ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বাচনী প্রচারে হামলা সম্পর্কে মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে প্রধানমন্ত্রী

আওয়ামী লীগের দুই কর্মী নিহত হলেও আমি ধৈর্য ধরতে বলেছি

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৮

আওয়ামী লীগের দুই কর্মী নিহত হলেও আমি ধৈর্য ধরতে বলেছি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে এক সৌজন্য সাক্ষাতকালে বাংলাদেশে নবনিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত রবার্ট আর্ল মিলার বলেছেন, আগামী ৩০ ডিসেম্বর বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হবে বলে তার দেশ প্রত্যাশা করেছে। সোমবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার সরকারী বাসভবন গণভবনে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে এক সৌজন্য সাক্ষাত হয়েছে। খবর বাসসর। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম রাষ্ট্রদূতের উদ্ধৃতি দিয়ে জানান, ‘আশা করছি, আগামী ৩০ ডিসেম্বর বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও শান্তিপূর্ণ হবে।’ বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব সাংবাদিকদের একথা জানান। মার্কিন রাষ্ট্রদূত প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন, বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের পর্যবেক্ষণের জন্য তার দেশ ৩২ পর্যবেক্ষক পাঠাবে। তিনি জানান, ‘মার্কিন দূতাবাসের ১১টা দল নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবে।’ প্রেস সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী এ সময় দেশে গণতন্ত্র পুনর্প্রতিষ্ঠায় তার দলের সংগ্রামের প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একমাত্র আওয়ামী লীগই ২০০১ সালের নির্বাচনের পরে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিল। তিনি বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনের পূর্বে তার সরকার তখনকার বিরোধী দলকে নির্বাচনকালীন সরকারের কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণেরও আমন্ত্রণ জানিয়েছিল কিন্তু তারা তা গ্রহণ না করে দেশে সন্ত্রাস, নৈরাজ্য এবং মানুষ হত্যা করেছে। তাদের নির্বাচনী প্রচারে হামলা হচ্ছে বলে বিরোধী রাজনৈতিক দলের অভিযোগ সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান নির্বাচনকালীন সন্ত্রাসের শিকার হয়ে তার দলেরও দুইজন কর্মী প্রাণ হারিয়েছে। ‘এ বিষয়ে আমি আমার দলের নেতাকর্মীদের ধৈর্য ধারণের আহ্বান জানিয়েছি,’ বলেন তিনি। রোহিঙ্গা সদস্যার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত বলেন, এসব রোহিঙ্গাদের জন্য মিয়ানমারে এমন একটি পরিবেশ সৃষ্টি করা উচিত যাতে করে তারা নিরাপদে তাদের মাতৃভূমিতে ফেরত যেতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের প্রতি তাদের সমর্থন অব্যাহত রাখবে, যোগ করেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশের মধ্যে বিদ্যমান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে ‘শক্তিশালী’ আখ্যায়িত করে রাষ্ট্রদূত মিলার বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র দুই পক্ষের মধ্যে বিদ্যমান সহযোগিতাকে জ্বালানি এবং শিক্ষা খাতে আরও বৃদ্ধি করতে চায়।’ প্রধানমন্ত্রী এ সময় ঢাকা-নিউইয়র্ক রুটে বাংলাদেশের বিমানের সরাসরি ফ্লাইট পুনরায় চালুর জন্য রাষ্ট্রদূতের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন। শিক্ষা খাতের উন্নয়নে তার সরকারের পদক্ষেপসমূহের উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সরকার প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক সরবরাহ করছে। দেশের অর্থনৈতিব উন্নয়নের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘যদি আমাদের সরকার ভোটে জয়লাভ করে পুনরায় ক্ষমতায় আসতে পারে তাহলে আমাদের লক্ষ্য রয়েছে জিডিপি প্রবৃদ্ধিকে আগামী অর্থবছরে ৮ শতাংশে উন্নীত করার।’ প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মোঃ নজিবুর রহমান, সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সাজ্জাদুল হাসান এ সময় উপস্থিত ছিলেন। বিডিনিউজের খবর : প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ডাচ রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাত ॥ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ‘বিস্ময়কর’ বলেছেন ঢাকায় নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত হেন্ড্রিকাস জি জে (হ্যারি) ভারউইজ। সোমবার সকালে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে তিনি এই মন্তব্য করেন বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম। সৌজন্য সাক্ষাতে দুই দেশের সম্পর্ক আরও গতিশীল হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন রাষ্ট্রদূত এবং পারস্পরিক বন্ধুত্বের মধ্যে ‘শক্ত অঙ্গীকার’ থাকার কথাও বলেন। বাংলাদেশ ‘ডেল্টা পরিকল্পনা ২১০০’ নামে দীর্ঘমেয়াদী একটি উন্নয়ন পরিকল্পনা করেছে, যার মাধ্যমে বন্যা মোকাবেলা, নদী ভাঙ্গন রোধ ও নদী শাসন, নদী ব্যবস্থাপনা উন্নত করা, শহর ও গ্রামের পানি সরবরাহ এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নত করার কৌশল নির্ধারণ করা হয়েছে। ডেল্টা পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সহযোগিতা করছে নেদারল্যান্ডস। বাংলাদেশের এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে নেদারল্যান্ডসের সহায়তা অব্যাহত রাখার আশ্বাসে দেন নতুন রাষ্ট্রদূত। বাংলাদেশে কৃষি খাতে আরও উন্নয়ন করার সুযোগ রয়েছে বলেও মন্তব্য করেন হ্যারি। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে লেখা নেদারল্যান্ডসের রানীর একটি চিঠিও নতুন রাষ্ট্রদূত হস্তান্তর করেন বলে জানান প্রেস সচিব। রাষ্ট্রদূতকে বাংলাদেশে স্বাগত জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধে দেশটির সহায়তার কথা স্মরণ করেন। পানি ব্যবস্থাপনা ও নদী ভাঙ্গন রোধে ডাচদের সহায়তাও প্রত্যাশা করেন শেখ হাসিনা। সারাদেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার কথা উল্লেখ করে সেখানে ডাচদের বিনিয়োগেরও আহ্বান জানান তিনি। সৌজন্য সাক্ষাতে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান, কার্যালয় সচিব সাজ্জাদুল হাসান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
×