ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ড. কামালের ‘খামোশ’

প্রকাশিত: ০৪:১৮, ১৭ ডিসেম্বর ২০১৮

ড. কামালের ‘খামোশ’

অবশেষে থলের বিড়াল বেরিয়ে পড়েছে। এর মধ্য দিয়ে অবশ্য ড. কামাল হোসেনের আসল চেহারা উন্মোচিত হয়েছে দেশের আপামর জনসাধারণের কাছে। এতদিন দেশের মানুষ জানতেন যে, ড. কামাল হোসেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্নেহধন্য, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আইনজীবী, দেশে-বিদেশে যার খুব নামডাক ও খ্যাতি। সর্বোপরি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের পবিত্র জাতীয় সংবিধান প্রণয়ন কমিটির অন্যতম একজন। সেই কামাল হোসেন শেষ পর্যন্ত এতটা নিচে টেনে নামালেন নিজেকে একজন সাংবাদিককে দেখে নেয়ার হুমকি দিলেন! তাও জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে, ক্ষমতায় না যেতেই। তাহলে ক্ষমতায় গিয়ে তিনি বা তারা সত্যি সত্যিই কি করবেন, তা সহজেই অনুমেয়। উর্দু শব্দ ‘খামোশ’ উচ্চারণের মাধ্যমে এদিন ড. কামালের মধ্যে পাকিস্তানের স্বৈরশাসক ইয়াহিয়া-ভুট্টো- টিক্কা-মিট্টা খানের প্রেতাত্মাই প্রতিধ্বনিত হয়েছে। ড. কামাল হোসেন গণফোরামের চেয়ারম্যান। এতদিন নিজের দল নিয়ে কোথাও কোন ‘কল্কি’ না পেয়ে সম্প্রতি আহ্বায়ক সেজে বসেছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের। নামে জাতীয় হলেও মূলত বিএনপি-জামায়াতের ধ্বজাধারী। আজীবন বঙ্গবন্ধুর স্নেহধন্য ও আওয়ামী লীগের নেতা এবং আনুকূল্যে পরিপুষ্ট ও বর্ধিত হলেও আশি বছরে উপনীত হয়ে কি চিন্তা ও হিসাব করে বিএনপি-জামায়াতপুষ্ট ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক হয়ে বসলেন, তা একটি বিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন বটে। মনে রাখতে হবে যে, সেই সময়ে যখন বিএনপি চেয়ারপার্সন দুর্নীতির মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে দশ বছরের সাজাপ্রাপ্ত ও কারাবাসিনী এবং ভাইস চেয়ারম্যান তদীয় পুত্র পলাতক প্রবাসী ও দন্ডপ্রাপ্ত। বিএনপির অন্যতম শক্তি ও সহযোদ্ধা জামায়াতে ইসলামীর অবস্থাও মোটেও ভাল নয়। একাত্তরের মানবতাবিরোধী, স্বাধীনতাবিরোধী দলটির প্রথম সারির অন্যতম অনেক নেতাই সর্বোচ্চ আদালত কর্তৃক দোষী সাব্যস্ত ও ফাঁসিতে দ-প্রাপ্ত এবং কারান্তরালে। সর্বোপরি যুদ্ধাপরাধের দায়ে দলটির নিবন্ধনও বাতিল হয়েছে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক। এরকম একটি পচা-গলা, দূষিত ও পূতিগন্ধময় জোটকে কি কারণে ও কোন্ স্বার্থে রাজনীতিতে পুনর্বাসনের দায়িত্ব নিয়ে মাঠে নামলেন ড. কামাল হোসেন, তা বোধগম্য নয় কিছুতেই। সে অবস্থায় এরকম একটি স্পর্শকাতর বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে ড. কামাল হোসেন খুব সহজেই উত্তেজিত ও অগ্নিশর্মা হবেন, তা বলাই বাহুল্য। ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসোধে ড. কামাল হোসেনের সেই চেহারাই প্রস্ফুটিত ও প্রকট হয়েছে। শহীদ বেদিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে এক প্রতিক্রিয়ায় ড. কামাল হোসেন বলেন, স্বাধীনতার স্বপ্ন বাস্তবায়নের বিরুদ্ধে যারা কাজ করছে, লোভ-লালসা নিয়ে লুটপাট করেছে, তাদের হাত থেকে দেশকে আমরা মুক্ত করবই। প্রশ্নের পর পাল্টা প্রশ্ন আসে। উত্তরের দিকে প্রত্যুত্তর। সঙ্গত কারণেই সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, জামায়াতে ইসলামী স্বাধীনতাবিরোধী দল। জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন। এরপরও তারা ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে নির্বাচন করছে। এবংবিধ প্রশ্নের উত্তরে রীতিমতো উত্তেজিত হয়ে ওঠেন ড. কামাল হোসেন। প্রত্যুত্তরে বলেন, কত পয়সা পেয়েছ এই প্রশ্নগুলো করতে? কার কাছ থেকে পয়সা পেয়েছ। তোমার নাম কি? জেনে রাখব তোমাকে চিনে রাখব! ক্ষমতা না পেতেই এহেন হুমকি-ধমকিতে রীতিমতো হতভম্ব সাংবাদিক সমাজ ও পুরো জাতি। লক্ষ্য করার বিষয় হলো, ড. হোসেন সাংবাদিকদের নীতিনৈতিকতা, সততা তথা ইন্টিগ্রিটি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, যা তিনি পারেন না কোন অবস্থাতেই। এখন যদি দেশ ও জাতির পক্ষ থেকে পাল্টা প্রশ্ন ওঠে, স্বাধীনতাবিরোধী-মানবাধিকারবিরোধী জামায়াতে ইসলামী ও বিএনপিকে নির্বাচনের মাধ্যমে পুনর্বাসনের জন্য তিনি কোন্ পক্ষ থেকে কত টাকা নিয়েছেন, তাহলে? বুঝহ সুজন, যে জান সন্ধান। স্বভাবতই ড. কামাল হোসেনের এহেন অশালীন ও অরুচিকর কথা ও আচরণে সাংবাদিক সমাজসহ দেশের জনমনে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। তার বক্তব্য স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মত প্রকাশের সাংবিধানিক অধিকারের পরিপন্থী; যা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ ও বাংলাদেশের আইনে ফৌজদারি অপরাধ। এ নিয়ে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানায় একটি অভিযোগও দায়ের করা হয়েছে। ফুঁসে উঠেছেন সাংবাদিক সমাজও। অবশ্য ড. কামাল হোসেন এর জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তবু দাবি উঠেছে, ঐক্যফ্রন্ট নেতা ড. কামাল হোসেনকে জাতির সামনে কৃত অপরাধের জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে। এরপরও যে প্রশ্ন অনিবার্য থেকে যায়, তা হলো, আগামীতে কামাল হোসেনরা ক্ষমতায় গেলে দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র ও বাকস্বাধীনতা নিরাপদ থাকবে তো!
×