ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

‘আমার গ্রাম, আমার শহর’- যেখানে প্রতিটি গ্রামে নাগরিক সুবিধা থাকবে ;###;এক কোটি ২৮ লাখ তরুণের কর্মসংস্থান;###;কোরান ও সুন্নাহবিরোধী কোন আইন প্রণয়ন নয়

লক্ষ্য সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রা ॥ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৮

লক্ষ্য সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রা ॥ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ দুই মেয়াদের ক্ষমতায় থেকে দেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে তোলার পর তরুণ প্রজন্মকে নেতৃত্বে সম্পৃক্ত করে সেই অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি এসেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে মঙ্গলবার ঘোষিত ইশতেহারের শুরুতেই আওয়ামী লীগের ২১টি বিশেষ অঙ্গীকার তুলে ধরা হয়েছে, যেগুলোতে তারা জোর দেবে আবারও ক্ষমতায় যাওয়ার সুযোগ পেলে। এসব অঙ্গীকারের মধ্যে দুটি বিষয়ের ওপর জোর দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে একটি- আমার গ্রাম-আমার শহর; যেখানে প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নগর সুবিধা পৌঁছে দেয়ার রূপরেখা তুলে ধরা হয়েছে। দ্বিতীয়টি হচ্ছে- তারুণ্যের শক্তি-বাংলাদেশের সমৃদ্ধি। একই সঙ্গে ইশতেহারে নির্বাচিত হলে ১ কোটি ২৮ লাখ তরুণের কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। অঙ্গীকার করা হয়েছে, ক্ষমতায় গেলে কোরান-সুন্নাহ বিরোধী কোন আইন করা হবে না। ঢাকা ও বিভাগীয় শহরের মধ্যে বুলেট ট্রেন চালু করা হবে। উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ সহজ করার জন্য যমুনা নদীর তলদেশ দিয়ে টানেল নির্মাণ করা হবে। রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই ইশতেহার ঘোষণা করে বলেছেন, টানা তৃতীয়বারের মতো রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার সুযোগ পেলে তাঁর দল ‘টেকসই বিনিয়োগ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন’ নিশ্চিত করবে। এটাই তাঁদের এবারের অঙ্গীকার। প্রতিটি ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের দলীয় অবস্থান, গত ১০ বছরের অর্জন এবং আগামী দিনের লক্ষ্য ও পরিকল্পনা ধরে সাজানো হয়েছে ৮০ পৃষ্ঠার এই ইশতেহার। ২০০৮ সালের ‘দিন বদলের সনদ’, ২০১৪ সালের ‘এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ’ এর পর আসন্ন ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের চমকের ইশতেহারে শিরোনাম দেয়া হয়েছে ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’। ঘোষিত ইশতেহার বিভিন্ন মেয়াদে সরকারে থাকার সময়কার অর্জনগুলোর পাশাপাশি বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়কার দুঃশাসন, লুটপাট, সন্ত্রাস, খুন, জঙ্গীবাদ ও বিদেশে অর্থপাচারের বিষয়গুলোও বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সকাল ১০টায় রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁও মিলনায়তনে প্রবেশ করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। জাতীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় ইশতেহার ঘোষণার অনুষ্ঠান। পরে গত দশ বছরের উন্নয়নের একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। তথ্যচিত্রে সংক্ষিপ্ত আকারে উঠে আসে বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকা, মুক্তিযুদ্ধ, পনেরো আগস্টের নির্মম হত্যাযজ্ঞ, দেশে ফিরে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগের হাল ধরা, সরকার গঠন, দেশে জঙ্গীবাদের উত্থান, শেখ হাসিনাকে হত্যা চেষ্টা, আগুনসন্ত্রাস এবং শক্ত হাতে অপশক্তি মোকাবেলা করে বাংলাদেশকে উন্নয়নের পথে নিয়ে যাওয়া। দেখানো হয় ছিটমহল সমস্যা সমাধান থেকে শুরু করে সমুদ্র বিজয়, জিজিটাল বাংলাদেশ থেকে মহাকাশ অভিযান, সার্বিক উন্নয়নে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করার প্রক্রিয়া। অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্য রাখেন নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির আহ্বায়ক ড. আবদুর রাজ্জাক। আবেগঘন বক্তৃতায় তিনি নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নে দেশেবাসীর সহযোগিতা কামনা করে বলেন, আসুন এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখে আমরা দেশকে আলোকিত করি, সমৃদ্ধ করি, সারা বিশ্বের কাছে মাথা উঁচু করে দাঁড়াই। তিনি ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির সকল সদস্যকে ধন্যবাদ জানান। শুভেচ্ছা বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, শুধু পরবর্তী নির্বাচন নয়, আমাদের লক্ষ্য পরবর্তী প্রজন্ম। বাংলাদেশের ইতিহাসে বিগত ৪৩ বছরে সবচেয়ে দক্ষ ও বিচক্ষণ রাজনীতিক, সৎ নেতা এবং সফল রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা ভিশন ’২১, ভিশন ’৪১ বাস্তবায়ন করে দেশকে ভিশন ২১০০ দিকে নিয়ে যাব। বিজয়ের মাসে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে বিজয় আমাদের হবেই। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাসান মাহমুদ। মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্যবৃন্দ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, শিক্ষক, প্রকৌশলী, বুদ্ধিজীবী, সাংস্কৃতিক কর্মী, কূটনীতিক, দেশী-বিদেশী সংবাদিকসহ সমাজের সকল শ্রেণী-পেশার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। ইশতেহারে আওয়ামী লীগ বলেছে, জনগণের রায়ে আবার ক্ষমতায় যেতে পারলে সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ, মাদক, সাম্প্রদায়িকতা ও দুর্নীতি নির্মূল করে গণতন্ত্র ও আইনের শাসনকে সুসংহত করবে। সমাজের সকল পর্যায়ে নারীর প্রতিনিধিত্ব ও ক্ষমতায়নে তারা বদ্ধপরিকর। সেবামুখী দক্ষ জনপ্রশাসন ও জনহিতৈষী আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী গড়ে তুলে দুর্নীতিমুক্ত সুশাসন-ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জনগণের জন্য শান্তিশৃঙ্খলা ও সমৃদ্ধির নিশ্চয়তা বিধান করারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। ইশতেহারের শেষে বলা হয়েছে, ‘আসুন আমরা সবাই মিলে এমন এক বাংলাদেশ গড়ে তুলি যেখানে মানুষের মৌলিক সব চাহিদা পূরণ নিশ্চিত হবে, গড়ে উঠবে সহিষ্ণু গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা, নিশ্চিত হবে সামাজিক ন্যায়বিচার, যার যার ধর্ম পালনে স্বাধীনতা ও সমঅধিকার, নারীর অধিকার ও সুযোগের সমতা, তরুণদের শ্রম ও মেধার সৃজনশীল বিকাশ, আইনের শাসন, মানবাধিকার, সুশাসন, শহর ও গ্রামের বৈষম্য দূরীকরণ, দূষণমুক্ত পরিবেশ। গড়ে উঠবে এক অসাম্প্রদায়িক প্রগতিশীল বিজ্ঞানমনস্ক উদার গণতান্ত্রিক কল্যাণরাষ্ট্র।’ লিখিত ইশতেহারে পঞ্চাশ মিনিটের বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বিভেদ, হানাহানি, জ্বালাও-পোড়াও, অগ্নিসন্ত্রাস, অবরোধ, বিশৃঙ্খলার রাজনীতি চাই না। চাই গণতান্ত্রিক পরিবেশে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। এ নির্বাচনে আমরা জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেছি। আমি কথা দিচ্ছি, অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা আরও সুন্দর ভবিষ্যত নির্মাণ করব। জাতির পিতার কাক্সিক্ষত ক্ষুধা,দারিদ্র্য, নিরক্ষরতামুক্ত অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলা গড়ে তুলব। এদেশের মানুষ যাতে ভালভাবে বাঁচতে পারেন, উন্নত-সমৃদ্ধ জীবনের অধিকারী হতে পারেন, তা বাস্তবায়ন করাই আমার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য। আওয়ামী লীগের ২১ দফা বিশেষ অঙ্গীকার ॥ ইশতেহারের শুরুতেই আওয়ামী লীগের ২১টি বিশেষ অঙ্গীকার তুলে ধরা হয়েছে, যেগুলোতে তারা জোর দেবে আবারও ক্ষমতায় যাওয়ার সুযোগ পেলে। ইশতেহার ঘোষণাকালে প্রধানমন্ত্রী এসব বিশেষ অঙ্গীকার দেশবাসীর সামনে তুলে ধরেন, যিনি গত এক দশক ধরে বাংলাদেশের সরকার পরিচালনায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আওয়ামী লীগের বিশেষ অঙ্গীকারের মধ্যে রয়েছে- প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নগরসুবিধা সম্প্রসারণ, তরুণ-যুবসমাজকে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর, কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ, নারীর ক্ষমতায়ন, লিঙ্গসমতা ও শিশু কল্যাণ, পুষ্টিসম্মত ও নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তা, সন্ত্রাস, সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গীবাদ ও মাদক নির্মূল, মেগা প্রজেক্টসমূহের দ্রুত ও মানসম্মত বাস্তবায়ন; গণতন্ত্র ও আইনের শাসন সুদৃঢ় করা, দারিদ্র্য নির্মূল, সকল স্তরে শিক্ষার মান বৃদ্ধি, সরকারী ও বেসরকারী বিনিয়োগ বৃদ্ধি, সকলের জন্য মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবার নিশ্চয়তা, সার্বিক উন্নয়নে ডিজিটাল প্রযুক্তির অধিকতর ব্যবহার, বিদ্যুত ও জ্বালানি নিরাপত্তার নিশ্চয়তা, আধুনিক কৃষিব্যবস্থার লক্ষ্যে যান্ত্রিকীকরণ, দক্ষ ও সেবামুখী জনপ্রশাসন, জনবান্ধব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা, ব্লু-ইকোনমি ও সমুদ্রসম্পদ উন্নয়ন, নিরাপদ সড়কের নিশ্চয়তা, প্রবীণ, প্রতিবন্ধী ও অটিজম কল্যাণ, টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলে যা করবে ॥ টানা দশ বছরে দেশকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির মহাসড়ক দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পর টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এলে দেশের জন্য আরও, আরও যা করা হবে সে ব্যাপারে বিস্তারিত প্রতিশ্রুতি ইশতেহারে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসব প্রতিশ্রুতির মধ্যে রয়েছে- সর্বজনীন মানবাধিকার সুনিশ্চিত করার পাশাপাশি মানবাধিকার লঙ্ঘনের যে কোন প্রচেষ্টা প্রতিহত করা হবে, নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পেলে জঙ্গীবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, সন্ত্রাস ও মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতির প্রতি আমাদের দৃঢ় অবস্থান অব্যাহত থাকবে। সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, দখলদারি বন্ধে সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করা হবে। একই সঙ্গে আগামী ৫ বছরে জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে জনবল নিয়োগ করা হবে। আওয়ামী লীগের এবারের নির্বাচনী ইশতেহারে দেশবাসীকে দেয়া প্রতিশ্রুতির মধ্যে আরও রয়েছে- প্রতিটি গ্রামকে শহরে উন্নীত করার কর্মসূচী গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হবে। শহরের সুবিধা গ্রামে পৌঁছে দেব। আগামী ৫ বছরে দেশের প্রতিটি ঘরে ঘরে বিদ্যুত পৌঁছে যাবে। পাকা সড়কের মাধ্যমে সকল গ্রামকে জেলা/উপজেলা শহরের সঙ্গে সংযুক্ত করা হবে। এছাড়া আগামী ৫ বছরে জিডিপি ১০ শতাংশে উন্নীত করা হবে। ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পালনকালে বাংলাদেশ হবে মধ্যম আয়ের দেশ। ২০৩০ সালে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় দাঁড়াবে ৫ হাজার ৪৭৯ ডলারের বেশি। টানা তৃতীয় মেয়াদে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলে প্রতিটি উপজেলায় যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করবে। জাতীয় পর্যায়ে স্বল্প, মধ্যম ও উচ্চ শিক্ষিত তরুণদের তথ্য সংবলিত একটি ইন্টিগ্রেটেড ডাটাবেজ তৈরি করা হবে। তরুণদের সুস্থ বিনোদনের জন্য প্রতিটি উপজেলায় গড়ে তোলা হবে একটি করে ‘যুব বিনোদন কেন্দ্র’। প্রতিটি জেলায় একটি করে ‘যুব স্পোর্টস কমপ্লেক্স’ গড়ে তোলা হবে। আগামী ৫ বছরে ১ কোটি ২৮ লাখ কর্ম সৃজন করার পরিকল্পনা রয়েছে আওয়ামী লীগের। প্রতি উপজেলা থেকে প্রতিবছর গড়ে ১ হাজার যুব/যুব মহিলাকে বিদেশে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। আওয়ামী লীগ জয়ী হয়ে ক্ষমতায় গেলে বাল্যবিবাহ শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে আওয়ামী লীগ। কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমান মজুরি নিশ্চিত করবে তারা। নারী উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে আলাদা ব্যাংকিং ও ঋণ সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। দারিদ্র্যের হার ১২ দশমিক ৩ শতাংশ এবং চরম দারিদ্র্যের হার ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে। প্রতিটি পরিবারে অন্তত একজনের নিয়মিত রোজগার নিশ্চিত করা হবে। একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প বাস্তবায়ন অব্যাহত থাকবে। সহজ শর্তে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে ঋণ প্রদানের মাধ্যমে আয়বর্ধকমূলক কর্মকা-ে সম্পৃক্ত করা হবে। এছাড়াও ক্ষমতায় গেলে ছোট ও মাঝারি আকারের দুগ্ধ ও পোল্ট্রি খামার প্রতিষ্ঠা এবং মৎস্য চাষের জন্য সহজ শর্তে ঋণ, প্রয়োজনমতো ভর্তুকি, প্রযুক্তিগত পরামর্শ ও নীতি সহায়তা বৃদ্ধি করা হবে। ২০২০ সালের মধ্যে সকলের জন্য বিদ্যুত নিশ্চিত করা হবে। ২০২৩ সালের মধ্যে ২৮ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত এবং ৫ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ করা হবে। প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত আওয়ামী লীগের ইশতেহারে আরও বলা হয়েছে- নির্বাচনে বিজয়ী হলে ক্ষমতায় গেলে পদ্মা সেতুর দুইপারে আধুনিক শিল্পনগরী গড়ে তোলা হবে। প্রতিটি বিভাগীয় শহরে আইটি শিল্পপার্ক স্থাপন করা হবে। প্রতিটি উপজেলায় একটি করে টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট স্থাপন করা হবে। ইতোমধ্যে ১০০টি উপজেলায় এ ধরনের ইনস্টিটিউট স্থাপনের কাজ চলছে। নৃগোষ্ঠীর নিজস্ব ভাষায় শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করে প্রয়োজনীয় বই বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে। সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণের বেতন গ্রেডসহ শিক্ষা খাতের কিছু কিছু ক্ষেত্রে যে বৈষম্য রয়ে গেছে, তা ন্যায্যতার ভিত্তিতে নিরসন করা হবে। এছাড়া ১ বছরের নিচে ও ৬৫ বছরের উপরে সকল নাগরিকের জন্য বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা দেয়া হবে। সকল বিভাগীয় শহরে মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হবে। আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতায় গেলে কোরান-সুন্নাহ বিরোধী কোন আইন করা হবে না এমন প্রতিশ্রুতি দিয়ে আওয়ামী লীগের ইশতেহারে বলা হয়েছে, ক্ষমতায় গেলে ঢাকা ও বিভাগীয় শহরের মধ্যে বুলেট ট্রেন চালু করা হবে। দেশের আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরগুলোকে আধুনিকায়ন করা হবে। আগামী ৫ বছরে প্রায় ১০ হাজার কিলোমিটার নৌপথ খনন করা হবে। এছাড়া মহাসড়কের পাশে অবস্থিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য আন্ডারপাস/ওভারপাস নির্মাণ করা হবে। উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ সহজ করার জন্য যমুনা নদীর তলদেশ দিয়ে টানেল নির্মাণ করা হবে। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে আরও রয়েছে, দেশের সর্বত্র মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি রক্ষা, ইতিহাস বিকৃতি রোধ এবং প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরার জন্য বিশেষ কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। সারাদেশে মুক্তিযুদ্ধকালীন বধ্যভূমি ও গণকবর চিহ্নিতকরণ, শহীদদের নাম-পরিচয় সংগ্রহ এবং স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হবে। পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তির যেসব ধারা এখনও বাস্তবায়িত হয়নি, সেগুলো বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। এছাড়াও অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা চর্চায় সাংবাদিকদের উৎসাহ প্রদান ও প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেয়া হবে। পেশাগত দায়িত্ব পালনে সাংবাদিক ও সংবাদকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। ইশতেহারে আওয়ামী লীগ বলেছে, টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় গেলে আওয়ামী লীগ সংবিধান অনুযায়ী সকল নাগরিকের স্বাধীনভাবে ধর্ম পালনের অধিকার নিশ্চিত করবে। ধর্ম যাঁর যাঁর, উৎসব সবার- এই নীতি সমুন্নত রাখা হবে। অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বাংলাদেশের সমাজ গড়ে তোলা হবে। মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করে বলা হয়, মুক্তিযোদ্ধাদের বার্ধক্যকালীন ভরণ-পোষণ, বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান এবং ষাট ও তদুর্ধ বয়সের সকল মুক্তিযোদ্ধাকে সম্মানিত নাগরিক হিসেবে রেল, বাস ও লঞ্চে বিনামূল্যে চলাচলের সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। এসব কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। ইশতেহারে আরও বলা হয়, জনগণের ভোটে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে আওয়ামী লীগ ২০২১-২৩ সালের মধ্যে ৫-জি চালু করবে। ইন্টারনেট ও মোবাইল ব্যবহারের মূল্য যুক্তিসঙ্গত পর্যায়ে নামিয়ে আনা হবে। প্রতিটি পরিবারে অন্তত একজনের নিয়মিত রোজগার নিশ্চিত করা হবে। তরুণদের মধ্যে উদ্যোক্তা হওয়ার প্রবণতা ও আত্মকর্মসংস্থান বৃদ্ধি করতে কর্মসংস্থান ব্যাংকের মাধ্যমে বিনা জামানতে ও সহজশর্তে জনপ্রতি দুই লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ সুবিধা ইতোমধ্যেই প্রদান করা হবে। ভবিষ্যতে এই সুবিধা আরও বিস্তৃত করা হবে। ১০ মেগা প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন ॥ প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো গৃহীত ১০টি বৃহৎ মেগা প্রকল্প জনগণের ভোটে ক্ষমতায় এলে দ্রুত বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। প্রকল্পগুলো হচ্ছে- পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র, রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র, গভীর সমুদ্র বন্দর, ঢাকা মাস-র‌্যাপিড ট্রানজিট প্রকল্প, এলএনজি টার্মিনাল, মহেশখালী-মাতারবাড়ি সমন্বিত অবকাঠামো উন্নয়ন কার্যক্রম, পায়রা সমুদ্র বন্দর, পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ এবং চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন স্থাপন। এ বিষয়ে ইশতেহারে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ এসব মেগা প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। পায়রা বন্দরের পরিপূর্ণ উন্নয়নের কাজ চলমান রয়েছে। সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর, রামপাল বিদ্যুত প্রকল্প, মাতারবাড়ি বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপন বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। এলএনজি টার্মিনাল বাস্তবায়িত হয়েছে। ইতোমধ্যে জাতীয় গ্রিডে এলএনজি গ্যাস সরবরাহ শুরু হয়েছে। সামষ্টিক অর্থনীতি প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, আগামী ৫ বছরে ডিজিপি ১০ শতাংশে উন্নীত করা হবে। ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পালনকালে বাংলাদেশ হবে মধ্যম আয়ের দেশ। ২০৩০ সালে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় দাঁড়াবে ৫ হাজার ৪৭৯ ডলারের বেশি। ২০৪১ সালে উন্নত দেশ হিসেবে বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড়াবে বাংলাদেশ। দারিদ্র্যের হার নেমে আসবে শূন্যের কোটায়। দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ ॥ ইশতেহার ঘোষণায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাঁর জিরো টলারেন্স নীতির কথা পুনর্বার তুলে ধরেছেন। এতে বলা হয়, জঙ্গীবাদ, মাদক ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে। আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করব। দুর্নীতি প্রতিরোধে দুর্নীতি দমন কমিশনকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম জোরদার করা হবে। আধুনিক তথ্য ও প্রযুক্তি চালুর মাধ্যমে দুর্নীতির পরিধি ক্রমান্বয়ে শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনা হবে। এছাড়া জঙ্গীবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, সন্ত্রাস ও মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতির প্রতি আমাদের দৃঢ় অবস্থান অব্যাহত থাকবে। সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, দখলদারি বন্ধে সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করা হবে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও মর্যাদা সমুন্নত থাকবে ॥ আইনের শাসন ও মানবাধিকার সুরক্ষা সম্পর্কিত বিষয়ে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ দেশে আইনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠার দীর্ঘ সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছে। বিচার বিভাগে অবকাঠামোগত উন্নয়ন, বিচারক নিয়োগের পদ্ধতির স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ, বিচারকদের জন্য যৌক্তিক বেতন কাঠামো ও সুযোগ-সুবিধা নির্ধারণ, গ্রাম আদালত প্রতিষ্ঠা, বিরোধ নিরসনে বিকল্প পদ্ধতির ব্যবহার এবং সাধারণ মানুষের জন্য ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার কাজ এগিয়ে চলছে। এতে বলা হয়, আওয়ামী লীগ সরকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকারীদের বিচার, জাতীয় চার নেতার হত্যার বিচার, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার বিচার, বিডিআর হত্যাকান্ডের বিচার করেছে এবং গ্রেফতারকৃত দ-িতদের বিচারের রায় কার্যকর করেছে। নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠনের সুযোগ পেলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সংরক্ষণ ও মর্যাদা সমুন্নত রেখে প্রত্যেক নাগরিকের আইনের আশ্রয় ও সাহায্য-সহায়তা লাভের সুযোগ-সুবিধা অবারিত করা হবে। সর্বজনীন মানবাধিকার সুনিশ্চিত করার পাশাপাশি মানবাধিকার লঙ্ঘনের যে কোন প্রচেষ্টা প্রতিহত করা হবে। মানবাধিকার কমিশনের স্বাধীনতা ও কার্যকারিতা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে।
×