ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সিরিজে শিরোনামে উঠে এসেছে দুই অধিনায়কের স্লেজিং সংঘাত

প্রকাশিত: ২১:১০, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৮

সিরিজে শিরোনামে উঠে এসেছে দুই অধিনায়কের স্লেজিং সংঘাত

অনলাইন ডেস্ক ॥ সিরিজে সমতা ফেরানো অস্ট্রেলিয়া নয়। সকালে দ্রুতই অস্ট্রেলীয় পেসারদের বোমাবর্ষণের সামনে ধ্বংস হয়ে যাওয়া ভারত নয়। চলতি সিরিজে সব কিছুকে ছাপিয়ে শিরোনামে উঠে এসেছে দুই অধিনায়কের স্লেজিং সংঘাত। ম্যাচের শেষ দিনে জয়-পরাজয়ের নিষ্পত্তি হয়ে যাওয়ার পরেও তা নিয়ে এমন উত্তপ্ত আবহাওয়া তৈরি হয়ে আছে যে, অনেকে আশঙ্কা করছেন, মেলবোর্নে বক্সিং ডে টেস্ট ম্যাচে না ফের মাঙ্কিগেটের মতো কিছু ঘটে যায়! এমনকি, দু’দলের সংবাদমাধ্যম, দু’দেশের প্রাক্তন ক্রিকেটারেরাও তর্ক-বিতর্কে জড়িয়ে পড়ছেন। অস্ট্রেলীয় সংবাদমাধ্যম দাবি করতে থাকে, কোহলি নাকি তাদের অধিনায়ক টিম পেনকে বলেছেন, ‘‘আমি বিশ্বের সেরা ক্রিকেটার। আর তুমি শুধুই অনিয়মিত অধিনায়ক।’’ অস্ট্রেলীয় সংবাদমাধ্যমের তুলে দেওয়া এই মন্তব্য যখন জানাজানি হয়, তত ক্ষণে কোহলি ম্যাচের পরে সাংবাদিক সম্মেলন করে চলে গিয়েছেন। তাই তাঁর কাছ থেকে এর সত্যি-মিথ্যা যাচাই করতে পারেনি কেউ। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই ভারতীয় বোর্ড থেকে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়, এ রকম কিছু কখনওই বলেননি ভারত অধিনায়ক। সম্পূর্ণ মিথ্যা একটা খবর চালানো হচ্ছে অস্ট্রেলীয় মিডিয়ায়। বোঝাই যাচ্ছে, সম্পর্ক খুব সৌজন্যের জায়গায় আর নেই। বোর্ড হস্তক্ষেপ করেছে মানেই মামলা গম্ভীর হতে শুরু করেছে। এর পর কোথায় গিয়ে স্লেজিং-সংঘাত থামবে কে জানে! দুই অধিনায়ক যদিও জোরালো ভাবে দাবি করে গেলেন, কখনওই তাঁরা কেউ সীমানা অতিক্রম করেননি। দু’জনের কথা শুনেই মনে হল, বাগ্যুদ্ধকে স্পোর্টিং স্পিরিটে নিচ্ছেন। মাঠে যা হয়েছে, তা মাঠেই রেখে এসো। কোহলি যেমন বললেন, ‘‘কথাবার্তা হয়েছে ঠিকই কিন্তু আমার মনে হয় না, কেউ সীমানা অতিক্রম করেছে।’’ যোগ করলেন, ‘‘২০১৪-এ যা ঘটেছিল তার তুলনায় এটা কিছুই নয়। কিন্তু মাঠে যা ঘটছে, সেটা মাঠেই থাকবে। প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুরে যেটা হচ্ছে, সেটা মাঠের মধ্যে সীমিত থাকলেই হল। আমার মনে হয় না খুব সাংঘাতিক কিছু ঘটেছে যে, সেটা নিয়ে কথা বলতে হবে।’’ চার বছর আগে অস্ট্রেলিয়া সফরে এসে চার টেস্টে চার সেঞ্চুরি করেছিলেন কোহলি। কিন্তু সেই সিরিজে সারাক্ষণ তাঁর সঙ্গে খটাখটি লেগে ছিল অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটারদের। সব চেয়ে বেশি করে লেগেছিল মিচেল জনসনের সঙ্গে। যাঁকে ক্রিজের বাইরে দাঁড়িয়ে সব চেয়ে বেশি পিটিয়েছিলেন কোহলি। ভারত হারতেই প্রাক্তন অস্ট্রেলীয় ফাস্ট বোলার কোহলিকে আক্রমণ করেছেন। তিনি এখন আর খেলেন না, টিভি-তে বিশেষজ্ঞ। ম্যাচের পরে জনসন তাঁর লেখায় দাবি করেছেন, কোহলি নাকি টিম পেনের সঙ্গে সৌজন্য করমর্দনটাও ঠিক মতো করেননি। লিখেছেন, কোহলি চোখে চোখ রাখেননি পেনের। এবং, সেটা পেনের প্রতি অসম্মান দেখানো। যদিও ম্যাচ শেষে দু’জনের হাত মেলানোর ছবি দেখে পরিষ্কার করে সে রকম কিছু ধরা যাচ্ছে না। সানগ্লাসে ঢাকা পেনের চোখ কোন দিকে তা-ও বোঝা যাচ্ছে না। তবে এটা ঠিক যে, খুবই শৈত্য একটা করমর্দন করতে দেখা গিয়েছে দু’জনকে। যা দেখে মনে হতেই পারে যে, মাঠের মধ্যে দুই অধিনায়কের ক্রমাগত বাগ্যুদ্ধ তাঁদের সম্পর্কের উপরেও প্রভাব ফেলবে। বরাবর অস্ট্রেলিয়া মানেই মাঠের বাইরে থেকে নানা রকম বাউন্সার ধেয়ে আসা। অতীতে যখনই কোনও ভারতীয় দল ডনের দেশে পা রেখেছে, অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটারেরা এবং তাঁদের সঙ্গে গলা মিলিয়ে অস্ট্রেলীয় মিডিয়া স্লেজিং শুরু করে দিত। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় অধিনায়ক থাকার সময়ে দল নিয়ে অস্ট্রেলিয়া আসার আগে যেমন অস্ট্রেলীয় মিডিয়ায় শিরোনাম বেরিয়েছিল, ভারত অধিনায়ককে ‘চিন মিউজিক’ শোনাতে প্রস্তুত অস্ট্রেলিয়ার ফাস্ট বোলাররা। ‘চিন মিউজিক’ মানে চিবুক লক্ষ্য করে ছুটে আসা বাউন্সার। সৌরভ সে বারই ব্রিসবেনে প্রথম টেস্টে নেমেই দুর্ধর্ষ সেঞ্চুরি করেন। এ বারে অ্যাডিলেডে টেস্ট হারায় অস্ট্রেলীয় মিডিয়া বা জনসনরা ঘুমিয়ে ছিলেন। পার্থে জিতে সমতা ফেরাতেই তাঁরা আবার চনমনে হয়ে উঠেছেন। এমনকি, রিকি পন্টিং— যিনি এত দিন এই অস্ট্রেলিয়া দলকে একটার পর একটা তোপ দেগে যাচ্ছিলেন, তিনিও এ দিন দাবি করেছেন, ভারতের চেয়ে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং লাইন-আপ ভাল। সব মিলিয়ে ‘চিন মিউজিক’-এর ভল্যুম বাড়িয়ে দেওয়ার সেই পুরনো রণকৌশল। টিম পেন অবশ্য কোহলির সঙ্গে তাঁর লাগাতার বাগ্যুদ্ধ নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় বলে দিলেন, ‘‘আমরা কেউ সীমানা অতিক্রম করিনি। শারীরিক সংঘর্ষের কাছাকাছি এসেছিলাম কিন্তু শেষ মুহূর্তে নিজেদের সংবরণ করে নিয়েছি। ধাক্কাধাক্কি হয়নি।’’ এক অস্ট্রেলীয় সাংবাদিক টিপ্পনী কেটে জিজ্ঞেস করলেন, কোহলিকে কি অসহ্য লাগতে শুরু করেছে? পেন বলে দিলেন, ‘‘না, একেবারেই না। আমি বরং খুবই পছন্দ করি বিরটের খেলা দেখতে। আমার সব সময়ই ওকে ভাল লাগে। অন্যদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক চরিত্রটাও ও বের করে আনে। সেটা ক্রিকেট খেলাটার জন্য দারুণ, দেখার জন্যও দারুণ।’’ প্রশ্ন করা হল, কোহলি এবং তাঁর টিমকে কি ড্রিঙ্কসে নেমন্তন্ন করবেন? পেন বললেন, ‘‘সিরিজ শেষে অবশ্যই ওদের ডাকব আমাদের ড্রেসিংরুমে। সেটা তো অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটের পরম্পরাই।’’ এটা ঠিক যে, অতীতের মতো দু’দলের ক্রিকেটারদের মধ্যে খুব তিক্ততা এখনও তৈরি হয়নি। তবে পরিস্থিতি খুব শান্তও নেই। শেষ দিনেও সারাক্ষণ লেগেই ছিল কথার লড়াই। অস্ট্রেলিয়ার দিকে এ দিন সব চেয়ে সরব ছিলেন নেথান লায়ন। এক বার তিনি ইশান্ত শর্মাকে আম্পায়ারের জায়গায় দাঁড়িয়ে বলে ওঠেন, ‘‘কী খুঁজছ ইশান্ত? কী গার্ড চাই তোমার? আমি দিয়ে দিচ্ছি।’’ তার আগে হনুমান বিহারীকে বলেন, ‘‘ক্রিসমাসে কোথায় যাওয়ার কথা ভাবছ? আমার একটা টিপ্স আছে। হ্যামিল্টন আইল্যান্ডে যাও। দারুণ লাগবে।’’ এর কাছাকাছি থাকবে গত কাল ঋষভ পন্থকে শুনিয়ে অস্ট্রেলীয় ওপেনার মার্কাস হ্যারিসের মন্তব্য। দিনের শেষ বল খেলতে তৈরি হচ্ছেন ঋষভ। বোলিং মার্কে মিচেল স্টার্ক। তখনই ফরোয়ার্ড শর্ট লেগে হেলমেট পরতে পরতে হ্যারিস বলেন ঋষভকে, ‘‘এই বলটায় তুমি যদি আউট হয়ে যাও, আজ রাতে ডিস্কোতে যেতে পারবে। পার্থে সোমবার রাতটা কিন্তু খারাপ না।’’ ফুলকি উড়ছে। সিরিজ ১-১ হয়ে যাওয়ায় আরও ঘি পড়ল। ধিকি ধিকি আগুন জ্বলতে জ্বলতেই অতীতের মতো দাবানলে পরিণত হবে না, কে বলতে পারে! মেলবোর্নে বক্সিং ডে থ্রিলারের অপেক্ষায় ক্রিকেট দুনিয়া! সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
×