ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্যাট্রিক ব্রাউনের ক্যামেরায় রোহিঙ্গাদের বেদনার আখ্যান

প্রকাশিত: ০৬:০২, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৮

প্যাট্রিক ব্রাউনের ক্যামেরায় রোহিঙ্গাদের বেদনার আখ্যান

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দীর্ঘ সঙ্কুল পথ পাড়ি দিয়ে পাড়ে ভিড়েছে নৌকা। এই যাত্রার পদে পদে ছিল মৃত্যুর হাতছানি। অপেক্ষা করছিল নির্মম নিষ্ঠুরতার নানা আয়োজন। সেই নিশ্চিত মৃত্যুকে পেরিয়ে জীবনকে ফিরে পাওয়ার শঙ্কাহীন অভিব্যক্তি এসে জুড়ে বসেছে তরুণীর মুখাবয়বে। তাই তো পাড়ে ভেড়া থেকে নৌকা ছেড়ে দ্রুতগতিতে নিরাপদ গন্তব্যের পানে ছুটেছে সেই রোহিঙ্গা তরুণী। আরেকটি আলোকচিত্রে দৃশ্যমান বিশাল আকাশের শূন্যতা। অসীম সেই শূন্যতার নিচে বয়ে চলেছে তরী। সেই নৌকায় চড়েছে অনিশ্চিতের পথে যাত্রা করা একঝাঁক নারী ও শিশু। প্রত্যেকের চোখের ভাষায় দেশহারা হওয়ার বেদনা। হতবিহ্বল মুখগুলোয় ভুলুণ্ঠিত মানবতার যাতনাময় চিহ্ন। শিশুদের চোখগুলোয় ভাসছে অনিশ্চিত জীবনের আকুতি। পাশের ছবিতে একমুঠো খাবারের আশায় বাটি হাতে জড়ো হয়েছে শিশুর দল। প্রতিটি শিশু চোখে-মুখে ক্ষুধার ছাপ। মাটির সড়কের দুই পাশে ছোট ছোট ছাপড়া ঘর। বৃষ্টিতে ভিজে কর্দমাক্ত ওই সড়ক পার হচ্ছে হাফ প্যান্ট পরা উদোম শরীরের এক মেয়ে শিশু। এভাবেই প্রতিটি ছবিতে উঠে এসেছে দেশহারা মানুষের দুর্দশার চিত্র। ফ্রেমবন্দী হয়েছে বলপূর্বক রাষ্ট্রচ্যুত হয়ে মানবিক সঙ্কটে পড়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বেদনার আখ্যান। এই ছবিগুলো তুলেছেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্রিটিশ আলোকচিত্রী প্যাট্রিক ব্রাউন। সেসব ছবি নিয়ে ধানম-ির আলিয়ঁস ফ্রঁসেস দো ঢাকার লা গ্যালারিতে চলছে আলোকচিত্র প্রদর্শনী। শিরোনাম ‘দেশত্যাগ’। যৌথভাবে এ প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে ইউনিসেফ বাংলাদশ ও আলিয়ঁস ফ্রঁসেস। প্রদর্শনীটি দর্র্শনার্থীদের এ কথাই মনে করিয়ে দেয় যে, রোহিঙ্গাদের এই মানবিক সঙ্কট সহসাই শেষ হচ্ছে না। মার্কিন আলোকচিত্র প্যাট্রিক ব্রাউনের এক বছর ধরে তোলা এসব ছবিতে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ব্যাপক হারে আগমনের শুরুর সময়, তাদের দৃঢ়তা, তাদের আশ্রয় প্রদানকারী স্থানীয় জনগোষ্ঠী, জরুরী পরিস্থিতি মোকাবেলায় গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ এবং রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তার বিষয়গুলো ফুটে উঠেছে প্রদর্শনীতে। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে বাংলাদেশে আশ্রয়দান প্রসঙ্গে প্যাট্রিক ব্রাউন বলেন, এ সমস্যা ১৯৭১ সালের নয়। এটা ২০১৭ সালে শুরু হওয়া সমস্যা। কিন্তু তার সমাধানে অনেক দেশ নিশ্চুপ। এটা যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ড, কানাডার সঙ্গে হতো তারা এত বিশাল জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দিত না। বাংলাদেশ অসাধারণ মানবিকতার পরিচয় দিয়েছে। প্রদর্শনীর ছবিগুলো শুধু বিপদগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর অসহায়ত্ব ও হতাশাই তুলে ধরেনি, একইসঙ্গে এটি নৈমিত্তিক জীবনে ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে তাদের মনোবলকেও তুলে ধরেছে; যেখানে মৌলিক প্রয়োজনগুলো মেটানোর জন্য খুব সামান্য সহায়তাই তারা পাচ্ছে। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে এই সঙ্কটের ভেতর থেকে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর মাঝে বাস্তুচ্যুতি ও নির্মমতার স্মৃতি এখনও দগদগে। এদের মধ্যে অনেকে আগের দফায় সীমান্ত অতিক্রম করে আসা এবং কক্সবাজারের ঘনবসতিপূর্ণ ও প্রায় অস্বাস্থ্যকর ক্যাম্পের ভেতরে গড়ে তোলা আশ্রয়কেন্দ্রে তাদের বসবাস। রোহিঙ্গাদের দুর্দশা ও অমানবিকতার সেসব ছবি দিয়ে সাজানো হয়েছে দেশত্যাগ শিরোনামের প্রদর্শনীটি। প্যাট্রিক ব্রাউন ‘থ্রিপি ফটোগ্রাফার এ্যাওয়ার্ড,’ ‘ওয়ার্ল্ড প্রেস এ্যাওয়ার্ড,’ ‘পিকচার অব দ্য ইয়ার এ্যাওয়ার্ড,’ ‘নিউইয়র্ক ফটোগ্রাফিক বুক এ্যাওয়ার্ডসহ অসংখ্যা আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছেন। ‘দ্য নিউইয়র্কার টাইম,’ ‘নিউজউইক,’ ‘ভ্যানিটি ফেয়ার,’ ‘ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক,’ ‘ইন্টারন্যাশনাল হেরাল্ড ট্রিবিউিনসহ বেশ কিছু নামী প্রকাশনায় তার কাজ জায়গা করে নিয়েছে। প্যাট্রিক ব্রাউনের এই প্রদর্শনীটির সূচনা হয় ১০ ডিসেম্বর। [জঞঋ নড়ড়শসধৎশ ংঃধৎঃ: }থএড়ইধপশ[জঞঋ নড়ড়শসধৎশ বহফ: }থএড়ইধপশযৌথভাবে প্রদর্শনীটির উদ্বোধন করবেন ইউনিসেফ বাংলাদেশর শুভচ্ছো দূত ও ক্রিকেট তারকা সাকিব আল হাসান এবং ইউনিসেফ বাংলাদেশের প্রতিনিধি এডওয়ার্ড বেগবেদার। প্রদর্শনীটি চলবে ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত। সোম থেকে বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা এবং শুক্র ও শনিবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা এবং বিকেল ৫টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দর্শার্থীদের জন্য খোলা থাকবে।
×