ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

দেশের পক্ষে হোপের দ্রুততম ফিফটির রেকর্ড, কটরেলের ক্যারিয়ারসেরা বোলিং, দলের বিপর্যয়ের মুখে সাকিবের অষ্টম ফিফটি

কটরেল-হোপের মাঝে সাকিবের লড়াই

প্রকাশিত: ০৭:২১, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৮

কটরেল-হোপের মাঝে সাকিবের লড়াই

মোঃ মামুন রশীদ ॥ ম্যাচের আগের দিন পায়ের আঙ্গুলে বলের আঘাত পেয়েছিলেন। অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের তাই সোমবার সিরিজের প্রথম টি২০ খেলা নিয়ে কিছুটা সংশয় ছিল। যদিও কোচ, ফিজিও, চিকিৎসকরা নিশ্চয়তা দিয়েছিলেন দেশসেরা এ ক্রিকেটার ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টি২০ খেলবেন। সেই সাকিব একাই লড়াই করেছেন ফুঁসে ওঠা ভয়ানক ক্যারিবীয় বোলিংয়ের বিপক্ষে। বাঁহাতি পেসার শেলডন কটরেল তার গতির তোপে একের পর এক উইকেট নিয়ে ক্যারিয়ারসেরা বোলিং নৈপুণ্য দেখিয়েছেন। তবু সাকিবের ব্যাটে ঝড় আটকে রাখা যায়নি। ক্যারিয়ারের অষ্টম ফিফটি হাঁকিয়ে ৬১ রান করার পথে দলকে বড় বিপর্যয় থেকে বাঁচিয়েছেন। তবে বাংলাদেশ দল যে সংগ্রহ পেয়েছে, সেটাকে খড়কুটোর মতো ভাসিয়ে নিয়ে গেছে ব্যাটিং তা-ব দেখানো ওপেনার শাই হোপের সাইক্লোন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে আন্তর্জাতিক টি২০-তে দ্রুততম অর্ধশতক হাঁকিয়েছেন। ৫৫ রান করেছেন তিনি আন্তর্জাতিক টি২০ ইতিহাসে তৃতীয় দ্রুততম ফিফটি হাঁকিয়ে। সবচেয়ে আশ্চর্যজনক বিষয়, ৭ টি২০ ম্যাচের ক্যারিয়ারে এটিই তার প্রথম ফিফটি। প্রায় ৫ বছরের ক্রিকেট ক্যারিয়ার কটরেলের। কিন্তু এর মধ্যে মাত্র ২ টেস্ট, ৬ ওয়ানডে ও ৮ টি২০ খেলার সুযোগ পেয়েছেন। খুব বেশি দেশ ঘোরার সুযোগটাও পাননি। দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ড, জিম্বাবুইয়ে ও ভারত সফর করেছেন তিন ফরমেট মিলিয়ে। এর মধ্যেই এ বাঁহাতি বেশ অভিজ্ঞ হয়েছেন। এবার বাংলাদেশ সফরে প্রথমবার এসে প্রথম খেলতে নেমেছেন সিরিজের প্রথম টি২০ ম্যাচে। আর বল হাতে শুরুতেই ঝড় তোলেন। বাংলাদেশের ইনিংসে দ্বিতীয় ওভারের চতুর্থ বলেই তিনি শিকার করেন অপরিহার্য ওপেনার তামিম ইকবালকে। নিজের দ্বিতীয় ওভারে ওয়ানডাউনে আসা সৌম্য সরকারকেও তুলে নিলে কটরেল বিভীষিকা হয়ে ওঠেন বাংলাদেশের ইনিংসে। টপ অর্ডারে মড়ক লাগিয়ে দেন। ফিরতি স্পেলে এসে কটরেল আরও শিকার করেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও সাকিবকে। ফলে মিডলঅর্ডারেও ধস নামে। ক্যারিয়ারের অষ্টম টি২০ খেলতে নেমে সেরা বোলিং নৈপুণ্যের দেখা পেয়ে গেছেন অবশেষে। ৪ ওভারে ২৮ রান দিয়ে এ বাঁহাতি জ্যামাইকান পেসার ৪ উইকেট শিকার করেন। তার এমন ক্ষুরধার বোলিংয়েই বেশিদূর যেতে পারেনি বাংলাদেশের ইনিংস। এর আগে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টি২০ ম্যাচে তিনি দেশের মাটিতে ২৮ রানে ৩ উইকেট নিয়েছিলেন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। সেটিই ছিল সেরা। এবার নিজের সেরা নৈপুণ্যকে আরও উজ্জ্বল করলেন কটরেল। কটরেলের ঝড়টাকে উপেক্ষা করতে পেরেছেন একমাত্র সাকিব। অথচ ম্যাচের আগের দিন নেটে ব্যাটিং অনুশীলন করতে নেমেই আঘাত পেয়ে মাঠ ছাড়তে হয়েছিল। আর অনুশীলনও করেননি এবং ম্যাচ পূর্ববর্তী সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়কের আসার বিষয়টি নিয়ে বাধ্যবাধকতা থাকার পরেও আসেননি। তাই সোমবার সিরিজের প্রথম টি২০ খেলতে নামবেন কিনা তা নিয়েই ছিল সংশয়। অথচ ব্যর্থতার মিছিলে একাই দাঁড়িয়ে ব্যাটে ঝড় তোলেন সাকিব। অন্য কেউ তাকে সেভাবে সঙ্গ দিতে না পারলেও ক্যারিয়ারের অষ্টম অর্ধশতক তুলে নেন তিনি। ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে মাত্র ২ টি২০ ম্যাচ আগেই ফ্লোরিডার লডারহিলে খেলেছিলেন ৬০ রানের ইনিংস। এবার ৪৩ বলে ৮ চার, ২ ছক্কায় ৬১ রানে থেমেছেন তিনি। কটরেলকে একাই হেস্তনেস্ত করেছেন। তবে সেই কটরেলই শেষ পর্যন্ত সাকিবের ইনিংসে যবনিকা টেনেছেন। অধিনায়কোচিত এই দুর্দান্ত ইনিংসের সমাপ্তির কিছু পরেই শেষ হয়ে যায় দলীয় ইনিংস। এরপরও মাত্র ১২৯ রানের মামুলি সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ দল। হয় তো বাংলাদেশী বোলাররা কিছুটা আশা করতেই পারতেন। কিন্তু ফর্মের তুঙ্গে থাকা ওপেনার শাই হোপ সেটি হতে দেননি। প্রথম থেকেই তিনি চড়াও হয়েছেন বাংলাদেশী বোলারদের ওপর। বিশেষ করে তিনি ডানহাতি অফস্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজকে বিধ্বস্ত করেছেন। আর এতে করেই বাংলাদেশের ছোট্ট সংগ্রহ আরও ক্ষুদ্রতা পেয়েছে। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে মিরাজ বোলিংয়ে আসার পর তিনি দারুণ দুর্গতির মধ্যে পড়ে যান। হোপের বিধ্বংসী রূপের কাছে ছিন্নভিন্ন হয়ে যান মিরাজ। ৩ ছক্কা হাঁকিয়ে সবমিলিয়ে ২৩ রান তুলে নেন হোপ। বিরতি দিয়ে আবার যখন মিরাজ ফিরেছেন পাওয়ার প্লে’র শেষ ওভারে (ষষ্ঠ ওভার) তখন আবার জ্বলে ওঠেন ২৫ বছর বয়সী হোপ। এবারও তিনি দোর্দ- তোপে মিরাজকে ২ ছক্কা হাঁকিয়ে তুলে নেন ১৮ রান। মিরাজের এ দুটি ওভার এবং হোপের টর্নেডো ব্যাটিংয়ে পাওয়ার প্লে’র ৬ ওভারে ৯১ রান তুলে জয়টাকে সুনিশ্চিত করে ক্যারিবীয়রা। হোপ মাত্র ১৬ বলে পেয়ে যান ফিফটি। টেস্ট ও ওয়ানডে সিরিজে ক্যারিবীয়দের দারুণ ভুগিয়েছিলেন মিরাজ। সেই ঝালটা যেন একদিনেই ঝেড়েছেন হোপ। ক্যারিয়ারের সপ্তম টি২০ ম্যাচ খেলতে নেমে প্রথম ফিফটি পেয়েছেন ১৬ বলে যা ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে আন্তর্জাতিক টি২০-তে দ্রুততম। এর আগে ক্যারিবীয়দের পক্ষে দ্রুততম ফিফটির রেকর্ড ছিল ক্রিস গেইলের দখলে। তিনি ২০১৫ সালে কেপটাউনে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১৭ বলে করেছিলেন ফিফটি। আর আন্তর্জাতিক টি২০ ইতিহাসে হোপের এই কীর্তিটি তৃতীয় দ্রুততম। ডারবানে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২০০৭ সালে ভারতের যুবরাজ সিং মাত্র ১২ বলে ফিফটি হাঁকিয়ে দ্রুততম অর্ধশতকের যে বিশ্বরেকর্ড গড়েছেন তা এখনও অম্লান। আর দ্বিতীয় স্থানে আছেন নিউজিল্যান্ডের কলিন মুনরো। তিনি ২০১৬ সালে অকল্যান্ডে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে করেছিলেন ১৪ বলে অর্ধশতক।
×