ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কবিতা

প্রকাশিত: ০৮:৩৯, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৮

কবিতা

চেতনার জানালায় মতিন বৈরাগী হৃৎপি-ের উপর যে লাফায় সে বুঝি সচল ব্রহ্মা- একটা মুখ যেনো অস্পষ্ট ছায়া অস্তিত্ব ঘোষণা করে আগামীর হা’ মুখো কৃষ্ণগহ্বর, শুষে নিচ্ছে যাবতীয় ভাব ও ভাষার বাহুল্য প্রচ- পদবিক্ষেপ কুচকাওয়াজ হয়ে যদি যায় ঝলমল করা এক রোদ পাতায় পাতায় খেলা করে রোদাশা বেবুনেরা পালিয়েছে সায়গন বন্দরের বেড়া টপকিয়ে রাত্রির কালো যদিও তখনও ঘন অরণ্যের তবু জোনাকীরা জ¦ালাবে আলো আরো কয়েকবার টেবিল ঘড়িতে রাত বারোটা বিপরীত থেকে বিপরীতে শব্দগুলো পাঁপড়ি মেলে নতুন অর্থের কেন্দ্র বদলে যায় হেঁটে আসে বৃক্ষগুলো নগরের দিকে সমতাল পায় আর বাহুর উর্ধমুখী আহ্বানে দাঁড়ায় সূর্য মেঘফুল উড়ে বসে প্রিয়তমার নাকে ধর্মনিরপেক্ষ হও, সাম্যে দাঁড়াও পথিক, গণতন্ত্রে বাড়াও হাত এবং ফেরো রাঙা স্বাধীনতার দিকে আঙুলগুলো লাফিয়ে উঠছে ঈশানের মেঘ ফেড়ে ওই আঙুল সমবেত জনতার; আলো আসবে কাঁপুনিটা হৃৎপি-ের ব্রহ্মা-ের মতো দুলছে ধুকপুক ধুকপুক- দুধরঙা পথ চেতনার জানালায় ছবি হয়ে আছে। ** ডাক দিয়ে যায় সৈয়দ রফিকুল আলম আছি, পড়ছি লিখছি-তবে লেখার চেয়ে ও পাঠের অধ্যয়ন বেশি দেশ দুনিয়ার কীর্তিমান অগ্রণী লেখক কিংবা প্রচুর গবেষণাধর্মী সাহিত্য কর্মে সাধ্যমতো ডুবে থাকি। ভালোলাগে শিক্ষনীয় বর্ণিল বিষয় আমাকে আপ্লুত করে’ ভাবি, তুলনামুলক কতোই না পিছে পরে হাবুডুবো খাচ্ছি, অথচ এখনো নিজেকে চেনা ও জানার সম্যক কিংবা- সামূহিক বোধ অর্জনের দোলাচলে ক্ষীয়মাণ অনুধ্যায়ে ভিরমি খাচ্ছি।’ কিছু কিছু লেখার- চয়ন অতৃপ্তির মধ্যে তৃপ্তি- পাওয়া যায় না এমন নয়- কিছু কিছু দৃশ্যাবলী বুকে ঢুকে পড়ে, তার অন্তর্ভেদী দৃষ্টি দিয়ে নিজ রক্ত মাংসে জাড়িত মিশ্রণে- ঢোকানোর চেষ্টা করি। কতদূর হয় জানা নেই। যতোই দিনানুদিন ক্ষয় হয় ততই যেন বা ভূতম পেঁচার ডাকশোনা যায় কিছু প্রাপ্তি সমুদ্র অতলে ডুবে যায় ঘুটঘুট আঁধার অতলান্তে নিশিডাক ডাক দিয়ে যায়, যায়- বার বার যায়। মাছরাঙ্গা পাখির মতো শিকারী চোখ ফোঁড়ে অতল জলে শিকার- হয় না কারো কারো। তাই- এ পাড় ও পাড় দেখাদেখি শুধু গ্লানিভরা চোখে নত হই। ** রক্তনদী একাত্তর হাসান হাফিজ হানাদার শত্রুমেঘ চিরে ফুঁড়ে জেগে ওঠা নতুন সকাল নতুন পতাকা অবয়বে অস্থিরতা, আত্মার ভূগোলব্যাপী এত রক্ত? এত বিসর্জন? আকাশপ্রতিম ত্যাগ? এতটা লড়াই? একাত্তর, তুমি জ্বলো দুরন্ত স্পর্ধায় তুমি দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান অমৃতসমান তুমি প্রিয় স্বাধীনতা তুমি নদী, রক্তের পবিত্র ধারা তুমি শান্তি, একইসঙ্গে বিক্ষোভেরও অনন্ত বারুদ ** তারামন বিবি মারুফ রায়হান মাটিতেও জন্ম নেয় তারা, চিরদ্যুতিমান জানিয়ে দিয়েছিলো ঊনিশ শো একাত্তর সে এক সময় গেছে দেশমাতৃকার শুভ্র গন্ধরাজ রক্ত¯œানে হয়ে উঠেছিলো আশ্চর্য রক্তিম আর গোলাপেরা ঢেকে গিয়েছিলো ধবধবে কাফন-শাদায় সেসময় ফুটেছিলো তারামন, বাংলার আঁখিতারা বঙ্গকিশোরী ওই হেঁশেলের খুনতি ফেলে হাতে তুলে নিয়েছিলো স্টেনগান তা না হলে বাংলা মা কিভাবে মুক্ত হতো! কুড়িগ্রামে পাপড়ি মেলতো বিজয়ের পুষ্পকুঁড়ি? ব্রহ্মপুত্রের জলে জ্বলজ্বল করতো স্বাধীনতার সূর্য! তোমাকে অভিবাদন, হে বীরপ্রতীক তোমাকে অন্তিম অভিবাদন, বাংলার আঁখিতারা তারামন ** আকাশের মানচিত্র রেজাউদ্দিন স্টালিন তিনি বানালেন এক কর্মস্থল তাঁর নেপথ্য ভিত্তি পাথর ও দেয়াল এবং ছাদ আর বজ্রনিরোধক জানালার ভেতর দিয়ে দেখা দিগন্ত এবং প্রস্থানের দরোজা অব্যাপ্ত পরিধি তবু বানালেন বাগান এবং তার সুরক্ষা সুগন্ধি ছড়ানো হা¯œাহেনা পাতাবাহারের শ্রদ্ধাঞ্জলি ভালোবাসার স্মরণীয় শিশির তিনি বানালেন আকাশের মানচিত্র রাখলেন হৃদয়ে এক টুকরো স্বদেশ এবং বেরিয়ে পড়লেন নিঃসঙ্গ একা গভীর রাত্রির ভেতর দিয়ে তার কর্মস্থলে ** হাওয়ায় বিলীন সুখ শাহীন রেজা (প্রয়াত তারামন বিবি’র স্মরণে) ডাকবো বলে যেই খুলেছি মুখ হঠাৎ দেখি হাওয়ায় বিলীন সুখ হুতুমটা সেই ডাকে ঘরের কোনে বুকের ভিতর ব্যথারই বীজ বোনে নেই তুমি নেই বাতাসে ধূপ-ঘ্রাণ ভোরের বীণা কাঁদিয়ে গেলো প্রাণ তারায় তারায় যাবার খবর রটে মেঘবালিকা উপুড় বালুর তটে একাত্তরের তোমার সাহস-বীণা আজও বাজে কঠিন ক্লান্তহীনা মাগো আমার বীরাঙ্গনা বেশ তুমি শ্রাবণ তুমিই আলোর কেশ তারামনের সেই তারাটা আজ গর্ব সেতো, আমার মাথার তাজ। ০৫.১২.২০১৮ ** যে বৃষ্টি হতে পারতো আত্মকেন্দ্রিক ফকির ইলিয়াস ছায়াগুলো চাইলেই আত্মমগ্ন হতে পারে না। কিন্তু বৃষ্টিগুলো পারে। তারা চাইলেই ভিজিয়ে দিতে পারে মাঠ-ঘাট, তৃণলতা, এবং মানুষের ঘরের ছাউনি। . আকাশ চাইলেই মানুষের স্বাধীনতা দিতে পারে না। কিন্তু যুদ্ধগুলো পারে। রক্ত এবং হাড়ের দাগ দেখে শনাক্ত করা যায়, এদেশে জীবনের বিনিময়েই লেখা হয়েছিল ঝড়বিজয়ের দীর্ঘ গল্প। . ভোর চাইলেই বদল করে দিতে পারে না, ভাগ্যের বিবর্তন। কিন্তু প্রখর সূর্যটি পারে। একদিন পুকুরকে ভালোবাসতে-বাসতে কচুরিপানায় মুখ লুকিয়েছিল যে শাদা রাজহাঁস- সেও আনন্দে বলতে পারে পতাকাটি আমাকে দাও। আমি বাতাসের ঠোঁটে ঠোঁটে উড়িয়ে দেব এই বিজয়ের হর্ষধ্বনি। ** আমার চোখে বিজয় দুলাল সরকার আমার চোখে বিজয় মানে মুক্তি আমার চোখে বিজয় মানে বাঙাল জাতের রক্তে ভেজা স্বকীয় এক জাতিসত্তা একই তাঁবুর নিচে থাকা অসীম গণভিত্তি আমার চোখে বিজয় মানে পুষ্ট ছড়ার ধানের দোলা থেকে থেকে কিষাণ কিষাণ রৌদ্র মাঠে ইঁদুর মুক্ত আলোর ¯্রােতে উন্নত এক জীবজ পঙ্তি অনূদিত স্বপ্নপূরণ বিকাশমান জীবনকলা নূতন নূতন বোধের আকাশ খুলে যাওয়া স্বকীয়তা, বিজয় গাঁথা... রক্ত দামের ইতিকথা প্রসারিত ব্যপ্ত মনের উদাত্ত দিন। তারিখ : ০২.১২.২০১৮ ইং ** পল কনেট : ভালবাসার পরম্পরা বাদল আশরাফ যে সময়ে তোমার শোভা পেতো এলেনকে নিয়ে হানিমুন যাত্রার ঠিক সে সময়ে স্থির তোমার দিব্যদৃষ্টি, চেতনায় নীলাভ তোমার অন্তরীক্ষ জুড়ে বেজে উঠেছিল ‘শোন একটি মুজিবরের কণ্ঠ থেকে লক্ষ মুজিবরের কণ্ঠ-স্বরের ধ্বনি প্রতিধ্বনি আকাশে বাতাসে ওঠে রণি ...’ পল! হে যুদ্ধ বিরোধী সেদিন তোমার কণ্ঠেও ধ্বনিত হয়েছিল বাংলাদেশ বাঙালী এবং অবিসংবাদিত মুজিবের নাম, তোমার হাত ধরে গড়ে ওঠে সংহতি সমাবেশ- গর্জে ওঠে ট্রাফালগার স্কয়ার সুদূর লন্ডনে ... ‘এ্যাকশন বাংলাদেশ’ গড়ে তুলে এসে দাঁড়াও যুদ্ধাক্রান্ত বাংলায় ‘অপারেশন ওমেগা’র আবরণে! অদ্ভুত এক প্রতিবাদী- তুমিও মুজিবের কতক সহযোদ্ধার মত বন্দী হয়েছিলে শত্রুর হাতে, যদিও তোমার দু’চোখে ছিল নক্ষত্রের জ্যোতি লক্ষ্য ব্যর্থ না হওয়ার ... বিজয়ের পর তুমি ফিরে গেছ নিজ ভূমে, প্রিয়তমা এলেনের কাছে। তারপরও কী অদ্ভুত ভালবাসা- তোমাদের বুক জুড়ে শুধু সবুজে সবুজময় বাংলাদেশ নয়- শুদ্ধতম ভালবাসার পরস্পরায় তোমাদের নবজাতক হয়ে গেল ‘উইলিয়াম মুজিব’ বিপ্লব স্পন্দিত যৌবনের অনিন্দ্য উত্তরাধিকার! ** কুয়াশার সাইরেন শাহীন মাহমুদ কুয়াশার সাইরেন শুনি-রানাঘাটের নির্জন প্রান্তরে কালের যাত্রায় কুয়াশায় সিক্ত ছোট ছোট ঘাসফুল ধুন্দুলের সিঁড়িতে ঝুলে থাকা চড়ই চঞ্চু মেঠো পথে ফুটে আছে মায়াফুল। কল্যাণীর ফেলে আসা করিডোরে জ্বলছে নীরবতা কলাবতিফুল নারী হয়ে ভাবনার কুয়াশা সাইরেন বাজিয়ে সরে যায় দূরে বহু দূরে ওটাও কি তবে প্রেম ছিল? আসলে প্রেমের সংজ্ঞা আমি পড়িনি আজন্ম পিপাসায় শুনি কৃষ্ণনগরের শিশিরের গান চঞ্চল আকিঞ্চন উড়ছে প্রাণে ধ্যানের আকাশে-কল্যাণীর সেই অনুরূপা হয়ে। ** আগামী নুরুল ইসলাম বাবুল ঘুরে ঘুরে ঠিক উল্টোপথের গলি মিশে গেছে বেশ আমরা যে পথে চলি তবু জীবনের পাই না যখন মানে বলে দেই তা বাতাসের কানে কানে... চেয়ে দেখি মেঘ হয়ে ওঠে ব্যথাহত নিমিষেই হয় এ মাটির কাছে নত আমরা তখন বৃক্ষের গান শুনি স্বপ্নমুখর আগামীর দিন গুনি।
×