ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নতুন সরকার উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখবে : অর্থমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০২:৩৪, ১৭ ডিসেম্বর ২০১৮

নতুন সরকার উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখবে : অর্থমন্ত্রী

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ নির্বাচনের পর নতুন সরকার দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেন, দারিদ্র্য নিরসন এবং একটি শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ গড়তে হলে আওয়ামীলীগকে ফের সরকার গঠনের সুযোগ দিতে হবে। দেশের মানুষ আওয়ামীলীগের সঙ্গেই আছে এবং আশা করছি এই দলটি ফের ক্ষমতায় আসবে। সোমবার সচিবালয়ে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপ কালে অর্থমন্ত্রী এসব কথা বলেন। মুহিত বলেন, আর্থিক খাতে সুশাসনের অভাব না থাকলেও খেলাপি ঋণ ব্যাংকিং খাতের সবচেয়ে বড় সমস্যা। এই ঋণ আদায়ের বিষয়টির সমাধান করাটা একটু কঠিন কাজ। তবে ১০ শতাংশের নিচে রাখাটা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। এজন্য খেলাপি ঋণ কীভাবে আদায় করা যায় এ বিষয়ে একটা প্রতিবেদন তৈরি করা হচ্ছে। সেই প্রতিবেদনে আমার নিজস্ব মতামত তুলে ধরেছি। এই প্রতিবেদনটি নতুন সরকারের জন্য রেখে যাওয়া হবে। তিনি বলেন, ঋণ আদায়ে সমস্যা কবলিত ব্যাংকগুলোকে একীভূত করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। কোনভাবেই ঋণ যাতে ১০ শতাংশের বেশি না হয়, সেজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার পরামর্শ দেয়া হবে। অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশের আর্থিক খাত বিশেষ করে ব্যাংকিংখাতের শৃঙ্খলা টেকসই করতে ব্যাংকিং কমিশন গঠনের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। আওয়ামীলীগ সরকার গঠন করার সুযোগ পেলে প্রথমেই এ ধরনের একটি কমিশন যেন গঠন করে সেজন্য আমার অনুরোধ থাকবে। তিনি বলেন, কমিশন কি রকম হবে এবং এই কমিশন কি ধরনের কাজ করবে সে বিষয়েও একটি গাইড লাইন রেখে যাওয়া হচ্ছে। অর্থমন্ত্রী বলেন, গত ১০ বছরে আমার অপ্রাপ্তি বলে তেমন কিছু নেই। কারণ প্রাপ্তির খাত এত বড় যে সেটা চোখে পড়ে না। শুধু একটি ইচ্ছা ছিল জেলা বাজেট করে যাওয়ার। তবে এর জন্য একটি পথ তৈরি করে গেছি। পরবর্তী যে কোন সরকার জেলা বাজেট করতে চাইলে এটা অনুসরণ করে করতে পারবে। এই দশ বছর দেশের রাজনৈতিক অবস্থা ভাল থাকায় দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ ভাল হয়েছে। ব্যবসায়ীরা আর অরাজকতা চায় না। এখন এমন কিছু ঘটলে ব্যবসায়ীরাই তার বিরুদ্ধে প্রথম রুখে দাঁড়াবে। ব্যাংকিং খাত প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, একসময় ব্যাংকিং খাত পুরোপুরি সরকারী ছিল। কিন্তু এখন ব্যাংকিং খাত ব্যক্তিমালিকানায় অনেক প্রসারিত। ব্যাংকিং খাতের সিংহভাগ ব্যবসা ব্যক্তিমালিকানা খাতে হচ্ছে। এক সময় ছিল সোনালী ব্যাংক সবচেয়ে বড়, এখন আর সেটা নেই। এ ব্যাংকটি দুর্বল হয়ে গেছে। আমাদের এখানে ব্যাংকের সংখ্যা অনেক বেশি। বর্তমানে দেশে তিনটি নতুন ব্যাংক সহ মোট ৬০টি ব্যাংক রয়েছে। এজন্য আগামীতে নতুন কোন ব্যাংক অনুমোদন দেয়া হবে না। এজন্য একটি নির্দেশনা দিয়ে যাব। তিনি বলেন, বিশেষায়িত ৬টি ব্যাংকের মধ্যে সোনালী ব্যাংক রেখে বাকিগুলোকে বেসরকারি খাতে দেয়ার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু আমাদের প্রাইভেট সেক্টরের ব্যাংকের অবস্থা ভালো না হওয়ায় সেটা করা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, আগামী ৫ বছরের জন্য একটি প্রোগ্রাম করেছি। সেখানে তাদেরকে একটি লক্ষ্য মাত্রা দিয়ে দেয়া হবে। যারা এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারবে না তাদের অবসায়ন বা একীভূতকরণ করা হবে। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকার দেশের আর্থিক খাতের বড় বড় প্রতিষ্ঠান বা গ্রুপগুলোকে নিয়ন্ত্রণে আনতে অনেক দিন থেকে চেষ্টা করছে। এজন্য কিছু প্রস্তাবও থাকবে আমার প্রতিবেদনে। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে চুরি যাওয়া অর্থ ফেরত আনতে ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনের (আরসিবিসি) ও যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক এর বিরুদ্ধে মামলা করা হবে। এ মামলার জন্য আগামী জানুয়ারি পর্যন্ত সময় আছে। এখন বাংলাদেশ ব্যাংক করতে চাচ্ছে। কারণ দ্রুত সময় কমে যাচ্ছে। আমাদের আইনজীবীরা এ বিষয় নিয়ে আলোচনা করছে। তিনি বলেন, যে সরকারই আসুক দারিদ্র্য বিমোচনের কাজ বন্ধ হবে না। কারণ বিগত দশ বছর ধরে দারিদ্র্য নির্মূলে কাজ করছে সরকার। বর্তমানে দেশে তিন কোটি দারিদ্র্য রয়েছে, যা ক্রমানয়ে কমছে। রাজনীতিতে অবসরে যাওয়ার ব্যবস্থা রাখার পরামর্শ দিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশের সব খাতে অবসর আছে। তাই রাজনীতিতেও অবসরে যাওয়া সুযোগ থাকতে হবে। এজন্য তিনি অবসরে যাচ্ছেন। তবে দেশের রাজনীতিবিদরা অবসরের বিষয়টি বুঝতে চান না। রাজনীতিবিদদের বোঝা উচিত যে, অবসর একটা বিষয় আছে। এখনও তার চেয়ে অনেক বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি রাজনীতিতে রয়েছেন এবং থাকতে চান। সাবেক দুই রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী তার চেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ। ওনাদের রাজনীতিতে থাকা না থাকা তাদের (এরশাদ, বি. চৌধুরী) ইচ্ছা। আমার আর ইচ্ছো টিচ্ছে নেই। ৮৫ বছর বয়স হয়েছে। অবসরের জন্য যথেষ্ট। তবে আগামীতে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে সেই সরকারে থাকবেন কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সে সম্ভাবনা কম। তবে আওয়ামী লীগে থাকছেন। তিনি বলেন, এ জন্যই তো অবসরে যাচ্ছি। সরকারী কাজে দীর্ঘদিন কাটিয়েছি। এত দীর্ঘদিন কাজ করা মানুষের সংখ্যা খুবই কম।
×