ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

জয় বাংলা স্লোগানে নৌকার ব্যাজ পরে বিএনপি জামায়াত ক্যাডারের হামলা

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ১৭ ডিসেম্বর ২০১৮

 জয় বাংলা স্লোগানে নৌকার ব্যাজ পরে বিএনপি জামায়াত ক্যাডারের হামলা

শংকর কুমার দে ॥ পূর্বপরিকল্পিত ছক অনুযায়ী ‘জয় বাংলা স্লোগান’ দিয়ে ‘নৌকার ব্যাজ’ পরে নির্বাচনী প্রচারে একের পর এক হামলা চালাচ্ছে বিএনপি-জামায়াতের কর্মী-ক্যাডাররা। নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রের বিএনপি-জামায়াতের এটা একটা কৌশল, যা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর দায় চাপানোর জন্য নীলনক্সা অনুযায়ী এই ধরনের হামলা ঘটিয়ে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে তারা। নির্বাচনী প্রচারের প্রায় এক সপ্তাহের মধ্যে জাতীয় সংসদের নির্বাচনী এলাকার অন্তত অর্ধশত এলাকায় এই ধরনের হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে বলে গোয়েন্দা সংস্থার দাবি। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্র জানান, যেসব এলাকায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে তার প্রতিটি ঘটনায় মামলা, জিডি করা হয়েছে, যা এখন তদন্তনাধীন। তদন্তে দেখা গেছে, বিএনপি-জামায়াতের যেসব ক্যাডারের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা, ওয়ারেন্ট আছে তারা গর্তের ভেতর থেকে বের হয়ে এসে নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিয়ে এই ধরনের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটাচ্ছে। বিএনপি-জামায়াতের ক্যাডাররা নিজেরা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ওপর দায় চাপানোর জন্য হামলার ঘটনার সময়ে স্লোগান দিচ্ছে ‘জয় বাংলা’। হামলার আগে পরে তারা পরছেন ‘নৌকার ব্যাজ’। নির্বাচনের দিন ভোট কেন্দ্রের এলাকায় ধানের শীষের প্রতীকের কর্মী-ক্যাডাররা নৌকার ব্যাজ পরে ভোট প্রদানের উদ্দেশ্য নিয়ে কেন্দ্রে গিয়ে সহিংস সংঘর্ষের ঘটনা ঘটাতে পারে বলে আশঙ্কা করছে গোয়েন্দা সংস্থা। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে জানা গেছে, কথা নেই, বার্তা নেই, বিএনপি-জামায়াতের প্রার্থীরা নির্বাচনের প্রচারে নামলেই ভাংচুর, ককটেল বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো, গুলিবর্ষণ, সংঘর্ষ ঘটানো হচ্ছে, যা অস্বাভাবিক। ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে ২০ দলীয় জোট থেকে বিএনপি-জামায়াত যেসব ধানের শীষের মার্কায় প্রার্থী দিয়েছেন তার বেশির ভাগ প্রার্থীর বিরুদ্ধেই মামলা, ওয়ারেন্টসহ নানা ধরনের অপরাধের মামলা তদন্তনাধীন। প্রায় প্রতিদিনই নির্বাচনী প্রচারের সময়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় প্রতিপক্ষের ওপর হামলা, লিফলেট বিতরণে বাধা, মাইক ভাংচুর, ককটেল বিস্ফোরণ ও গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মামলা রয়েছে, ওয়ারেন্ট আছে এমন শতাধিক জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনী প্রচারে প্রথম দিনেই বিএনপি-জামায়াতের ক্যাডারদের হাতে নোয়াখালী ও ফরিদপুরে খুন হয়েছেন আওয়ামী লীগের দুই কর্মী এবং আহত হয়েছে প্রায় অর্ধশত কর্মী। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার হওয়া সত্ত্বেও তাদের কর্মীদের খুন করার পরও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে যারা খুন করেছে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়নি। পুলিশের তদন্তে দেখা গেছে, শহীদ মিনারের স্মৃতি সৌধের সামনে ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেনের গাড়িতে যে হামলা, ভাংচুরের ঘটনা জানানো হয়েছে তা সত্য নয়। ড. কামাল হোসেনের গাড়িতে ভাংচুরের কোন ঘটনাই ঘটেনি, অথচ তার গাড়িতে ভাংচুর হয়েছে বলে প্রচার করে আতঙ্ক, উদ্বেগ, উৎকণ্ঠার সৃষ্টি করা হয়েছে। নির্বাচনী প্রচারে হামলার ঘটনা ঘটিয়ে বলা হচ্ছে, নির্বাচন হবে কি না সন্দেহ, আদৌ নির্বাচন হবে কি? এসব ঘটনা রটিয়ে দিয়ে জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়ার ঘটনাগুলো নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রের অংশ বলে মনে করছেন তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তারা। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, নেয়াখালীতে এ্যাডভোকেট মাহবুব উদ্দীনের সমর্থক, কর্মী-ক্যাডাররা উস্কানি দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ কর্মীদেরকে, যাতে তারা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। বিএনপি-জামায়েতের কর্মী-ক্যাডাররা যখন আওয়ামী লীগরে কর্মী-সমর্থকদের ওপর পায়ে পাড়া দিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে তখন কর্তব্যরত পুলিশ তাদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন। কর্তব্যরত পুলিশের ওপর হামলা হলে তারা ছড়া গুলি করতে বাধ্য হয়, যার ফলে এ্যাডভোকেট মাহাবুব উদ্দীনসহ তার দুই কর্মী গুলিবিদ্ধ হন। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি-জামায়াতের যেসব দুর্বল প্রার্থী আছেন, নির্বাচনে জয়ের কোন আশাই নেই, এমন প্রার্থীর এলাকায়ই বেশি সহিংস সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। বিএনপি-জামায়াতের প্রার্থীদের কর্মী-ক্যাডাররা নিজেরাই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটিয়ে অপরাধ আড়াল করতে আওয়ামী লীগের স্লোগান, মার্কা ব্যবহার করছে এমন অনেক তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দা সংস্থা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যে কোন ধরনের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি ঘটানোর চেষ্টা করা হলে তা মোকাবেলায় পরিকল্পনা গ্রহণ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচারে মাঠে নামার পর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সহিংস সংঘর্ষ ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছে গোয়েন্দা সংস্থা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সারাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি ঘটানোর চেষ্টা করা হচ্ছে পরিকল্পিতভাবে। পুলিশ সদর দফতরের একজন কর্মকর্তা বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সব ধরনের বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে প্রস্তুত রয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। নির্বাচন নিয়ে কেউ যদি কোন ধরনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায়, তবে সেটি কঠোর হস্তে দমন করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সারাদেশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের অংশ হিসেবে বিভিন্ন পয়েন্টে র‌্যাব ও পুলিশের তল্লাশি এবং টহল ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে স্থাপন করা হয়েছে নিরাপত্তা চৌকি। এছাড়া পোশাকে ও সাদা পোশাকে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও নিরাপত্তা নিশ্চিতে মাঠে কাজ করছে বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই পুলিশ কর্মকর্তা। গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসবে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যক্রম তত বাড়াতে হবে এমন পরিস্থিতি বিবেচনা করেই কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে। কোনভাবেই ২০১৪ সালের পুনরাবৃত্তির মতো বিশ্বের কাছে আমরা আর পেট্রোল বোমার দেশ হিসেবে চিহ্নিত করতে দেয়া হবে না। পুলিশ, র‌্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থা মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু করে দিয়েছে। নির্বাচনের প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারে নিরাপত্তা দেয়ার জন্য আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কঠোর হস্তে দমনের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। সহিংসতা ঘটিয়ে নির্বাচনের পরিবেশ বিনষ্টকারী যে দলের লোকই হোক না কেন তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে বলে গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তার দাবি।
×