ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ক্ষমতায় গেলে ব্যাংক জালিয়াতির সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার ঘোষণা প্রধানমন্ত্রীর

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৮

ক্ষমতায় গেলে ব্যাংক জালিয়াতির সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার ঘোষণা প্রধানমন্ত্রীর

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফের ক্ষমতায় গেলে ব্যাংক খাতের জালিয়াতির সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণের ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ওপর বাংলাদেশ ব্যাংকের চলমান তদারকি ও নিয়ন্ত্রণ অধিকতর কার্যকর ও শক্তিশালী করা হবে। ঋণসহ ব্যাংক জালিয়াতি কঠোর হস্তে দমন এবং সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারী, ঋণ গ্রাহক ও দোষীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। মঙ্গলবার রাজধানীর হোটেল প্যান প্যাসেফিক সোনারগাঁওয়ে ঘোষিত আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে ব্যাংক ও আর্থিক খাতের উন্নয়নের লক্ষ্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা আরও বলেন, খেলাপী ঋণের পরিমাণ কমিয়ে আনার এবং দেউলিয়া আইন বাস্তবায়নে টেকসই ও কার্যকর পদ্ধতি নির্ণয় করা হবে। বাজার ব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত না করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিচক্ষণতার সঙ্গে নির্দিষ্ট পদ্ধতি ব্যবহার করে সুদের হার নিয়ন্ত্রণে রাখবে। ঋণ অনুমোদন ও অর্থ ছাড়ে দক্ষতা এবং গ্রাহকের প্রতি ব্যাংকের দায়বদ্ধতা পরীবিক্ষণের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক পদক্ষেপ নেবে। সরকারী চাকরিতে মেধা ও যোগ্যতা বিবেচনা ॥ সরকারী চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর বিষয়ে মেধা ও যোগ্যতা বিবেচনায় রেখে বাস্তবতার নিরিখে যুক্তিসঙ্গত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এই অঙ্গীকার নিয়ে ‘তারুণ্যের শক্তি-বাংলাদেশের সমৃদ্ধি : তরুণ-যুবসমাজকে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর ও কর্মসংস্থানে নিশ্চয়তা’ প্রতিশ্রুতি দিয়ে আওয়ামী লীগের ইশহেতার ঘোষণা করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের যাত্রায় যুক্ত করা হবে তরুণদের। মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়নে নেয়া হবে তরুণদের বক্তব্য। জাতীয় যুবনীতির বাস্তবায়নে অগ্রগতি পরীবিক্ষণেও যুক্ত করা হবে, সমাজের সকল স্তরের তরুণের। ইশতেহারে তারুণ্যের শক্তিকে জোর দিয়ে বাংলাদেশের সমৃদ্ধির অঙ্গীকার করা হয়েছে। ইশতেহারে বলা হয়েছে, যুবসমাজ দেশের মূল্যবান সম্পদ। বাংলাদেশের মোট এক-তৃতীয়াংশ যুবসমাজ। সোনার বাংলার স্বপ্ন বাস্তবায়ন ও ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রধানতম শক্তিও যুবশক্তি। দেশের এই যুবগোষ্ঠীকে সুসংগঠিত সুশৃঙ্খল এবং উৎপাদনমুখী শক্তিতে রূপান্তরের লক্ষ্য অর্জনে আওয়ামী লীগ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। যুব উন্নয়নে আমাদের অগ্রাধিকার যুবদের মানসম্মত শিক্ষা, দক্ষতা বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ও সুস্থ বিনোদনের ব্যবস্থা, রাজনৈতিক ও নাগরিক ক্ষমতায়ন এবং সন্ত্রাস, সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গীবাদ ও মাদকমুক্ত সমাজ। এ লক্ষ্য ও পরিকল্পনার কথা তুলে বিগত ১০ বছরের সাফল্য ও অর্জনগুলো কথা উল্লেখ করা হয়। ইশতেহারে বলা হয়েছে, একটি সুচিন্তিত কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের মাধ্যমে জাতীয় যুবনীতি পুরোপুরিভাবে বাস্তবায়ন করা হবে। তরুণদের কল্যাণ ও উন্নয়ন কাজে প্রশাসনিক গতি আনতে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের আওতায় গঠন করা হবে পৃথক যুব বিভাগ। জাতীয় বাজেটে বাড়ানো হবে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের আর্থিক বরাদ্দ। জেন্ডার বাজেটের আলোকে প্রণয়ন করা হবে বার্ষিক যুব বাজেট। তরুণদের সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা করার জন্য গঠন করা হবে যুব মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন যুব গবেষণা কেন্দ্র। সরকারী চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর বিষয়ে মেধা ও যোগ্যতা বিবেচনায় রেখে বাস্তবতার নিরিখে যুক্তিসঙ্গত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। প্রতিটি উপজেলায় যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ দেয়ার পাশাপাশি এই কেন্দ্রগুলোকে পর্যায়ক্রমে তরুণ কর্মসংস্থান কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার অঙ্গীকার করা হয়। জাতীয় পর্যায়ে স্বল্প মধ্যম ও উচ্চ শিক্ষিত তরুণদের তথ্য সংবলিত একটি ইন্টিগ্রেটেড ডাটাবেইজ তৈরি করা হবে। এর মাধ্যমে সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের প্রয়োজন ও তরুণদের যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরির জন্য আবেদন করার আহ্বান জানাতে পারবে। ইশতেহারে বলা হয়েছে, কর্মসংস্থানে কৃষি শিল্প ও সেবার অংশ যথাক্রমে ৩০, ২৫ ও ৪৫ শতাংশে পরিবর্তন করা হবে। ২০২৩ সালনাগাদ অতিরিক্ত ১ কোটি ৫০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির পদক্ষেপ গৃহীত হয়েছে। এছাড়াও উক্ত সময়ে নতুনভাবে ১ কোটি ১০ লাখ ৯০ হাজার মানুষ শ্রমশক্তিতে যুক্ত হবে। আত্মকর্মসংস্থান ও তরুণ উদ্যোক্তা তৈরির পরিকল্পনার কথা তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, তরুণদের মধ্যে উদ্যোক্তা হওয়া প্রবণতা ও আত্মকর্মসংস্থান বৃদ্ধি করতে কর্মসংস্থান ব্যাংকের মাধ্যমে বিনা জামানতে ও সহজ শর্তে জনপ্রতি দুই লাখ পর্যন্ত ঋণ সুবিধা ইতোমধ্যে প্রদান করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে এ সুবিধা আরও বিস্তৃত করা হবে। এতে আরও বলা হয়, স্বল্প খরচে তরুণদের কাছে ইন্টারেনটসহ বিভিন্ন তথ্যপ্রযুক্তির সুবিধা পৌঁছে দিতে ইয়ুথ প্লান চালু করা হবে। উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী ও জঙ্গীবাদের প্রথম লক্ষ্য যুবসমাজকে আকৃষ্ট করা। এই যুবসমাজ যাতে আদর্শিক ভ্রান্তিতে মোহাবিষ্ট হয়ে জঙ্গী তৎপরতায় যুক্ত না হয়, সেজন্য কাউন্সিলিং এবং তাদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক চেতনার বিকাশকে ত্বরান্বিত করা হবে। তরুণদের মাদকের ছোবল ভয়াল আসক্তি থেকে মুক্ত করতে প্রতিটি জেলায় একটি করে সরকারী মাদকাসক্তি নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্র করা ও বেসরকারী কেন্দ্রগুলোর জন্য সরকারী অনুদান বাড়ানো হবে। প্রতিটি জেলায় একটি করে যুব স্পোর্টস গড়ে তোলা হবে।
×