ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

বাংলাদেশের অর্থনীতির উত্থান ‘আশাতীত'

প্রকাশিত: ০২:১১, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৮

বাংলাদেশের অর্থনীতির উত্থান ‘আশাতীত'

অর্থনৈতিক রিপোর্টার॥ সুষ্ঠু রাজনৈতিক সংস্কৃতির অভাব, পারস্পরিক অবিশ্বাস ও দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকা সত্ত্বেও অর্থনীতির মাপকাঠিতে বাংলাদেশ বিগত দশ বছরে বেশ ভালো করেছে বলে জানিয়েছে নিক্কেই এশিয়ান রিভিউ। বুধবার (১৯ ডিসেম্বর) সংবাদমাধ্যমটির এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অর্থনীতির উত্থানকে ‘আশাতীত’ উল্লেখ করে বলা হয়, এই অগ্রগতির পেছনে রয়েছে বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উল্লেখযোগ্য অবদান। প্রতিবেদনের শুরুতেই বলা হয়, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা সংগ্রামের পর থেকে বাংলাদেশ একের পর এক বিয়োগান্তক ঘটনার মুখোমুখি হয়েছে। দেশটির অর্থনীতি ও রাজনীতি কখনোই স্থিতিশীলতা সম্পর্ক রেখে চলেনি। শেকড়ে বেড়ে উঠা দারিদ্র, নানা সময়ের ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও অতি-সম্প্রতি ৭ লক্ষ ৫০ হাজার রোহিঙ্গার ভার বইতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। তবে এসবের মধ্যেও প্রায় এক দশক ধরে নিরবিচ্ছিন্নভাবে ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করে যাচ্ছে বাংলাদেশ। চলতি বছর তা পৌঁছেছে ৭.৮ শতাংশে। যদিও দেশটির অর্থনীতিতে এই সাফল্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের খুব একটা চোখ পড়ছেনা। দেশে বেড়েছে মাথাপিছু আয় সেইসঙ্গে কমেছে অতি-দারিদ্রের সংখ্যা। ২০০৯ সালের তুলনায় বর্তমানে মাথাপিছু আয় তিনগুন বেড়ে হয়েছে ১৭৫০ ডলার। এছাড়া, অতি দারিদ্রের হারও ১৯ ভাগ থেকে এসময়ে কমে হয়েছে ৯ ভাগে। বিশ্বব্যাংক জানায়, ১৬ কোটি ৬০ লাখ মানুষের এই রাষ্ট্রটি বর্তমানে খাদ্যে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ। উল্লেখ্য, দৈনন্দিন আয় ১.২৫ ডলারের কম হলে তাকে অতিদারিদ্র বলে সংজ্ঞায়িত করা হয়। চলতি বছরের শুরুতেই স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উত্তরণে জাতিসংঘের বেঁধে দেওয়া শর্তগুলো পূরণ করতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ। এই ধারা অব্যাহত রাখলে ২০২৪ সালের মধ্যে দেশটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পাবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেটিকে দেখছেন বর্হিবিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বদলে দেওয়ার অভিপ্রায় হিসেবে। ডিসেম্বরে নিক্কেই এশিয়ান রিভিউকে দেওয়া অন্য এক সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা বলেন, স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উত্তোরণ আমাদের আরো আত্মবিশ্বাসী করবে ও সাহস জোগাবে। এটি শুধু রাজনৈতিক নেতাদের জন্য নয় বরং দেশের মানুষদের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। তিনি আরও বলেন, যখন আমরা নিচের সারিতে থাকি তখন কোন প্রজেক্ট ও পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনায় আমাদের অন্যদের কৃপার ওপর নির্ভর করতে হয়। কিন্তু যখন আমরা যখন নিজেদের প্রমাণ করতে পারবো তখন আমাদের সেক্ষেত্রে অধিকার থাকবে। সেইসঙ্গে, অন্যদের ওপর নির্ভরশীল হতে হবে না। শেখ হাসিনা আশাবাদ ব্যক্ত করেন অর্থনীতিতে ঊর্ধ্বগতির এই ধারা শুধু অব্যাহত থাকা নয় বরং বৃদ্ধি পাবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামী পাঁচ বছর বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ৯ শতাংশ ও ২০২১ সাল নাগাদ তা ১০ শতাংশ পৌঁছাবে। দেশের উন্নয়নের বেশ কিছু সেক্টরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সফলতা ছাড়িয়ে গেছে সরকারেরও প্রত্যাশাও। প্রাসঙ্গিকভাবে সফলতার প্রথম সারিয়ে রয়েছে গার্মেন্ট ইন্ড্রাস্টির অবদান। গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানিতে বিশ্বে চীনের পরেই বাংলাদেশের অবস্থান। শেখ হাসিনা জানান, গার্মেন্টস খাত থেকে প্রবৃদ্ধি ৩৬.৭ বিলিয়ন ডলার থেকে বাড়িয়ে ২০২১ সালে ৫০ বিলিয়ন ডলার করার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। এছাড়া প্রবৃদ্ধি অর্জনে আরো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে ২.৫ মিলিয়ন প্রবাসীর পাঠানো রেমিটেন্স। ২০১৮ সালে রেমিটেন্স প্রবাহ ১৮ শতাংশ বেড়ে ১৫ বিলিয়ন ডলার লক্ষ্যমাত্রা ছুঁয়েছে। তবে শেখ হাসিনা এই দুটি প্রধান বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের খাত ছাড়াও ভাবছেন, দীর্ঘস্থায়ী পরিকল্পনার কথা ও দেশে শিল্পক্ষেত্র গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা। সরকার এখন দেশব্যাপী ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেছে। এরমধ্যে ১১টির কাজ সম্পন্ন হয়েছে ও ৭৯টি নির্মাণাধীন রয়েছে। সরকারের ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ স্লোগানের ফলে রাজধানী ঢাকাতেই দ্রুত প্রযুক্তি ও প্রযুক্তি পণ্যের প্রসার ঘটছে। সফটওয়্যার রপ্তানি ও আইটি খাতে বাংলাদেশ চলতি বছর ৮০০ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে। ২০২১ সালের মধ্যে তা ৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার অভিপ্রায় রয়েছে দেশটির। এটি চ্যালেঞ্জিং হলেও সম্ভব বলে ধারণা তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের। ফার্মসেটিক্যালস পণ্যেও বাংলাদেশের উন্নতি চোখে পড়ার মতো। বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বের ৬০টি দেশে ওষুধ রপ্তানি করে। ভবিষ্যতে এক্ষেত্রে আরও অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। তবে যেকোন উন্নয়ন চলামান রাখতে প্রয়োজন অবকাঠমোর উন্নয়ন। সরকারের বৃহৎ প্রকল্প হিসেবে পদ্মাসেতু ও সেতুতে রেল সংযোগ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলকে দেশের উত্তর ও পুবের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত করবে। এছাড়া, সরকারের পরিকল্পনায় রয়েছে আরও কিছু মেগাপ্রজেক্ট। উল্লেখ্য, ডিসেম্বরের ৩০ তারিখে বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। দেশটিতে রাজনীতির প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া। দুর্নীতি মামলায় দোষী খালেদা জিয়া বর্তমানে জেলে আছেন। যদিও তার দল বিএনপি বলছে, মামলাগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য। তবে তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। আসন্ন নির্বাচনে সব দল অংশগ্রহণ করছে বিধায় স্বস্তি জানিয়েছে ব্যবসায়ীরা। দেশটির গার্মেন্টস ব্যবসায়ী ফারুক হাসান জানান, সব দল নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। রাজনৈতিক বিভেদ থাকা সত্ত্বেও আমরা অর্থনীতির উন্নতিকে আলাদা চোখে দেখতে চাই। তবে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না আসলে বাইরের দেশের ক্রেতারা দুশ্চিন্তামুক্ত হতে পারবে না। গত দুটি নির্বাচনে শেখ হাসিনা জনগণের সমর্থন পেয়েছেন। যদিও বিরোধীপন্থি বুদ্ধিজীবীরা সরকারের টানা দু মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে থাকেন। তবে অর্থনৈতিক ও অগ্রগতির দৃষ্টিকোণ থেকে অনেকেই স্বীকার করছেন, শাসনক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ আবারও ক্ষমতায় এলে রাষ্ট্রের চলমান উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে।
×