ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

তরুণদের নৈপুণ্যে হতাশ নান্নু

প্রকাশিত: ০৭:৪১, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৮

তরুণদের নৈপুণ্যে হতাশ নান্নু

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ গত ফেব্রুয়ারিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুই ম্যাচের টি২০ সিরিজে ৩ তরুণ ক্রিকেটারকে খেলার সুযোগ করে দিয়েছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। অনুর্ধ-১৯ দলের হয়ে নজরকাড়া নৈপুণ্য দেখিয়েছিলেন। তাই অফস্পিন অলরাউন্ডার আফিফ হোসেন ধ্রুব ও উইকেটরক্ষক ওপেনার জাকির হাসানকে সুযোগ দেয়া হয়েছিল প্রথম টি২০ ম্যাচে। পাশাপাশি ঘরোয়া ক্রিকেটে দারুণ করা অফস্পিন অলরাউন্ডার মেহেদী হাসানের অভিষেক ঘটেছিল সিরিজের দ্বিতীয় টি২০ ম্যাচে। তবে সেখানেই থেমে গেছে এ তিন তরুণের অগ্রযাত্রা। আর সাম্প্রতিক সময়ে জাতীয় দলে ঢোকার মূল রাস্তা ‘এ’ দলের হয়েও এ তিনজনের পারফর্মেন্সের করুণ দশা। তাই জাতীয় দলের প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু হতাশা প্রকাশ করেছেন। ক্ষুদ্রতম ফরমেট টি২০ ক্রিকেটে বাংলাদেশ দলের অবস্থান এখন পর্যন্ত শক্ত হয়নি। যে মনোভাব নিয়ে মাঠে পারফর্ম করতে হয় সেভাবে দেশের ক্রিকেটারদের মধ্যে জন্ম নেয়নি। তাই প্রতিনিয়তই তরুণ উদীয়মানের খোঁজে আছে জাতীয় দলের নির্বাচকরা। এরই অংশ হিসেবে আফিফ ও জাকিরকে হুট করেই সুযোগ দেয়া হয়েছিল দেশের মাটিকে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুই ম্যাচের টি২০ সিরিজে। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি মিরপুরে জাতীয় দলের জার্সি গায়ে তোলার স্বপ্ন পূরণ হয়েছিল মাত্রই অনুর্ধ-১৯ দলের পাট চুকিয়ে ফেলা এ দুই ক্রিকেটারের। কিন্তু স্বপ্ন পূরণের ম্যাচে অপরিহার্য তামিম ইকবালের অনুপস্থিতিতে জাকির ওপেনিংয়ে নেমে ১০ রান করেই সাজঘরে ফেরেন। আর আফিফ ব্যাট হাতে শূন্য রান করে আউট হওয়ার পর বল হাতে ১ উইকেট নিতে গিয়ে ২ ওভারে খরচা করেন ২৬ রান। প্রত্যাশামাফিক কিছু করে দেখাতে পারেননি, সে কারণে পরের ম্যাচেই ছিটকে যান দু’জন একসঙ্গে। এবার সুযোগ করে নেন ২৪ বছর বয়সী অফস্পিন অলরাউন্ডার মেহেদী। তিনি ব্যাট হাতে ১১ রান করেন এবং বল হাতে ২ ওভারে ২৫ রান দিয়ে থাকেন উইকেটশূন্য। অথচ তিনজনই এর আগে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল) টি২০ আসর, ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লীগ (ডিপিএল) ও জাতীয় ক্রিকেট লীগে (এনসিএল) দারুণ নৈপুণ্য দেখিয়ে নজর কেড়েছিলেন। কয়েকজন সিনিয়র ক্রিকেটারের ইনজুরির কারণে সুযোগ পেয়েও তা কাজে লাগাতে পারেননি তারা। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রেখে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছেন তিন তরুণ। এরপর থেকে এ তিনজনের কেউ জাতীয় দলে সুযোগ পাননি। অথচ জাতীয় দলের ভবিষ্যত হিসেবে গড়ার জন্য তাদের তৈরি করতে গিয়ে বিসিবি সব পদক্ষেপই নিয়েছে। সেসব কার্যক্রমেও নিজেদের সেভাবে প্রমাণ করতে পারেননি আফিফ, জাকির ও মেহেদী। এমনকি ঘরোয়া ক্রিকেটেও তাদের নৈপুণ্য আহামরি তেমন কিছু নয়। টি২০ অভিষেকের পরই বাংলাদেশ ‘এ’ দলের হয়ে দুটি ফার্স্ট ক্লাস সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন ১৯ বছর বয়সী আফিফ। কিন্তু এরপর শ্রীলঙ্কা ‘এ’ ও আয়ারল্যান্ড ‘এ’ দলের বিপক্ষে ৬ ম্যাচে মাত্র ৬৪ রান করতে পেরেছেন। এবারের প্রথম শ্রেণীর ঘরোয়া আসরে তার ব্যাটিং গড় ছিল মাত্র ১৬.৯০। সম্প্রতিই ইমার্জিং টিমস এশিয়া কাপে দুই ম্যাচ খেলে ২০ রান করতে পেরেছেন। আর জাকির বাংলাদেশ ‘এ’ দলের হয়ে ১৩ ইনিংস ব্যাট করে ২৮.৯২ গড়ে রান করেছেন। এ মৌসুমে ৭টি ঘরোয়া প্রথম শ্রেণীর ম্যাচে তিনটি ফিফটি পেয়েছেন শুধু। ইমার্জিং টিমস এশিয়া কাপে চার ম্যাচের দুটিতে ৬৯ ও ৪৯ রান করলেও বাকি দুটিতে দুই অঙ্কে পৌঁছতে পারেননি ২০ বছর বয়সী এ বাঁহাতি ওপেনার। হতাশ নান্নু তাই বললেন, ‘গেম প্ল্যানিংয়ের চিন্তা থেকে তাদের যে সুযোগ দেয়া হয়েছে সেখানে তারা নিজেদের দক্ষতার সেভাবে উন্নতি ঘটাতে পারেনি। আমাদের উচ্চাশা ছিল আফিফ ও জাকিরকে নিয়ে। কিন্তু তারা যা করেছে সেটাতে আমরা খুবই হতাশ। ঘরোয়া ক্রিকেট কিংবা ইমার্জিং কাপ কোথাও তারা ভাল করতে পারেনি।’ অবশ্য ২৪ বছর বয়সী মেহেদী এবার বাংলাদেশ ক্রিকেট লীগে (বিসিএল) দুর্দান্ত করছেন। ব্যাটিং গড় ৮০.৫০ এবং ১৬ উইকেট নেয়ার পথে বোলিং গড় ২৬.৭৫ ! তিনজনের মধ্যে তাই মেহেদীর ওপর এখনও কিছুটা আশা করছেন নান্নু। যদিও বর্তমান প্রেক্ষাপট অনুসারে মেহেদীর জন্য জাতীয় দলে সুযোগ করে নেয়াটা বেশ কঠিন। এ বিষয়ে নান্নু বলেন ‘সে আমাদের বিবেচনার বাইরে যায়নি। মেহেদী মিরাজ তিন ফরমেটেই খেলছে, নাঈম হাসান চমৎকারভাবে টেস্ট ক্যারিয়ার শুরু করেছে। মিরাজের বিকল্প হিসেবে আমরা নাঈমকে বিবেচনায় এনে সেভাবেই কার্যকর হিসেবে পেয়ে গেছি। তবে অফস্পিনারদের মধ্যে মেহেদী আমাদের নজরদারির মধ্যে অন্যতম একজন হিসেবেই আছে।’
×