ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চট্টগ্রাম-২ আসনে ত্রিমুখী লড়াই

প্রকাশিত: ০৪:০৪, ১৭ ডিসেম্বর ২০১৮

চট্টগ্রাম-২ আসনে ত্রিমুখী লড়াই

হাসান নাসির, চট্টগ্রাম অফিস ॥ ফটিকছড়িতে ভোটের লড়াই হচ্ছে ত্রিমুখী। নৌকা ও ধানের শীষের সঙ্গে সমানতালে চলছে স্বতন্ত্র ‘আপেল’ প্রতীকের প্রচার। কেন্দ্রের নির্দেশনা সত্ত্বেও নির্বাচনের মাঠে রয়েছেন চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী এটিএম পেয়ারুল ইসলাম। মহাজোট প্রার্থী সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারীর বিরুদ্ধে আপেল মার্কা নিয়ে লড়ছেন এই নেতা। এই প্রার্থীর নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার কোন লক্ষণ এখনও পরিলক্ষিত হচ্ছে না। বরং আওয়ামী লীগের বড় অংশটি তার সঙ্গেই রয়েছে বলে প্রতীয়মান। এদিকে, রবিবার চট্টগ্রাম মহানগরীসহ জেলার প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় বিজয়ের আনন্দে চলেছে ভোটের প্রচার। বিশেষ এ দিনটিতে ভোট উৎসবে যুক্ত হয় বাড়তি মাত্রা। ফটিকছড়ি আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা এটিএম পেয়ারুল ইসলাম জানান, আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সংগঠন আওয়ামী লীগেই আছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুগত হিসেবে ছিলাম, আছি এবং থাকব। তাহলে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে নির্বাচন করছেন কেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কেন্দ্রের সঙ্কেত পেয়েই আমি মনোনয়নপত্র দাখিল করি। আমার পক্ষে হাজার হাজার কর্মী আগেভাগেই মাঠে নেমে পড়েছেন। অবস্থা এমন পর্যায়ে উপনীত হয় যে, শেষ পর্যন্ত আমার পক্ষে আর নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানো সম্ভব নয়। স্থানীয় আওয়ামী লীগও আমার পক্ষেই আছে। চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীক পেয়েছেন তরিকত ফেডারেশনের সভাপতি সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভা-ারী। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি মহাজোটের হিসেবে এ আসন থেকে এমপি হন। কিন্তু এবার ঘটে যায় বিপত্তি। এ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা এটিএম পেয়ারুল ইসলাম। এলাকায় তিনি বেশ জনপ্রিয়। স্থানীয় আওয়ামী লীগও আসনটি শরিক দলের কাছে ছাড়তে রাজি নয়। ফলে শেষ পর্যন্ত এ আসনে বিদ্রোহী প্রার্থী থেকেই যায়। স্বতন্ত্র প্রার্থী এটিএম পেয়ারুল ইসলাম বলেন, দলীয় প্রতীক না পেলেও আমি দলের হিসেবেই লড়ছি এবং নির্বাচনে আমি বিজয়ী হয়ে আসনটি শেখ হাসিনাকে উপহার দেব। উল্লেখ্য, এ আসনে ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির প্রার্থী হয়েছেন মোঃ আজিমউল্লাহ বাহার। এদিকে, চট্টগ্রাম নগরীতেও রবিবার চলেছে প্রার্থীদের ভোটের প্রচার। বিজয় দিবস হওয়ায় এ দিনের প্রচারে যুক্ত হয় ভিন্ন মাত্রা। বিজয়ের আনন্দে নির্বাচনী প্রচার চালিয়েছেন প্রার্থীরা। চট্টগ্রাম-৮ (চান্দগাঁও-বোয়ালখালী) আসনে এদিন ব্যাপক প্রচার চালান নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জাসদ নেতা মইনউদ্দিন খান বাদল। তিনি নিজেই কর্মী সমর্থকদের নিয়ে ভোটারদের মধ্যে প্রচারপত্র বিলি করেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখা এবং উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে তিনি নৌকায় ভোট দিতে ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানান। এ আসনে বিএনপির প্রার্থী আবু সুফিয়ানও বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেন। তার সঙ্গেও ছিল বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী ও সমর্থক। চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালি-বাকলিয়া) আওয়ামী লীগের ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল সকালে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর গণসংযোগে নেমে পড়েন। মহানগর আওয়ামী লীগের একটি বড় অংশ ব্যস্ত রয়েছে নওফেলের নির্বাচনী কাজে। মহিউদ্দিন চৌধুরীর পুত্র হওয়ায় তাকে ঘিরে রয়েছে জনসাধারণের আবেগও। প্রথমবারের মতো নির্বাচনে নেমেই তিনি বেশ সাড়া ফেলেছেন। নির্বাচনী প্রচারে তিনি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ভোট প্রত্যাশা করেন। একই আসনের বিএনপির প্রার্থী ডাঃ শাহাদাত হোসেন কারাগারে থাকায় তার পক্ষে গণসংযোগ ও মিছিল করেছেন মহানগর বিএনপির বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী। ভোটের প্রচারের পাশাপাশি তারা ‘ডাঃ শাহাদাত হোসেনের মুক্তি চাই’ স্লোগানযুক্ত ব্যানার ধারণ করেন। আসনটিতে ভোট হবে ইভিএম পদ্ধতিতে। চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং-হালিশহর) আসনেও বিজয় দিবসের প্রচার ছিল একই চিত্র। দিবস উদযাপনের পাশাপাশি পরিলক্ষিত হয় উৎসব আমেজে ভোটের প্রচার। নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ডাঃ আফসারুল আমিন একাধিক এলাকায় গণসংযোগ চালান। তার সঙ্গে ছিল বিশাল কর্মী বাহিনী। এ আসনে বিএনপির প্রার্থী আবদুল্লাহ আল নোমান। তিনিও ধানের শীষ প্রতীকের পক্ষে তৃণমূলের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে পাড়া মহল্লায় গণসংযোগ করেন। চট্টগ্রাম মহানগরীর চারটি আসনের মধ্যে এ আসনটিতেই ভোটের আমেজ সবচেয়ে বেশি। অলিগলিতে উভয় প্রার্থীর ছবি ও প্রতীক সম্বলিত বিপুল পোস্টারিং পরিলক্ষিত হচ্ছে। চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী এমএ লতিফ রবিবার বিকেলে বিরাট এক সমাবেশ করেন আগ্রাবাদ বাদামতলী এলাকায়। সেখানে যোগ দেন মহানগর আওয়ামী লীগ ও স্থানীয় পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ ছাড়াও ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা। সমাবেশ শেষে একটি নির্বাচনী মিছিল বের হয়। স্লোগান ও প্রচারপত্রে জনগণের কাছে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে বর্তমান সরকারের নানা উন্নয়নের চিত্র এবং আগামীর স্বপ্ন। একই আসনে বিএনপির প্রার্থী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর নেতৃত্বে বের হয় বিজয় র‌্যালি, যা নির্বাচনী প্রচারে রূপ নেয়। ধানের শীষ প্রতীকের এ প্রার্থী বলেন, দেশে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠিত হলেই স্বাধীনতার প্রকৃত স্বপ্ন পূরণ হবে। তিনি বলেন, বিএনপির প্রতি জনগণের সমর্থন দেখছি, উচ্ছ্বাস দেখছি, উদ্দীপনা দেখছি। ভোটাররা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে।
×