ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

কোহিনুর আক্তার

আলো ছড়িয়েই চলছেন সালাহ

প্রকাশিত: ০৭:৩৩, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৮

আলো ছড়িয়েই চলছেন সালাহ

মোহাম্মদ সালাহ। আরব ফুটবলের রূপকথার রাজপুত্র! মিসরের রাজধানী কায়রো থেকে ৮০ মাইল দক্ষিণে নাগরিগ শহরে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন। নাগরিগের সেই সালাহই আজ লিভারপুলের সালাহ হয়ে উঠেছেন। নতুন গল্প লিখেছেন মিসরের ইতিহাসের পাতায়। অসাধারণ পারফর্মেন্স উপহার দিয়ে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য এক উচ্চতায়। সম্প্রতি টানা দ্বিতীয়বারের মতো জিতেছেন আফ্রিকার বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার। গত সপ্তাহে ইতিহাস গড়ে এই পুরস্কার নিজের শোকেসে তুলেন লিভারপুলের মিসরীয় ফরোয়ার্ড। ইতিহাসের চতুর্থ ফুটবলার হিসেবে ব্যাক টু ব্যাক এই পুরস্কার জয়ের অবিশ্বাস্য কীর্তি গড়লেন তিনি। মূলত, ক্লাব আর জাতীয় দলের জার্সিতে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের স্বীকৃতি হিসেবেই ২০১৮ সালে আফ্রিকার বর্ষসেরা ফুটবলার নির্বাচিত হন সালাহ। ক্লাব সতীর্থ সাদিও মানে, নেপোলির রক্ষণসৈনিক কালিদো কৌলিবালি, জুভেন্টাসের মেধি বেনাটিয়া এবং এ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের মিডফিল্ডার থমাস পার্টেকে পেছনে ফেলেই সম্মানজনক এই পুরস্কার নিজের করে নেন তিনি। ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগের অন্যতম সেরা ক্লাব লিভারপুলের এই মিসরীয় ফরোয়ার্ড ২০১৭ সালেও আফ্রিকার বর্ষসেরার পুরস্কার জয়ের স্বাদ পেয়েছিলেন। তার আগে দুইবার এই পুরস্কার জিতেছিলেন নানকো কানু, জে জে ওকোচা ও ইয়াইয়া তোরে। এবার তাদের সেই রেকর্ডে ভাগ বসালেন লিভারপুলের মিসরীয় ফরোয়ার্ড। তার আগে মিসরীয় ফুটবলার হিসেবে এই পুরস্কার জিতেছিলেন মাত্র দুজন। তারা হলেন মোহাম্মদ বারাকাত ও মোহাম্মদ আবৌত্রিকা। লিভারপুলের ইতিহাসেও সালাহ প্রথম ফুটবলার হিসেবে এই পুরস্কার টানা দুইবার জিতেন। তার আগে একবার আফ্রিকার বর্ষসেরার খেতাব জিতেছিলেন লিভারপুলের সাবেক স্ট্রাইকার এল হাদি ডিউফ। ইতালিয়ান জায়ান্ট রোমা ছেড়ে ২০১৭ সালে ইংলিশ ক্লাব লিভারপুলে যোগ দেন সালাহ। গেল মৌসুমে অসাধারণ পারফরমেন্স প্রদর্শন করেছেন তিনি। নিজের প্রথম মৌসুমে ৫২ ম্যাচে লিভারপুলের জার্সিতে প্রতিনিধিত্ব করেন তিনি। এই সময়ে প্রতিপক্ষের জালে ৪৪ বার বল জড়ান সালাহ। এছাড়া ঐ আসরে উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লীগের ফাইনালও খেলেছেন তিনি। শুধুমাত্র ক্লাব ফুটবলেই উজ্জ্বল ছিলেন না সালাহ। জাতীয় দলের জার্সিতেও গেল মৌসুমে আলো ছড়িয়েছেন এই স্ট্রাইকার। তার নৈপুণ্যে ২৮ বছর পর বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ পায় মিসর। তাই গেল মৌসুমে পারফরমেন্সে বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার পেতে কোন সমস্যা হয়নি সালাহর। বর্ষসেরা খেলোয়াড় হতে পেরে দারুণ উচ্ছ্বসিত সালাহ। এই স্বীকৃতির অনুপ্রেরণা নিয়ে চলমান মৌসুমে আরও ভাল করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি। এ প্রসঙ্গে সালাহ বলেন, ‘আবারও কোন পুরস্কার জিতেছি। এই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। আমি খুবই খুশি। আগামী বছর আমি আবারও এই ট্রফি জিততে চাই। পাশাপাশি ক্লাবের জন্য শিরোপা জয় করাই আমার প্রধান লক্ষ্য।’ আফ্রিকার বর্ষসেরা ফুটবলার বাছাইয়ের জন্য নিজেদের ওয়েবসাইটে ভোটের আয়োজন করে বিবিসি। এ বছর রেকর্ড পরিমাণ ভোট পড়েছে এই ক্যাটাগরিতে। বর্ষসেরা খেলোয়াড় বেছে নিতে বিবিসির ওয়েবসাইটে প্রায় ৬ লাখ ৫০ হাজার ভোট পড়ে। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ফুটবল সাপোটার্স ফেডারেশন (এফএসএফ) ২০১৮ এর বর্ষসেরা খেলোয়াড়ও নির্বাচিত হন সালাহ। সার্জিও এ্যাগুয়েরো, রহিম স্টার্লিং, ইডেন হ্যাজার্ড, হ্যারি মাগুইর এবং ক্লাব সতীর্থ ভার্জিল ভন ডিককে হারিয়ে এই পুরস্কার জিতে নেন তিনি। ৩ লাখ ৬৬ হাজার সমর্থকদের মধ্যে সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে এই পুরস্কার জিতেন সালাহ। একই দিনে প্যারিসের আলো ঝলমলে রাতে ঘোষণা করা হয় ব্যালন ডি’অর জয়ীর নামও। যেখানে জুভেন্টাসের পর্তুগীজ সুপারস্টার ক্রিষ্টিয়ানো রোনাল্ডো আর এ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের ফরাসী তারকা এ্যান্থনি গ্রিজম্যানকে পেছনে ফেলে প্রথমবারের মতো স্বপ্নের শিরোপা উঁচিয়ে ধরেন রিয়াল মাদ্রিদের ক্রোয়েশিয়ান মিডফিল্ডার লুকা মডরিচ। এই প্রতিযোগিতায় মোহাম্মদ সালাহ হয়েছিলেন ষষ্ট। ঠিক লিওনেল মেসির পরেই তার নাম। এবার যে পঞ্চম হয়েছেন বার্সিলোনার আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার লিওনেল মেসি। এফএসএফ এর সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জিতে দারুণ রোমাঞ্চিত সালাহ। এ প্রসঙ্গে নিজের অভিমত প্রকাশ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘এই পুরস্কার দেওয়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। এটা আমার কাছে অনেক কিছু। কেননা, এই পুরস্কার নির্ধারণ করা হয় সমর্থকদের ভোটে।’ এই পুরস্কারটাও সালাহ উৎসর্গ করেছেন লিভারপুলের ভক্ত-অনুরাগীদেরকে। তিনি বলেন, ‘সাধারণত যে কোন পুরস্কার জেতার পরই আমি সেটা লিভারপুলের সতীর্থ এবং কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভাগাভাগি করি কিন্তু এবার এই পুরস্কারটা আমি লিভারপুলের সমর্থকদের উৎসর্গ করতে চাই। কেননা, সারা বছর অবিশ্বাস্যভাবে সমর্থন করে তারা। সমর্থকদের সবাইকেই ধন্যবাদ জানাই।’ তৃতীয় ফুটবলার হিসেবে এই পুরস্কার জিতলেন সালাহ। ২০১৩ সালে চালু হওয়া এই পুরস্কার প্রথম ফুটবল হিসেবে জিতেছিলেন লুইস সুয়ারেজ। বর্তমানে বার্সিলোনায় খেলা এই উরুগুইয়ান স্ট্রাইকার সেই সময়ে এনফিল্ডে দুর্দান্ত পারফর্মেন্স উপহার দিয়েই সমর্থকদের মন জয় করে নিয়েছিলেন। দ্বিতীয় ফুটবলার হিসেবে এই পুরস্কার জিতেছিলেন লিভারপুলের সাবেক ব্রাজিলিয়ান তারকা ফিলিপে কুতিনহো। সুয়ারেজ-কুতিনহোর পর লিভারপুলের তৃতীয় ফুটবলার হিসেবে এই পুরস্কার জিতলেন ২৬ বছরের সালাহ। সালাহর মতো তার ক্লাব লিভারপুল এবার ছুটছে দুর্দান্ত গতিতে। ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগে এখন সবার উপরে অবস্থান করছে তারা। মৌসুমের প্রথম ১৭ ম্যাচ থেকে ৪৫ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে রয়েছে জার্গেন ক্লপের দল। দুই নম্বরে রয়েছে টুর্নামেন্টের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটি। পেপ গার্ডিওলার শিষ্যদের সংগ্রহ ৪৪ পয়েন্ট। আগামী ২১ ডিসেম্বর আবারও মাঠে নামবে লিভারপুল। ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগের সেই ম্যাচে অলরেডদের প্রতিপক্ষ ওলভারহাম্পটন ওয়ান্ডার্স।
×