ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নোয়াখালীতে মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্র্ধনা অনুষ্ঠানে ওবায়দুল কাদের

একাত্তরের পরাজিত শক্তির নেতৃত্ব দিচ্ছে বিএনপি

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ১৭ ডিসেম্বর ২০১৮

 একাত্তরের পরাজিত শক্তির নেতৃত্ব দিচ্ছে বিএনপি

নিজস্ব সংবাদদাতা, নোয়াখালী, ১৬ ডিসেম্বর ॥ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, একাত্তরে আমরা যাদের পরাজিত করেছি, সেই পরাজিত শক্তির নেতৃত্ব দিচ্ছে বিএনপি। বিএনপির মুক্তিযুদ্ধের মুখোশ খসে পড়েছে। তারা যতই মুক্তিযুদ্ধের কথা বলুক, যতই গণতন্ত্রের কথা বলুক, আসলে তারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তিকে পৃষ্ঠপোষকতা করছে আর জঙ্গীবাদকে মদদ দিচ্ছে। তিনি রবিবার বেলা ১১টায় নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বসুরহাট এএইচসি সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বিজয় দিবস উপলক্ষে উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ফয়সাল আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ওবায়দুল কাদের বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বিএনপি সমর্থন করেনি। তারা বিরোধিতা করেছে। কাজেই দেশ আজ স্পষ্টই দুই ধারায় বিভক্ত। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশে বলেন, আপনাদের ধারার, আপনাদের বিশ্বাসের ঠিকানা, আস্থার ঠিকানা, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন অসাম্প্রদায়িক শক্তি, মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি ও স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তির এ নির্বাচনে বিজয়ের কোন বিকল্প নেই। বিজয় দিবসে আপনাদের শপথ নিতে হবে, ৩০ ডিসেম্বর সাম্প্রদায়িক অশুভ শক্তিকে আবারও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পরাজিত করবেন এবং বিজয়ী হবেন। এ অশুভ শক্তিকে প্রতিরোধ করতে আপনারা ঐক্যবদ্ধ হন। ওবায়দুল কাদের বলেন, সারাদেশে নৌকার পক্ষে গণজোয়ার বইছে। আমি সারাদেশ সফর করেছি। আমার নিজের এলাকায়ও আমি সফর করেছি। নৌকার পক্ষে এমন অবিস্মরণীয় গণজোয়ার আমি আর কখনও দেখিনি। বিএনপি এখন বুঝতে পেরেছে তারা নির্বাচনে হেরে যাবে। হেরে যাওয়ার ভয়ে আজ তারা নির্বাচন বানচালের পাঁয়তারা করছে। ওবায়দুল কাদের তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের সমালোচনা করে বলেন, এখানে বসে বসে চক্রান্ত করছেন, নদীর ওপার থেকে সন্ত্রাসীদের নিয়ে বাড়িতে গোপন বৈঠক করছেন। অস্ত্র দিয়ে ভোট ডাকাতি করবেন? সেই দিন চলে গেছে। আপনার দিন শেষ। তিনি (কাদের) বলেন, আপনি তো সেই ব্যক্তি যিনি নির্বাচনের দিন ১১টার আগে ভোট শেষ করে ফেলেছেন। এই হলো আপনার ছদ্মবেশী গণতন্ত্র। গণতন্ত্রের জন্য আপনি (মওদুদ) মায়া কান্না কাঁদেন। বাস্তবে আপনার অন্তরে গণতন্ত্র নেই। ওবায়দুল কাদের অনুষ্ঠানে উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষের উদ্দেশে বলেন, মওদুদ আহমেদ ২২ বছর ক্ষমতায় ছিল। আপনারাই বলুন, এই কোম্পানীগঞ্জ ও কবিরহাটে একটা কাজ তিনি করেছেন? যে কাজের জন্য তিনি ভোট চাইতে পারেন। এ সময় ওবায়দুল কাদের তাঁর ক্ষমতার আমলে হওয়া উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে বলেন, আজকে আমার কাজ গ্রামে গ্রামে দৃশ্যমান। মাকড়সার জালের মতো রাস্তা। কোন কোন জায়গায় বাড়ির দরজায়ও রাস্তা করা হয়েছে। ঘরে ঘরে বিদ্যুত দেয়া হয়েছে। যা আগে ছিল না। বিএনপির আমলে ১৬ ঘণ্টা লোডশেডিং থাকত। এখন সেই লোডশেডিং আর নেই। ওবায়দুল কাদের বলেন, শেখ হাসিনা বাকস্বাধীনতা এনে দিয়েছেন, আগে একটি টেলিভিশন চ্যানেল ছিল। এখন ৩৪টা টেলিভিশন চ্যানেল। ইন্টারনেট সুবিধা এনে দিয়েছেন, বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপান্তরিত করেছেন। বয়স্ক ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা ও বিধবা ভাতাসহ বিভিন্ন ভাতার ব্যবস্থা করেছেন। নারীর ক্ষমতায়ন করেছেন। তরুণদের জন্য ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছেন। বিএনপি কি এসব সুবিধা দিতে পেরেছে? এদেশকে আজ নতুন করে সাজিয়েছে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। ওবায়দুল কাদের আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার একটি উদ্ধৃতি তুলে ধরে বলেন, বারাক ওবামা তাঁর জন্মস্থান কেনিয়াতে গিয়ে বলেছেন, বাংলাদেশে গিয়ে শেখ হাসিনার কাছে থেকে শিখে আসো, উন্নয়ন কি এবং কিভাবে করতে হয়। কাদের বলেন, পাকিস্তানের বৃদ্ধিজীবীরা বলেন, আমাদের বাংলাদেশ বানিয়ে দাও। তারা বলেন, আমাদের একজন শেখ হাসিনা দাও। আজকে সব সূচকে পাকিস্তান আমাদের পেছনে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভারত, নেপাল ও শ্রীলঙ্কাও আমাদের পেছনে পড়ে গেছে। যে কারণে বাংলাদেশ ও শেখ হাসিনা এত সম্মান পাচ্ছেন। সুতরাং বাংলাদেশকে উন্নয়নের ধারায় রাখতে চাইলে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখতে হবে। নৌকায় ভোট দিতে হবে। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদল, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ সাহাব উদ্দিন, ভাইস চেয়ারম্যান আজম পাশা চৌধুরী রুমেল, উপজেলা আ’লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা খিজির হায়াত খান, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আজিজুল হক, উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক নূর নবী চৌধুরী ও স্বাধীনতা ব্যাংকার্স পরিষদের সদস্য ফখরুল ইসলাম রাহাত প্রমুখ। নিজস্ব সংবাদদাতা ফেনী থেকে জানান, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ’৭১ এর পরাজিত সম্প্রদায়িক অপশক্তির সঙ্গে ছদ্মবেশী মুক্তিযোদ্ধা ও ছদ্মবেশী কিছু গণতন্ত্রী বিএনপির নেতৃত্বে এক্যবদ্ধ হয়েছে, এ অশুভ অপশক্তিকে প্রতিহত করতে হবে এবং এদের পরাজিত করে বিজয়ী হতে হবে। রবিবার ভোরে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে ফেনীর শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পমাল্য অর্পণ শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। মন্ত্রী বলেন, আমরা সুশাসনের পথে সকল চ্যালেঞ্জকে অতিক্রম করব, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে পরবর্তী ৫ বছরের জন্য জনগণের কাছে এটা আমাদের ওয়াদা। আমরা মঙ্গাকে যেমন যেভাবে জাদুঘরে পাঠিয়েছি সেভাবে দারিদ্র বেকারত্বকে সেভাবে জাদুঘরে পাঠাব সে লক্ষ্যে ২০২৪ সালের মধ্যে টার্গেট পূরণ করব। নির্বাচনকে সামনে রেখে নৌকার গণজোয়ার দেখে বিএনপি নিশ্চিত পরাজয় জেনে অপশক্তির সঙ্গে হাত মিলিয়েছে তাদের নীল নক্সা হিসেবে উসকানিমূলক ঘটনা ঘটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা অবনতি করছে। নিজেরা নিজেদের ওপর হামলা করে সরকারের ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা চালাচ্ছে।
×