অসম্মান এবং অপমানের সেটা বোঝার সাধ্য কী আছে ফেডারেশনের? প্রতিটি ইভেন্টের চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপদের চেক (ডামি চেক) দেয়ার কথা ছিল পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের শুরুতেই, অথচ সেটা ভুলবশত দেয়া হয় একেবারে শেষের দিকে প্রতিযোগীদের আবারও দ্বিতীয়বারের মতো মঞ্চে ডেকে নিয়ে! এসব অনিয়ম দেখে সেখানে উপস্থিত বিদেশী খেলোয়াড়-কর্মকর্তারা বেজায় হাসাহাসি করেছেন। বেশি হেসেছেন হোম এ্যাপ্লায়েন্স হিসেবে পাওয়া লাঞ্চ বক্স ও ব্লেন্ডার মেশিন দেখে। এরপরই একটি অনাকাক্সিক্ষত ঘটনায় সবাই হতবাক হয়ে যান। অনুষ্ঠান শেষে ব্যাডমিন্টন ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আমির হোসেন বাহার ও মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান শাহজালাল মুকুল স্যুভেনুর বিতরণকে কেন্দ্র করে বাকবিত-ায় জড়িয়ে পড়েন। টুর্নামেন্টের রেফারি মালদ্বীপের আলী আবদুল করিমও হতবাক হন। পরে অবশ্য পরিস্থিতি শান্ত হয়। সার্বিকভাবে ব্যাডমিন্টন ফেডারেশনের সাংগঠনিক দুর্বলতা প্রকটভাবে চোখে পড়েছে। যাতে বাংলাদেশের সুনাম ক্ষুণœ হয়েছে নিঃসন্দেহে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাডমিন্টন ফেডারেশনের ‘সুযোগ্য’ কর্তারা কী আদৌ এর দায় নেবেন? টুর্নামেন্টে দ্বিমুকুট জিতেছেন ইন্দোনেশিয়ার লিও রোলি কার্নান্দো। তিনি পুরুষ দ্বৈত ও মিশ্র দ্বৈতে এই কৃতিত্ব দেখান। পুরুষ এককে মালয়েশিয়ার টেক জি সু, মহিলা এককে ভিয়েতনামের থুই লিন নগুয়েন, পুরুষ দ্বৈতে ইন্দোনেশিয়ার লিও রোলি ও ড্যানিয়েল মার্টিন জুটি, মহিলা দ্বৈতে মালয়েশিয়ার হু বিবিয়ান ও ইয়াপ চেং ওয়েন জুটি এবং মিশ্র দ্বৈতে ইন্দোনেশিয়ার লিও রোলি ও ইদাহ সারি জামিল জুটি চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। এই আসরে বাংলাদেশের একমাত্র সাফল্য ছিল মহিলা দ্বৈতে তাম্রপদক এলিনা সুলতানা এবং শাপলা আক্তার জুটির তাম্রপদক জয়। শুক্রবার এই ইভেন্টে সেমিতে তারা ৩-২১ ও ৭-২১ পয়েন্টে মালয়েশিয়ার হু বিবিয়ান ও ইয়াপ চেং ওয়েনের কাছে হেরে তাম্রপদক লাভ করেন। এ প্রসঙ্গে এলিনা সুলতানা বলেন, ‘দেশের মাটিতে সেমিফাইনালে উঠে ব্রোঞ্জ নিশ্চিত করতে পারায় খুব খুশি আমরা।’ একই কথা শাপলা আক্তারেরও, ‘এককে না পারলেও দ্বৈতে আমরা সফল হয়েছি। এখন আমাদের লক্ষ্য মালয়েশিয়ার বিপক্ষে জেতা।’ উল্লেখ্য, এই আসরে এই ইভেন্টে এই জুটি এর আগেও ব্রোঞ্জ জিতেছিলেন। সেটা ২০১১ আসরে। গত সাত বছরের পারফর্মেন্স নিয়ে উভয়েরই অভিন্ন সুর, আগে আমরা যাদের হারাতাম এখন তাদের সঙ্গে আমরা আর পারি না। এই সাত বছরে আমাদের পারফর্মেন্স নিচে নেমেছে। এর কারণÑ আমরা নিয়মিত আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টগুলোতে খেলার সুযোগ পাই না। ফলে আমাদের বিশ্ব র‌্যাঙ্কিংয়ের অনেক অবনমন হয়েছে।
×