ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নৌকার পক্ষে ভোট চাওয়ার সিদ্ধান্ত

প্রধানমন্ত্রীকে আজ এফবিসিসিআই সংবর্ধনা জানাবে

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৮

প্রধানমন্ত্রীকে আজ এফবিসিসিআই সংবর্ধনা জানাবে

এম শাহজাহান ॥ দেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায় আওয়ামী লীগকে সমর্থন জানিয়ে নৌকা মার্কার পক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে ভোট চাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ লক্ষ্যে আজ বুধবার এফবিসিসিআইয়ের উদ্যোগে ‘শান্তি ও সমৃদ্ধির পথে বাংলাদেশ’ শীর্ষক ব্যবসায়ী সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সংবর্ধনা দেয়া হবে। এরপরই দেশব্যাপী আনুষ্ঠানিকভাবে নৌকার পক্ষে ভোট চেয়ে প্রচার চালাবে ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের এই অনুষ্ঠানে সারাদেশ থেকে বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ী নেতাদের যোগ দেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবারও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় প্রধানমন্ত্রীকে শেখ হাসিনাকে দেখতে চায় ব্যবসায়ী গোষ্ঠী। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারাবাহিকতা, প্রবৃদ্ধি দুই ডিজিটে নিয়ে যাওয়া, বেসরকারী বিনিয়োগ আকৃষ্টে সরকারী বিনিয়োগ বৃদ্ধি, দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তর এবং টেকসই স্থায়িত্ব উন্নয়নে ৯০০ বিলিয়ন ডলারের অর্থ সংস্থান, রফতানি বাড়াতে কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার এবং বৈদেশিক কর্মসংস্থান বাড়াতে আবারও আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় থাকা দরকার বলে মনে করছে এফবিসিসিআই। সরকারের ধারাবাহিকতা নষ্ট হলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অর্জন বাধাগ্রস্ত হওয়ারও আশঙ্কা করছে এই সংগঠনটি। এ কারণে আগামী সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনাকেই ফের সরকার গঠনের সুযোগ দিতে নৌকা মার্কায় ভোট প্রয়োজন। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মোঃ সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন জনকণ্ঠকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অদম্য চেষ্টার অর্জন হচ্ছে আজকের অর্থনীতি। বেসরকারী বিনিয়োগ আনতে হলে অবকাঠামো উন্নয়ন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। বিশেষ করে পোর্ট উন্নয়ন, বিদ্যুত উৎপাদন, গ্যাসের সরবরাহ বৃদ্ধি, সড়ক, মহাসড়ক উন্নয়ন এবং ঢাকা শহর যানজট মুক্ত করা জরুরী হয়ে পড়ছে। এছাড়া প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা রক্ষা, মধ্যম আয়ের দেশে বাংলাদেশকে নিয়ে যাওয়া এবং এসডিজি অর্জনের মতো চ্যালেঞ্জ রয়েছে সামনে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা এবং সকল প্রতিকূলতাকে উপেক্ষা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। তাঁর এই অদম্য চেষ্টার ফলে দেশের অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, সরকারের ধারাবাহিকতা না থাকলে যেসব পরিকল্পনা ও উদ্যোগ বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে তা বাধাগ্রস্ত হওয়ার বড় ধরনের ঝুঁকি রয়েছে। আর এ কারণেই ব্যবসায়ী সম্প্রদায় মনে করে দেশের স্বার্থে আওয়ামী লীগকে ফের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসা প্রয়োজন। তিনি বলেন, এসব দিক বিবেচনা করেই ব্যবসায়ীরা আজ বুধবার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে নৌকার পক্ষে ভোট চেয়ে প্রচার চালাবে। ইতোমধ্যে সারাদেশের ব্যবসায়ী নেতৃত্বকে এ বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে। সবাই এফবিসিসিআইয়ের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া, সারাদেশের ব্যবসায়ীরা সম্মেলনে যোগ দিতে ঢাকা এসে পৌঁছেছেন। এফবিসিসিআই সভাপতি আরও জানান, ব্যবসায়ী এই সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রধান অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আশা করছি, প্রধানমন্ত্রীও দেশের ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখবেন। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি রাজধানীর ফার্মগেট কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে ‘হ্যাশট্যাগ আই অ্যাম বাংলাদেশ বা আমিই বাংলাদেশ’ প্রচারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নৌকার পক্ষে ভোট প্রার্থনা করে এফসিসিসিআই। প্রচারের এই উদ্যোগে এফবিসিসিআইয়ের সঙ্গে রয়েছে দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি এমসিসিআই, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি ডিসিসিআই ও পোশাক মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ। এছাড়া হ্যাশট্যাগের মূল উদ্দেশ্য দেশের তরুণ সম্প্রাদায়ের প্রথম ভোট মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার পক্ষের শক্তির জন্য আহ্বান করা। তাদের ভোট উন্নয়নের স্বার্থে হোক, শান্তির পক্ষে হোক। জানা গেছে, উন্নয়নের স্বার্থে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারকে সব ধরনের সহযোগিতারও আশ্বাস দিয়েছে এফবিসিসিআই। এছাড়া তরুণ ও নতুন ভোটারদের কাছে আগামী ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে ভোট চেয়েছেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। ওই অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ৩০ ডিসেম্বর উন্নয়নের পক্ষে সবাই ভোট দেবেন। আমরা সবাই জানি কোথায় ভোট দেব। অবশ্যই নৌকায় ভোট দেব। এদিকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, যেকোন জাতীয় নির্বাচনে ব্যবসায়ীদের সমর্থন একটি বড় ব্যাপার। দেশের ব্যবসায়ীগোষ্ঠী যে দলকে সমর্থন জানায় শেষ পর্যন্ত সেই দলই সরকার গঠনের সুযোগ পায়। প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নির্বাচনী প্রচারে ব্যবসায়ীদের সমর্থন পেয়েছিলেন। পরবর্তীতে বিপুল জনসমর্থন ও ভোট পেয়ে তিনি সরকার গঠন করতে সক্ষম হোন। একই ফল দেখা গেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ নির্বাচনে। ডোনাল্ট ট্রাম নিজে ব্যবসায়ী এবং নির্বাচনী প্রচারেও তিনি ব্যবসায়ীদের সমর্থন আদায় করতে সক্ষম হন। ডোনান্ড ট্রাম এখন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায়। জনশ্রুতি রয়েছে, মালয়েশিয়ার সর্বশেষ নির্বাচনেও মাহাথির মোহাম্মদ ব্যবসায়ীদের সমর্থন পেয়েছিলেন। বিশ্বের বয়োজেষ্ঠ্য রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে মাহাথিরের নাম ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছে।
×