ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর জমজমাট প্রচারণা

প্রকাশিত: ০২:৪২, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৮

স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর জমজমাট প্রচারণা

নিজস্ব সংবাদদাতা, রংপুর ॥ রংপুর-৬ (পীরগঞ্জ) আসনে আসন্ন একাদশ সংসদ নির্বাচনে মহাজোটের প্রার্থী হয়েছেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ও বর্তমান সাংসদ ড.শিরীন শারমিন চৌধুরী। নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রতিদিনই মাইলের পর মাইল পায়ে হেটে গণসংযোগে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন তিনি। আওয়ামী লীগ ও মহাজোটের নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে করছেন উঠান বৈঠক ও পথসভা। নির্বাচনী এলাকার অলিগলিতে প্রচার করছেন শেখ হাসিনা সরকারের উন্নয়ন বার্তা। সেইসাথে গত ৫ বছরে এ আসনে যেসব উন্নয়ন হয়েছে, সেগুলোর পাশাপাশি নির্বাচিত হলে আগামীতে আরো অনেক মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতিও দিচ্ছেন। ড.শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গত ৫ বছরে পীরগঞ্জ উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ১৫টি ইউনিয়নে সমস্যা চিহ্নিত করে বাস্তবমূখী উন্নয়ন ও প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এই সরকারের আমলে পীরগঞ্জে অনেক উন্নয়ন হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, দিনাজপুরের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য করতোয়া নদীতে ড.ওয়াজেদ সেতু, একই স্থানে ড.এম.এ ওয়াজেদ মিয়া টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ নির্মিত হয়েছে। দৃষ্টি নন্দন শহীদ মিনার, আধুনিক মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স নির্মাণসহ অগণিত উন্নয়নমূলক কাজ করা হয়েছে। মৃত্তিকা সম্পদ ইন্সটিটিউট, পুষ্টি ইন্সটিটিউট, মেরিন একাডেমি, টেকনিক্যাল কলেজ, কারিগরী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, জয়ন্তিপুর ও নুনদহ ঘাটে কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে ব্রীজের নির্মাণ কাজ চলছে। আগামীতে সরকার গঠন করতে পারলে এগুলোর পাশাপাশি আরো অনেক প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। নারীর ক্ষমতায়নেও তিনি ভুমিকা রেখেছেন। ভোটাররা বলছেন তিনি ফের নির্বাচিত হবেন। গণসংযোগে তিনি যেখানেই যাচ্ছেন, সেখানেই নারীদের ঢল নামছে। তিনিও সকলের সাথে সাধারণ মানুষের মতো মিশে যাচ্ছেন। পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ডের তুলারাম মহাজিদপুর গ্রামের সহিদা খাতুন(৫৫), জরিনা বেগম(৫০), নাঈমা খাতুন (২৫)সহ অনেক নতুন ও পুরাতন মহিলা ভোটার জানান, আমরা স্পিকার আপাকে এতোদিন শুধু টিভিতেই দেখেছি, আজ স্বচক্ষে দেখলাম। উনি আমাদের গ্রামে এসে সাধারন মানুষের সাথে এভাবে মিশবেন তা কোনদিন কল্পনাও করিনি। আমরা উনাকেই ভোট দেব। প্রতিটি গ্রামেই স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী এভাবেই গণসংযোগে সাড়া ফেলেছেন। অন্যদিকে প্রথমবারের মতো বিএনপির প্রার্থী হয়েছেন একাধারে রংপুর জেলা ও পীরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাইফুল ইসলাম। বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য, দুবারের সাবেক সংসদ সদস্য ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মন্ডল উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নেতাকর্মী নিয়ে সম্প্রতি আওয়ামী লীগে যোগদান করায় পীরগঞ্জে ভোটের কোন আমেজ নেই বলে মনে করছেন অভিজ্ঞ মহল। এ উপজেলায় বিএনপির কোন গণভিত্তি না থাকলেও ব্যক্তি ইমেজ ছিলো নুর মোহাম্মদ মন্ডলের। সেই তিনিই স্পিকারের পক্ষে জোরেসোরে প্রচার চালাচ্ছেন। বিএনপির অনেক নেতাকর্মী সাইফুল ইসলামের পক্ষে এখনো মাঠে নামেনি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেক বিএনপি নেতা বলছেন, আগামীতে হামলা-মামলার ভয়ে মাঠে নামার সাহস পাচ্ছেন না তারা। আবার অনেকেই বলছেন, শত চেষ্টা করেও এখানে বিএনপি প্রার্থীর জয়লাভের কোনই সম্ভাবনা নেই। অহেতুক মাঠে নেমে কালার হওয়ার কি দরকার। নুর মোহাম্মদ মন্ডল বলেন, দু’বার এমপি ছিলাম, সরকারের আশীর্বাদ ছাড়া এমপি হয়ে কোন লাভ নেই। আসল কাজ হচ্ছে এলাকার উন্নয়ন। তাহলে জনগণেরও ভাগ্যের উন্নয়ন সম্ভব। প্রধানমন্ত্রী আমাকে পীরগঞ্জের উন্নয়নের আশ্বাস দিয়েছেন, তাই আমি আওয়ামী লীগে যোগদান করেছি। বিএনপি প্রার্থী সাইফুল ইসলাম জানান, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আমি বিপুল ভোটে জয়ী হবো। গত ১০ বছরে আওয়ামী লীগের ব্যাপক লুটপাট ও দুঃসাশনের বিরুদ্ধে ব্যালট বিপ্লবের অপেক্ষায় আছে জনগণ। নুর মোহাম্মদ মন্ডল আওয়ামীলীগে যোগদান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, উনি তো ডিগবাজী খাওয়া নেতা, কখন কোন দল করেন এবং করবেন তা নিজেই জানেন না। বিএনপির কোন ক্ষতি তো হয়ইনি, উল্টো বিএনপি লাভবান হয়েছে। এটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শ্বশুরবাড়ী এলাকা। ২০০১, ২০০৮ ও ২০১৪ সালে এ আসনে নির্বাচন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এবারও মনোনয়ন পত্র দাখিল করেছিলেন। ৯ ডিসেম্বর তিনি মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন। এ ছাড়াও ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদও এ আসন থেকে প্রার্থী হয়েছিলেন। ১৯৯১ সালে এরশাদের ছেড়ে দেয়া আসনে উপ-নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে জয়লাভ করেছিলেন তৎকালীন জাতীয় পার্টির মহাসচিব ও সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন । আর সর্বশেষ ২০১৪ সালে এ আসনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রার্থী হিসেবে জয়লাভ করেন এবং উপ-নির্বাচনে নির্বাচিত হয়ে বর্তমানে জাতীয় সংসদে স্পিকারের দায়িত্ব পালন করছেন ড. শিরীন শারমীন চৌধুরী। পীরগঞ্জ উপজেলা ১৫টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে নিয়ে গঠিত ২৪,রংপুর-৬ আসনটি। এ আসনে মোট ভোটার ২ লক্ষ ৯২ হাজার ৯৯৪ জন। এরমধ্যে মহিলা ভোটার ১ লক্ষ ৪৭ হাজার ৬৬৮ এবং পুরুষ ভোটার ১ লক্ষ ৪৫ হাজার ৩২৬ জন। মোট ভোটকেন্দ্র ১০৭ টি।
×