শ্রীলঙ্কার বিতর্কিত প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দ রাজাপাকসের পদত্যাগের পর রবিবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন রনিল বিক্রমাসিংহে। ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টির নেতা বিক্রমাসিংহে দুমাস আগেও দেশটির প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। মন্ত্রিসভার মুখপাত্র রাজিথা সেনারত্নে খবরটি নিশ্চিত করেছেন। বিবিসি ও ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।
রাজাপাকসের পদত্যাগের পর ফের প্রধানমন্ত্রী হলেন ৬৯ বছর বয়সী বিক্রমাসিংহে। বিক্রমাসিংহের মন্ত্রিসভার মুখপাত্র রাজিথা সেনারত্ন রবিবার দিনের আরও প্রথম দিকে বলেছিলেন, বিক্রমাসিংহে এদিন যেকোন সময়ই শপথ নিতে পারেন। প্রেসিডেন্ট মৈত্রীপালা সিরিসেনার কাছে ফের শপথবাক্য পাঠ করেন বিক্রমাসিংহে। তিনি স্থানীয় সময় বেলা সোয়া ১১টার সময় শপথ নেন। এই নিয়ে পঞ্চমবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিলেন বিক্রমাসিংহে। আশা করা হচ্ছে এর মধ্যদিয়ে দেশটিতে রাজনৈতিক সঙ্কটের অবসান ঘটবে। বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, বিক্রমাসিংহে প্রধানমন্ত্রী হওয়ায় ১ জানুয়ারি থেকে শুরু হতে যাওয়া অর্থবছরের জন্য বাজেট অনুমোদন করা সুবিধা হবে। শনিবার প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে সরে দাঁড়ান রাজাপাকসে। রাজাপাকসের পদত্যাগের বিষয়টি তার ছেলে বিবিসির কাছে নিশ্চিত করেন। ২৬ অক্টোবর প্রেসিডেন্ট মৈত্রীপালা সিরিসেনা আকস্মিকভাবে রনিল বিক্রমাসিংহেকে বরখাস্ত করেন এবং রাজাপাকসেকে ওই পদে বসান। এরপর থেকেই দেশটি রাজনৈতিক সঙ্কট দেখা দেয়। সিরিসেনা ৯ নবেম্বর বলেন, ৫ জানুয়ারি পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নতুন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা দিয়ে তিনি পার্লামেন্ট ভেঙে দেন। বিক্রমাসিংহের ইউএনপিসহ আরও দুটি দল সিরিসেনা এসব কর্মকান্ডের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে। পরবর্তীতে সুপ্রীমকোর্টে পার্লামেন্ট ভেঙে দেয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল ঘোষিত হয়। বিভিন্ন ইস্যুতে বিক্রমাসিংহের সঙ্গে সিরিসেনার সম্পর্কে দূরত্ব তৈরি হয়েছিল। রাজাপাকসেকে প্রধানমন্ত্রী করা হলেও পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে না পারায় তিনি সে পদ ধরে রাখতে পারেননি। পার্লামেন্টও ভেঙে দিয়েও রাজাপাকসের শেষ রক্ষা হয়নি। বৃহস্পতিবার সুপ্রীমকোর্ট সিরিসেনার ওই পদক্ষেপ বেআইনী বলে রায় দেয়। সুপ্রীমকোর্টের রায় ও পার্লামেন্টের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের সমর্থন লাভে ব্যর্থ হওয়া রাজাপাকসে শনিবার পদত্যাগ করেন। বুধবার পার্লামেন্টে বিক্রমাসিংহের প্রধানমন্ত্রিত্বের প্রতি আনা আস্থা প্রস্তাব পাস হয়। এ পরিস্থিতিতে বিক্রমাসিংহের প্রধানমন্ত্রিত্ব ফিরে পাওয়ার পথ পরিষ্কার হয়। বিক্রমাসিংহে অবশ্য প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে বরখাস্ত হওয়ার পর তার সরকারী বাসভবন ‘টেম্পল ট্রিসে’ অবস্থান করেন। তিনি সিরিসেনার উদ্দেশে লেখা এক চিঠিতে বরখাস্তের সিদ্ধান্তকে অসাংবিধানিক আখ্যা দিয়েছিলেন। রাজাপাকসে প্রেসডেন্ট থাকা অবস্থায় সিরিসেনা তার মন্ত্রী ছিলেন। পরে রাজাপক্ষের সঙ্গে সিরিসেনার বিরোধ ঘটে। ২০১৫ সালে অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সিরিসেনা রাজপাকসেকে পরাজিত করে প্রেসিডেন্ট হন। ওই নির্বাচনে জিততে বিক্রমাসিংহে সিরিসেনাকে সহযোগিতা করেন। কিন্তু সরকার গঠনের পর মন্ত্রিসভায় ভারতকে একটি বন্দর ভাড়া দেয়া নিয়ে দুজনের মধ্যে বিরোধের সূত্রপাত হয়। রাজাপাকসে প্রেসিডেন্ট থাকাকালে ২০০৯ সালে তামিল বিদ্রোহীদের গৃহযুদ্ধের অবসান ঘটে। গৃহযুদ্ধ অবসানের জন্য রাজাপাকসেকে কৃতিত্ব দেয়া হয়। তবে এ নিয়ে বহু সমালোচনাও রয়েছে। গৃহযুদ্ধ চলাকালে এবং রাজাপাকসের স্বৈরাচারী কর্মকান্ডের বিচারের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০১৫ সালে ইউএনপি ক্ষমতায় আসে এবং বিক্রমাসিংহে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। তবে বিক্রমাসিংহেকে পুনর্বহালকে সিরিসেনার জন্য বিব্রতকর মনে করা হচ্ছে। কেননা তাকে সরিয়ে নিজের পছন্দের ব্যক্তিকে প্রধানমন্ত্রী করেছিলেন সিরিসেনা।