ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মিরপুরে র‌্যাবের অভিযানে ১৫ কোটি টাকার চোরাই পণ্য জব্দ

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৮

মিরপুরে র‌্যাবের অভিযানে ১৫ কোটি টাকার চোরাই পণ্য জব্দ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একটি শাড়ির দাম ৫ লাখ টাকা। লেহেঙ্গার দামও তিন লাখের নিচে নয়। আর স্যুট? সেটা আরও দামের। লাখ টাকার নিচে কোন কথা নেই। এমন এক্সক্লুসিভ সব নামী-দামী কাপড়চোপড় সবই সাজানো ডিসপ্লেতে। আসলে এসবই চোরাই মাল। প্রকাশ্যে এ ধরনের চোরাচালানি সামগ্রী বিক্রি হচ্ছিল মিরপুরের এসএ ওয়ার্ল্ড নামের একটি শোরুমে। খবর পেয়ে সোমবার সেখানে হানা দেয় র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত ও শুল্ক গোয়েন্দারা। মালও যৎসামান্য নয়। ছয়টি বড় ট্রাক ভরে গেছে পণ্যে; যার বাজারমূল্য কম করে হলেও ১৫ কোটি টাকা। জব্দ করার পর পরই এগুলো নিয়ে যাওয়া হয় শুল্ক গোয়েন্দার নিজস্ব পণ্যাগারে। ভ্রাম্যমাণ আদালত এ ঘটনায় কাউকে শাস্তিও দেয়নি কিংবা শুল্ক গোয়েন্দারাও কাউকে আটক করেননি। এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, তবে কি এসএ ওয়ার্ল্ডের মালিক প্রভাবশালী বলেই তাকে রেহাই দেয়া হয়েছে? পাশের মার্কেটের এক ব্যবসায়ীর সংক্ষুব্ধ মন্তব্য ‘যদি কোন সাধারণ ব্যবসায়ীর দোকানে এমনটি হতো তাহলে, মাল জব্দের পাশাপাশি অন দ্য স্পট মালিক-কর্মচারীকে জেল-জরিমানা করা হতো। প্রভাবশালী আর সাধারণ ব্যবসায়ীর মাঝে তফাৎটা এখানেই। কেন জেল-জরিমানা করা হয়নি প্রশ্ন করা হলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম বলেন, এর বিচার তো এখানেই শেষ হয়ে যায়নি। মালিককে পাওয়া গেলেই নেয়া হবে আইনানুগ ব্যবস্থা। ঘটনাস্থল মিরপুরের ৬নং সেকশনের ক ব্লকের ১৬ নম্বর প্লট। এই বহুতল ভবনটির প্রতিতলায় গড়ে তোলা হয় বিশাল শোরুম এসএ ওয়ার্ল্ড। দীর্ঘদিন ধরেই এখানে চলে আসছিল রমরমা ব্যবসা। রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিত্তবানরা আসে এখানে শুধু দামী ব্র্যান্ডের সব শাড়ি, লেহেঙ্গা, ব্রা, পেন্ট্রি, শার্ট, স্যুট, কুর্তা ও শেরওয়ানি কিনতে। এসব পণ্য সচরাচর মেলে না। বেশিরভাগই ভারত থেকে চোরাইপথে আনা। সাধারণত এসব পণ্যের ব্যবসা চাঙ্গা থাকে ঈদ সামনে রেখে। কিন্তু নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম জানান, এ শোরুমটা সারা বছরই বেশ জমজমাট থাকে। ভবনটির একতলা থেকে ৮ তলা পর্যন্ত সাজানো বাহারি সব ব্র্যান্ডের আইটেমে। শুল্ক গোয়েন্দা অধিদফতরের মহাপরিচাক ড. সহিদুল ইসলাম বলেন, প্রতিষ্ঠানটির মালিক এসএ পরিবহন নামে কুরিয়ার সার্ভিস। এসব পণ্য চোরাইপথে আনা। র‌্যাবের তথ্য মতে, যৌথ অভিযান চালানোর সময় শুল্ক গোয়েন্দার পাশাপাশি ভ্যাট কাস্টমস ও অন্যান্য এজেন্সির লোকজন উপস্থিত ছিলেন। জব্দ মাল রাখা হবে ঢাকা দক্ষিণ ভ্যাটের গোডাউনে। এ বিষয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম বলেন, শোরুমটিতে চোরাচালানের অবৈধ পণ্য বিক্রি হতো অবাধে। প্রতিষ্ঠানের মালিকপক্ষ ভাবতেই পারেনি তাদের এখানে অভিযান চালানো হতে পারে। র‌্যাব দীর্ঘদিন ধরেই নজরদারি করে আসছিল। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার এসব পণ্যের বিপরীতে বৈধ কাগজপত্র আছে কিনা তা জানতে চাওয়া হয়। কিন্তু তারা এসব মালের কোন আমদানিপত্র দেখাতে পারেনি, কোন জবাবও দেয়নি। যে কারণে শুল্ক গোয়েন্দার সহায়তা নিয়ে আজ এ অভিযান চালানো হয়। শুল্ক গোয়েন্দার মহাপরিচালক ড. সহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, অভিযান শেষে জব্দ তালিকা তৈরির পর সব পণ্য যাচাই-বাছাই করে শুল্ক আইনে মামলা দায়েরের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।
×