ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

ডাঃ রাকিবুল ইসলাম লিটু

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তৈরিতে প্রতিবন্ধকতা

প্রকাশিত: ০৬:০৮, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৮

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তৈরিতে প্রতিবন্ধকতা

দেশে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তৈরি করতে গউ/ গঝ/গ.ঢ়যরষ/ উরঢ়ষড়সধ/ঋঈচঝ/গজঈচ বিভিন্ন ডিগ্রীর দ্বার উন্মোচিত আছে। চিকিৎসকরা গইইঝ পাস করে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অবতীর্ণ হয়ে অনেক পথ মাড়িয়ে, অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষার বিনিময়ে এই ডিগ্রী অর্জন করে থাকেন। যদিও তাদের সংখ্যা খুবই কম। অধিকাংশ চিকিৎসকই এই সমস্ত ডিগ্রী অর্জন করতে না পেরে শুধু গইইঝ ডিগ্রী নিয়ে চাকরির মাধ্যমে সারা জীবন গ্রামে-গঞ্জে কাটিয়ে সাধারণ জীবনযাপন করে থাকেন। উল্লিখিত পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিগ্রীর মধ্যে গউ/গঝ/গ.ঢ়যরষ/উরঢ়ষড়সধ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রদান করা হয়। এই ডিগ্রীসমূহ রোগ নির্ণয় তথা চিকিৎসার ক্ষেত্রে বাস্তবধর্মী হওয়ায় চিকিৎসক ও রোগীদের মাঝে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। চোখ মেলে তাকালেই দেখতে পারবেন, এসব ডিগ্রীধারী চিকিৎসকরা বর্তমানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সুনামের সঙ্গে রোগীদের অত্যাধুনিক চিকিৎসা দিয়ে বিশ্বখ্যাতি অর্জন করে চলেছেন। অপরদিকে প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান ইঈচঝ প্রদত্ত ঋঈচঝ ডিগ্রীধারীদের আমরা ছোট করে না দেখলেও রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার ক্ষেত্রে বাস্তবতা থেকে বেশ দূরে থাকায় পিছিয়ে পড়েছে। তাছাড়াও পরীক্ষা পদ্ধতি তাত্ত্বিকজ্ঞানে ভরপুর করায় নবাগত চিকিৎসকরা এই ডিগ্রী অর্জনে খুব একটা আগ্রহী হচ্ছেন না। ব্যবহারিক জ্ঞানের প্রতি জোর কম দেয়া এবং তাত্ত্বিক জ্ঞানের প্রতি বেশি জোর দেয়ার কারণে এই ডিগ্রী অর্জন করতে গিয়ে ফেল করা চিকিৎসকের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে এক জটিল আকার ধারণ করায় চিকিৎসকরা হতাশায় ভুগছেন। অনেকে মাঝপথ থেকে ডিগ্রী অর্জন না করে ছেড়ে দিতেও বাধ্য হচ্ছেন। যারা কষ্ট করে পাস করেন তারাও ব্যবহারিক জ্ঞানে কাঁচা থাকায় আবার গউ/গঝ কোর্সে ভর্তি হন। এভাবে তাদের জীবনের অধিকাংশ মূল্যবান সময়ই নষ্ট হয়ে যায়। ইঈচঝ কর্মকর্তারা তাদের দল ভারি করার জন্য অন্য ডিগ্রী যেমন- গউ/গঝ/গজঈঝ/ঋজঈঝ পাস করা অনেক চিকিৎসককে পরীক্ষা ছাড়াই অনারারি ঋঈচঝ ডিগ্রী দিয়ে চালাচ্ছেন। পাস করার পর এসব চিকিৎসক না পারেন নিজের বা সংসারে সময় দিতে, না পারেন রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে কোন অবদান রাখতে। পক্ষান্তরে গউ/গঝ ডিগ্রী স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ায় এ ডিগ্রীধারী চিকিৎসকরা কেউই ঋঈচঝ ডিগ্রী অর্জন করতে চান না। তাছাড়াও দেশে থেকেই এখন আন্তর্জাতিক মানের রয়্যাল কলেজ অব লন্ডনের ডিগ্রী গজঈচ/গজঈঝ ব্রিটিশ কাউন্সিলে বসে দেয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়/বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়/রাজশাহী ও চট্টগ্রাম মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ ও স্পেশালাইজড ইনস্টিটিউট থেকে হাতে-কলমে শিক্ষাদান করে থাকে। গউ/গঝ/গ.চযরষ/উরঢ়ষড়সধ করার সুযোগ থাকায় চিকিৎসকরা ঋঈচঝ ডিগ্রী বিমুখ হয়ে যাওয়ায় ইঈচঝ-এর কর্মকর্তারা গউ/গঝ ডিগ্রীধারীদের প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে গউ/গঝ/গ.চযরষ ডিগ্রী নিতে হলে অবশ্যই চিকিৎসকদের ঋঈচঝ ডিগ্রী সম্পূর্ণ করে আসার একটা অশুভ প্রক্রিয়ায় মেতে উঠেছেন। ফলে এই ডিগ্রী অর্জন করতে একজন চিকিৎসকের ন্যূনতম ৪৫ থেকে ৫০ বছর লেগে যাবে। এতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের ডাক্তারি বা সংসার জীবন করা হয়ে উঠবে না। বরং ডিগ্রী করতে করতেই জীবন প্রদীপ নিভে যাবে। অথচ ইন্ডিয়া, সিঙ্গাপুর, ব্যাংকক, মালয়েশিয়া, ইউরোপ, আমেরিকাসহ সর্বত্র ৩০ বছরের মধ্যেই গউ/গঝ ডিগ্রী অর্জন করে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার হওয়ার বাস্তবধর্মী শিক্ষা পদ্ধতি চালু আছে। ফলে তারা মেধা, দক্ষতা ও আন্তরিকতার সঙ্গে রোগীর সর্বোচ্চ সেবা দিতে পারে। একইভাবে গউ/গঝ/গ.চযরষ ডিগ্রী দ্বারাই এদেশের চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিপ্লব করা সম্ভব। উল্লেখ্য, ঋঈচঝ নামের ডিগ্রীটি বিশ্বে শুধু বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে চালু আছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশে গউ/গঝ ডিগ্রী চালু আছে। এভাবে ডিগ্রীর সমন্বয় করার নামে চিকিৎসকদের উচ্চশিক্ষা রোধ তথা জীবন ধ্বংসের পাঁয়তারা চলছে দেশে। স্পষ্টভাবে বলতে চাই, আমরা কারও প্রতিপক্ষ নই। বরং বিশ্বের সঙ্গে তাল মেলাতে আপনারা আপনাদের প্রদেয় ডিগ্রীকে আরও বাস্তবমুখী ও আধুনিক করুন। আমরাও আমাদের ডিগ্রীকে প্রয়োজনে আধুনিক করতে আরও সুনির্দিষ্ট রোগীবান্ধব শিক্ষা পদ্ধতি গ্রহণ করব। শুধু ডিগ্রী সমন্বয়ের ধুয়া তুলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তৈরি করার পথ সঙ্কুচিত করা থেকে বিরত থেকে বাংলাদেশের মেডিক্যাল সায়েন্সকে বিশ্বমানের করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। লেখক : অধ্যাপক (কার্ডিওলজি), মহাসচিব, পোস্ট গ্রাজুয়েট ডক্টরস এ্যাসোসিয়েশন
×