ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মুক্তিযুদ্ধের পথ ধরে দৃপ্তপ্রত্যয়ে হাজারো তরুণ

প্রকাশিত: ০৫:০২, ১৭ ডিসেম্বর ২০১৮

  মুক্তিযুদ্ধের পথ ধরে দৃপ্তপ্রত্যয়ে হাজারো তরুণ

সমুদ্র হক ॥ ওরা প্রজন্মের দীপ্ত তারুণ্য। চেতনায় মুক্তিযুদ্ধ। চোখেমুখে আগামীর স্বপ্ন। মুক্তিযুদ্ধের পথ ধরে ওরা এগিয়ে চলেছে। পথ দেখিয়ে দিয়েছে ওদের পূর্বসূরীরা। এবারের বিজয় দিবসে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গেই বগুড়ায় দেখা গেল প্রজন্মের উত্তরাধিকারীদের। পতাকা হাতে ফুলের মালা নিয়ে ওরা রাজপথে। সঙ্গে যোগ দিয়েছে প্রজন্মের হাজারও তরুণ। হৃদয় দৃপ্ত প্রত্যয় ওদের। বগুড়া সরকারী আজিজুল হক কলেজের বাংলা বিভাগের কয়েক তরুণের ভাবনায় আসে বিজয় দিবসে তারা গায়ে কাদামাটি মেখে মুক্তিযোদ্ধার ভাস্কর্য সাজবে। বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেয়। অনুমতি চায় বাংলা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক জোহরা ওয়াহিদা রহমানের কাছে। সহযোগিতা দিতে এগিয়ে আসেন বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. ত্বাইফ মামুন। সিদ্ধান্ত হয় সকালে সাইকেলভ্যানে চড়ে সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে ওরা প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করবে। তারপর শহীদ মিনারে গিয়ে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করবে। বিভাগের চতুর্থ বর্ষের একজন ও মাস্টার্সের চার শিক্ষার্থী ভোরে শরীরে কাদামাটি মাখে। এরপর মুক্তিযোদ্ধার ভাস্কর্য সেজে সাইকেল ভ্যানে ওঠে। কাজটি মোটেও সহজ নয়। শীতের সকালে এমন সেজে দীর্ঘক্ষণ গাড়িতে মূর্তির (স্ট্যাচু) মতো ঠায় দাঁড়িয়ে থেকে পথ চলা। তাদের পেছনে এগিয়ে যেতে থাকে কলেজের শিক্ষার্থীরা। ড. ত্বাইফ মামুন বলেন, এ কনসেপ্টে প্রজন্মের তরুণরা প্রতীকী অর্থে যা বুঝিয়েছে তা হলো : মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ করে প্রাণ দিয়ে হানাদার পাকি সেনাবাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসর রাজকারদের পরাজিত করেছে। এ দেশ থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে হানাদার পাকি সেনাবাহিনীকে। বিশ্ব পেয়েছে একটি স্বাধীন দেশের মানচিত্র। মুক্তিযোদ্ধাদের এই ঋণ শোধ করতে হবে প্রজন্মকে। গড়তে হবে একটি উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। পূর্বসূরীদের দেখানো পথেই এগোয় একবিংশ শতকের তরুণরা। বিজয় দিবসে সরকারী আজিজুল হক কলেজের বাংলা বিভাগের এই আয়োজন সর্বত্র প্রশংসিত হয়েছে। সকালে যারা শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের জন্য গেছে তাদের চেখে এই দৃশ্য নতুন ভাবনা এনে দেয়। মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ক’জন সদস্য আপ্লুত হয়ে বলেন ‘প্রজন্মের এমন চেতনা দেখে আমরা আর আশাহত হই না। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস এই তরুণরাই এ দেশ গড়বে। আমরা বিদায় নেব। স্বস্তি পাব এই ভেবে আমরা প্রজন্মের হাতে যে দেশ তুলে দিয়েছি তা তারা আমাদের স্বপ্নের মতো করেই গড়ছে। মুক্তিযোদ্ধা সায়ীদ বললেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করে আমরা একটি স্বাধীন দেশ পেয়েছি। স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের ৪৭ বছর পর আমরা বলতে পারি বঙ্গবন্ধু যে দেশ চেয়েছিলেন আমাদের প্রজন্ম সেই দেশই গড়ছে। মুক্তিযোদ্ধাদের রক্ত ঋণ শোধ করে দেবে প্রজন্মের তরুণ-তরুণীরা। মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান সহকারী অধ্যাপক ড. ত্বাইফ মামুন বলেন, প্রতিবছর নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি হওয়ার পর তার বিভাগের প্রথম ক্লাস শুরুর আগে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা জাগিয়ে দেয়ার পাঠ দেন তিনি। এবারের বিজয় দিবসে তার বিভাগের শিক্ষার্থীদের এই আয়োজনে তিনি তৃপ্ত ও মুগ্ধ। আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বললেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা জাগাতে যে পাঠ তিনি প্রজন্মকে দিচ্ছেন তা কখনও বৃথা যাবে না। এটাই আমার পরমানন্দ।
×