ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পাবনা-৫ আসন

জামায়াত-বিএনপি টানাপোড়েন

প্রকাশিত: ০৬:৫৮, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৮

জামায়াত-বিএনপি টানাপোড়েন

নিজস্ব সংবাদদাতা, পাবনা, ১৮ ডিসেম্বর ॥ পাবনা-৫ আসনের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী গোলাম ফারুক প্রিন্স প্রচারে ঝড় তুলেছেন। পাবনা পৌর এলাকার অলিগলিসহ প্রতিটি ইউনিয়নে নৌকার পোস্টারে ছেয়ে গেছে। ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত অবিরাম গতিতে দলে দলে বাড়িতে বাড়িতে চলছে নৌকা প্রতীকের ভোট প্রার্থনা। আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা জোটবদ্ধ হয়ে নৌকা প্রতীকের বিজয় নিশ্চিত করতে চষে বেড়াচ্ছেন। পাশাপাশি ব্যক্তি উদ্যোগে স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে সাধারণ মানুষ নৌকা প্রতীকের পক্ষে গ্রামগঞ্জে ভোট চাওয়ায় এ আসনটিতে নৌকা প্রতীকের নির্বাচনে যেন নতুনমাত্রা যোগ হয়েছে। এ আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী গোলাম ফারুক প্রিন্স গত দুইবার সংসদ সদস্য থাকাকালীন গ্রামগঞ্জে ব্যাপক উন্নয়ন করায় ভোটের মাঠে সাধারণ মানুষের ব্যাপক সমর্থন আদায় করায় তার নির্বাচন খুব সহজ হয়ে পড়েছে। দলীয় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের ভোট প্রার্থনায় সম্পৃক্ত হওয়ায় নৌকার গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে এ আসনটিতে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে প্রার্থী হয়েছেন জামায়াত নেতা অধ্যক্ষ ইকবাল হোসাইন। তার প্রচার তেমন জমছে না। শহরে ২/১ টি জায়গায় তার পোস্টার দেখা মিললেও আর কোথায় ও তার দেখা নেই। গ্রামগঞ্জে একই অবস্থা দেখা যাচ্ছে। জামায়াত নেতাকর্মীদের জোটবদ্ধ হয়ে ভোটের প্রচারে দেখা মিলছে না। অন্যদিকে জামায়াত নেতার পক্ষে প্রচারে বিএনপি নেতাকর্মীদেরও অংশগ্রহণ দেখা যাচ্ছে না। এ আসনটিতে মনোনয়ন নিয়ে জামায়াত-বিএনপির মধ্যে যে টানাপোড়েন সৃষ্টি হয় তা এখনও দৃশ্যমান। বিএনপি এ আসনটিতে দলীয় চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত সহকারী এ্যাডভোকেট শামছুর রহমান শিমুল বিশ^াসকে মনোনয়ন দেয়। অন্যদিকে জামায়াত আসনটিতে ইসলামিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ জামায়াত নেতা মওলানা ইকবাল হোসাইনকে দলীয় মনোনয়ন দেয়। বিএনপির পক্ষে শামসুর রহমান শিমুলকে প্রার্থী করে মনোনয়ন জমা দেয়া হয়। এরপর কেন্দ্র জামায়াত নেতা অধ্যক্ষ ইকবাল হোসাইনকে দল থেকে ধানের শীষ দিয়ে নির্বাচন কমিশনে চিঠি পাঠানো হলে শামসুর রহমান শিমুল বিশ^াসের প্রার্থিতা বাতিল হয়। জামায়াত নেতার ধানের শীষের প্রার্থী হওয়ায় এ আসনটিতে শিমুল বিশ^াসের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার নিয়ে নানা অনিশ্চিয়তার সৃষ্টি হয়। বিএনপি নেতাকর্মীরা এ নিয়ে ক্ষোভ অসন্তোষের কারণে ধানের শীষের প্রার্থী জামায়াত নেতা ইকবাল হোসাইনের পক্ষে এখন পর্যন্ত মাঠে কাউকে দেখা যাচ্ছে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নেতাকর্মী জানিয়েছেন জামায়াত নেতা ইকবাল হোসাইন তাদের নেতাকর্মীদের নির্বাচনী প্রচারে সম্পৃক্ত করতে সেভাবে ডাকছেন না। তবে বিএনপি আসনটি নিয়ে ভবিষ্যতের রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ মেলাতেই জামায়াতের পক্ষে সরাসরি ভোট করছেন না বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। জামায়াত আসনটিতে বিজয়ী হলে আগামীতেও তাদের কব্জাতেই থাকবে বলে বিএনপি ঘরানার হিসাব-নিকাশ চলছে। তাই সেক্ষেত্রে দলীয় চেয়ারপার্সনের ব্যক্তিগত সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ^াসের এ আসনটিতে আর নির্বাচনের সুযোগ হবে না। তাই বিএনপি কখনও চাইবে না আসনটিতে জামায়াত প্রার্থী এমপি হোক। শুধু তাই নয়, জামায়াত নেতা যত বেশি ভোটের ব্যবধানে হারবে ততই যেন বিএনপির জন্য লাভ হবে বলে নানান রকম সমীকরণ হচ্ছে। দলীয় কর্মীদের অভিমত, ব্যাপক ভোটের ব্যাবধানে ইকবাল হোসাইন হারলে আগামীতে আর জামায়াত আসনটি দাবি করতে পারবে না । সেক্ষেত্রে আগামীতে শিমুল বিশ^াসই বিএনপির প্রার্থী হতে পারবে। অন্যদিকে বিএনপির অপর গ্রুপ পৌর মেয়র কামরুল হাসান মিন্টুর পক্ষের ভোটও নৌকার দিকে যাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে এ আসনটিতে আওয়ামী লীগ প্রার্থী গোলাম ফারুক প্রিন্সের বিপুল ব্যবধানে বিজয়ী হওয়া এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। আসনটিতে যারা প্রার্থী রয়েছেন তারা হলেন জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের আব্দুল কাদের খান কদর, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের হাত পাখা প্রতীকের প্রভাষক আরিফ বিল্লাহ, এনপিবির আম মার্কা নিয়ে প্রার্থী হয়েছেন আবু দাউদ। এদের মধ্যে জাতীয় পার্টির ও ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের প্রার্থীর প্রচার মাঝে মধ্যে দেখা যাচ্ছে।
×