ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রুহিয়া খানম;###;বছরটিতে ২০ ওয়ানডে ম্যাচ খেলে ১৩টিতেই জয় পেয়েছে বাংলাদেশ ;###;হেরেছে ৭ ম্যাচে য় বাংলাদেশের ওপরে আছে শুধু ভারত ও ইংল্যান্ড

ওয়ানডেতে আরেকটি সাফল্যময় বছর

প্রকাশিত: ০৭:৩৩, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৮

ওয়ানডেতে আরেকটি সাফল্যময় বছর

বাংলাদেশ ক্রিকেটের উন্নতির মূল চিত্রটা ফুটে ওঠে ২০১৫ সালে। সেই সময় ওয়ানডেতে স্বর্ণময় বছর কাটায় বাংলাদেশ। এবার আবারও স্বর্ণময় বছরই কাটাল বাংলাদেশ। সেবারও ১৩ জয় মিলেছিল। এবারও ১৩ জয় মিলেছে। জয়-হারের দিক দিয়ে এ বছর তৃতীয় সেরা দল হয়েছে মাশরাফিবাহিনী। বছরটিতে ২০ ওয়ানডে ম্যাচ খেলে ১৩টিতেই জয় তুলে নিয়েছে। হেরেছে ৭টি ম্যাচে। বাংলাদেশের ওপরে আছে শুধু ভারত ও ইংল্যান্ড। ভারত এক ম্যাচ বেশি জিতেছে। ইংল্যান্ড চার ম্যাচ বেশি জিতেছে। আফগানিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা, আয়ারল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, পাকিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, শ্রীলঙ্কা, স্কটল্যান্ড, জিম্বাবুইয়ে, সংযুক্ত আরব আমিরাত, অস্ট্রেলিয়া, হংকং, নেপাল, হল্যান্ড, পাপুয়া নিউ গিনি পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশের নিচে অবস্থান পেয়েছে। ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সাফল্য এ বছর ঈর্ষণীয়ই হয়েছে। বছরটি শুরুই হয় জয় দিয়ে। শেষও হয় জয় দিয়েই। ১৫ জানুয়ারি বছরের প্রথম ম্যাচে জিম্বাবুইয়েকে হারায় বাংলাদেশ। ১৪ ডিসেম্বর বছরের শেষ ওয়ানডেতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারায় বাংলাদেশ। মাঝপথে জিম্বাবুইয়ে, শ্রীলঙ্কা, ওয়েস্ট ইন্ডিজকে একাধিকবার ও পাকিস্তানকেও হারায় বাংলাদেশ। বছরের শুরুতেই তিনজাতি সিরিজের ফাইনালে খেলে। সেপ্টেম্বরে সংযুক্ত আরব আমিরাতে এশিয়া কাপের ফাইনালেও খেলে বাংলাদেশ। দ্বিপক্ষীয় সিরিজের দিক দিয়েতো বাংলাদেশ ঈর্ষা জাগায়। তিনটি দ্বিপক্ষীয় সিরিজ খেলে সবকটিতেই জিতে বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বছরের প্রথম দ্বিপক্ষীয় সিরিজে ২-১ ব্যবধানে জিতে। মাঝপথে জিম্বাবুইয়েকে ৩-০ ব্যবধানে হারিয়ে বছরের শেষে আবার ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ২-১ ব্যবধানে সিরিজে হারায়। কি দুর্দান্ত বছর কাটাল বাংলাদেশ। এখন সামনে তা ধরে রাখার পালা। সামনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ আছে। বিশ্বকাপ আছে। বাংলাদেশ সঠিক পথেই আছে বলে মনে করেন ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। ২০১৫ বিশ্বকাপের পর থেকে বাংলাদেশ সঠিক পথে এগোচ্ছে বলে মনে করেন তিনি। ১২টি দ্বিপাক্ষিক ওয়ানডে সিরিজের আটটিতেই জয় অধিনায়কের কাছে এগিয়ে চলার সবচেয়ে বড় প্রমাণ। এই সময় জিম্বাবুইয়ে ও ওয়েস্ট ইন্ডিজকে দুইবার করে সিরিজে হারায় মাশরাফির দল। একবার করে হারায় ভারত, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা ও আফগানিস্তানকে। শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ড্র করে একটি সিরিজ। গত বিশ্বকাপের পর দেশের মাটিতে বাংলাদেশ হেরেছে কেবল একটি সিরিজ, ২০১৬ সালে ইংল্যান্ডের কাছে। সেই বছর নিউজিল্যান্ড সফরে হোয়াইটওয়াশ হয়েছিল মাশরাফির দল। পরের বছর একই অভিজ্ঞতা হয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে। সিলেটে তৃতীয় ওয়ানডেতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে উড়িয়ে দিয়ে চলতি বছরে টানা তৃতীয় সিরিজ জয় পায় বাংলাদেশ। মাশরাফি জানান, ১২টি সিরিজের মধ্যে আটটি জিতলে যেটা হয়, আত্মবিশ্বাস ভাল থাকে। পাশাপাশি অগ্রগতিও পরিষ্কার। আমরা ঠিক পথেই আছি। সঙ্গে যোগ করেন, সামনে নিউজিল্যান্ড সিরিজ আছে। আমাদের জন্য সিরিজটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। গতবার আমরা ওদের ওখানে গিয়ে হেরে এসেছি। আমার কাছে মনে হয়, এবার আমাদের দল আরও ব্যালান্সড। আমার বিশ্বাস, আগেরবারের চেয়ে ভাল খেলব। বিশ্বকাপের জন্য কিছুটা হলেও আদর্শ হবে। যদিও কন্ডিশন কিছুটা ভিন্ন। তবুও ভাল হবে। কিন্তু এই পথচলায় কতদিন আর থাকবেন মাশরাফি। তার নেতৃত্বগুণ আর ক্রিকেটারদের অক্লান্ত পরিশ্রমেই এ সাফল্যগুলো মিলেছে। তিনি যদি ২০১৯ সালের বিশ্বকাপের পর না থাকেন তাহলে কী স্বর্ণময় বছরগুলো দেখার মিলবে? মাশরাফি জানান, সত্যি বলতে, ২০১১ থেকে প্রতি ম্যাচ খেলার সময়ই আমার মনে হয়, আবার যদি হাঁটুতে লেগে যায় যেটা আগেও হুট করে হয়েছে, তাহলে এমনিতেও শেষ। ২০১১ থেকেই এ রকম মনে হয়। আপনি যে অর্থে বলেছেন, সত্যি বলতে একদম গভীর থেকেই সত্যি কথাই বলছি, মনের কথাই বলেছি যে কখনও এত গভীরভাবে ভাবিনি। কারণ সামনে আরও চ্যালেঞ্জ আছে। সে সব নেয়ার জন্য আরও প্রস্তুত হতে চাই। সঙ্গে যোগ করেন, বিশ্বকাপের পর কি করব, সেটা বিশ্বকাপের শেষ ম্যাচ খেলার পর ঠিক করব। যদি মনে হয় খেলব না, তাহলে সেদিনই জানিয়ে দেব। বা হয়তো ঘরে এসে বলব। আর যদি মনে হয় খেলতে পারছি, এসে রিভিউ করে আপনাদের জানাব। তো এখন আপনারা বিভ্রান্ত হবেন না। শুধু দলের জয়েই নয়, ক্রিকেটারদেরও ভাল বছর কেটেছে। দল হিসেবে বাংলাদেশ যেমন সেরাদের তালিকায় আছে, তেমনি খেলোয়াড় হিসেবে সেরাদের তালিকায় স্থান পেয়েছেন তামিম ইকবাল, মাশরাফি বিন মর্তুজা, মুস্তাফিজুর রহমানরাও। বছরের বাকি আরও অর্ধ মাস। কিন্তু এই সময়ে আর কোন ওয়ানডে খেলবে না বাংলাদেশ। এমনকি বছরটিতে আর কোন দলই কোন ওয়ানডে খেলবে না। ফলে এই সময়ের মধ্যে বিবেচনা করলে বাংলাদেশ আছে বছরের সেরা তিন দলের একটি হিসেবে। দলীয় সাফল্যের বছরে ব্যক্তিগত অর্জনেও খুব একটা পিছিয়ে নেই টাইগাররা। ওয়ানডেতে বছরের সেরা ১০ রান সংগ্রাহকদের তালিকার ১০ নম্বর স্থানে আছেন মুশফিকুর রহীম। ১৯ ম্যাচ খেলে তার রান ৭৭০। শীর্ষে থাকা কোহলির রান ১৪ ম্যাচে ১২০২। ১২ ম্যাচে ৬৮৪ রান নিয়ে তালিকার ১৪ নম্বর স্থানে আছেন টাইগার ওপেনার তামিম ইকবাল। আর ১৫ ম্যাচে ৪৯৭ রান নিয়ে ২৩তম স্থানে সাকিব আল হাসান। ওয়ানডেতে বছরের সেরা ব্যাটিং গড়ের তালিকায় ৩ নম্বর স্থানে আছেন তামিম ইকবাল। ১২ ম্যাচে ৮৫.৫০ গড়ে রান করেছেন তিনি। শীর্ষে থাকা বিরাট কোহলির গড় ১৩৩.৫৫। তালিকার ১১ নম্বরে আছেন ইমরুল কায়েস (৬২.২৮)। আর ১৯ নম্বরে আছেন মুশফিক (৫৫.০০)। ২০১৮ সালে ওয়ানডেতে সবচেয়ে বেশি পঞ্চাশোর্ধ ইনিংস খেলা ব্যাটসম্যানদের তালিকায় দুইয়ে আছেন তামিম ইকবাল। ১২ ম্যাচে তার পঞ্চাশোর্ধ ইনিংস মোট ৮টি। শীর্ষে থাকা কোহলির ঝুলিতে আছে ৯টি ইনিংস। ৬টি পঞ্চাশোর্ধ ইনিংস খেলে ১২তম স্থানে আছেন মুশফিক। ২০১৮ সালে ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহকদের তালিকায় র‌্যাঙ্কিংয়ের পঞ্চম স্থানে থাকা মুস্তাফিজুর রহমান আছেন ষষ্ঠ স্থানে। ১৮ ম্যাচে তার সংগ্রহ ২৯ উইকেট। শীর্ষে থাকা আফগান স্পিনার রশিদ খানের সংগ্রহ ২০ ম্যাচে ৪৮ উইকেট। ২৬ উইকেট নিয়ে তালিকার ১১তম স্থানে আছেন বাংলাদেশের ওয়ানডে দলপতি মাশরাফি। ১৫ ম্যাচে ২৩ উইকেট নিয়ে তালিকার ১৭তম স্থানে আছেন টাইগার পেসার রুবেল হোসেন। ১৯ ম্যাচে ২৩ ডিসমিসাল নিয়ে বছরের সেরা উইকেটরক্ষকদের তালিকায় ৬ নম্বরে আছেন মুশফিক। শীর্ষে আছেন ২৩ ম্যাচে ৩৫ ডিসমিসালের মালিক ইংলিশ উইকেটরক্ষক জস বাটলার। ২০১৮ সালে ৭ম উইকেট জুটিতে সর্বোচ্চ রানের মালিক বাংলাদেশের ইমরুল-সাইফউদ্দিন। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে গত অক্টোবরে ঢাকায় ১২৭ রানের জুটি গড়েছিলেন এই দুই টাইগার ব্যাটসম্যান। জুটিতে রানের বিচারে বছরের সেরাদের তালিকায় ৫ম স্থানে আছেন বাংলাদেশের ইমরুল কায়েস-সৌম্য সরকার জুটি। গত ২৬ অক্টোবর চট্টগ্রামে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে ম্যাচে এই দু’জনের দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ২২০ রান আসে। ২০৭ রান নিয়ে এই তালিকার ৯ম স্থানে আছে তামিম-সাকিব জুটি। গত জুলাইয়ে উইন্ডিজ সফরে এই কীর্তি গড়েছিলেন এই দুই অভিজ্ঞ তারকা। অধিনায়ক হিসেবে ২০১৮ সালে সবচেয়ে বেশি ওয়ানডে ম্যাচ খেলা ক্রিকেটারদের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে আছেন মাশরাফি। তিনি মোট ২০ ম্যাচে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ২২ ম্যাচে ইংলিশদের নেতৃত্ব দিয়ে সবার ওপরে আছেন ইয়ান মরগান। জয়ে শুরু হওয়া বছরটি জয় দিয়েই শেষ করতে চেয়েছেন অধিনায়ক মাশরাফি। বলেছিলেন, জয় দিয়ে শেষ করতে পারলে বেশ ভাল হবে। প্রথম ম্যাচের পর বলেছিলাম বছরের জয়ের যে হার তাতে জিততে পারলে খুব ভাল হবে। মাশরাফির সেই আশা পূরণ হয়েছে। আর তাতে করে স্বর্ণময় আরেকটি বছরও কাটিয়েছে বাংলাদেশ।
×