ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চলে গেলেন সাহিত্যিক দিব্যেন্দু পালিত

প্রকাশিত: ২৩:৩১, ৩ জানুয়ারি ২০১৯

চলে গেলেন সাহিত্যিক দিব্যেন্দু পালিত

অনলাইন ডেস্ক ॥ প্রয়াত হলেন সাহিত্যিক দিব্যেন্দু পালিত। বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর। বেশ কিছু দিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন তিনি। বুধবার শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা বেড়ে যাওয়ায় তাঁকে যাদবপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আজ বৃহস্পতিবার সকালে সেখানেই মারা যান তিনি। ১৯৩৯-এর ৫ মার্চ বিহারের ভাগলপুরে জন্ম। প্রাথমিক থেকে স্কুল-কলেজের পাঠ সবই সেখানে। স্কুলজীবনের শেষ দিক থেকেই লেখালেখির শুরু। ১৯৫৮-য় বাবা বগলাচরণের মৃত্যু। তার পর আক্ষরিক অর্থেই ভাগ্যান্বেষণে কলকাতায় চলে এসেছিলেন স্নাতক পরীক্ষায় সদ্য উত্তীর্ণ দিব্যেন্দু। কলকাতায় আসার পর অভাব যেন আরও জেঁকে বসল তাঁর জীবনে। হাতে পয়সাকড়ি প্রায় কিছুই নেই। নিজের পাশাপাশি মা-ভাইবোনদের জন্য ভাবনা। ঘনিষ্ঠ জনদের কাছে পরে দিব্যেন্দু পালিত সে সব দিনের গল্প বলেওছেন। শিয়ালদহ স্টেশনে রাতের পর রাত না খেয়ে কাটিয়েছেন। কিন্তু, লেখালেখি ছাড়েননি। এরই মধ্যে ভর্তি হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ে। তুলনামূলক সাহিত্য নিয়ে এমএ পাশ করলেন। সেটা ১৯৬১ সাল। কর্মজীবনের শুরুও ওই বছর। অধুনালুপ্ত ইংরেজি দৈনিক হিন্দুস্থান স্ট্যান্ডার্ড-এ সাব-এডিটর হিসেবে। বছর চারেকের মধ্যেই চলে গেলেন বিপণন ও বিজ্ঞাপন সংক্রান্ত পেশায়। সেই সূত্রে দীর্ঘ কাল যুক্ত ছিলেন ক্ল্যারিয়ন-ম্যাকান অ্যাডভাটাইজিং সার্ভিসেস, আনন্দবাজার সংস্থা এবং দ্য স্টেটসম্যান-এ। পরে আনন্দবাজার পত্রিকার সম্পাদকীয় বিভাগেও কাজ করেছেন দীর্ঘ দিন। ভাগলপুর কলেজে পড়বার সময় থেকেই গল্প লেখা শুরু। প্রথম গল্প ‘ছন্দপতন’ প্রকাশিত হয় আনন্দবাজার পত্রিকার রবিবাসরীয় ক্রোড়পত্রে। সেটা ১৯৫৫ সালের ৩০ জানুয়ারি। দিব্যেন্দু পালিতের বয়স তখন মাত্র ১৬। পরের বছর সাপ্তাহিক ‘দেশ’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় গল্প ‘নিয়ম’। ভাগলপুর থেকে সব গল্পই তিনি ডাকে পাঠাতেন। ২০ বছর বয়সেই তাঁর প্রথম বই তথা প্রথম উপন্যাস ‘সিন্ধু বারোয়াঁ’ প্রকাশিত হয়। সেটা ১৯৫৯ সাল। ওই উপন্যাস সম্পর্কে পরে দিব্যেন্দু বলেছিলেন, ‘‘লেখক হওয়ার জন্য সেই আঠেরো-উনিশ বয়সে আমি এতই ব্যস্ত হয়ে উঠেছিলাম যে, পাণ্ডুলিপিটি পরিমার্জনা করার ও আদ্যন্ত ফিরে লেখার কথা ভাবিনি। সমালোচকহীন সেই মফস্সল শহরে এমন কেউ ছিল না, যে আমাকে দ্বিতীয় মত গ্রহণে সাহায্য করবে। আমি লেখক, আমিই তার পাঠক, ইতিমধ্যেই পিঠে পড়ে গেছে পরিচয়ের ছাপ, সুতরাং তর যে সইবে না, তাতে আর আশ্চর্য কী!’’ তাঁর পরিচিত এবং ঘনিষ্ঠরা জানতেন, দিব্যেন্দু খুব মিতভাষী ছিলেন। খুব উঁচু স্বরে কথাও বলতেন না। ঔপন্যাসিক, ছোট গল্পকার, কবি, প্রাবন্ধিক, সম্পাদক— এ সব পরিচয়ের পাশাপাশি তিনি ছিলেন সাংবাদিকও। সাহিত্যিক দিব্যেন্দুর লেখায় বারে বারেই উঠে এসেছে নগর সভ্যতার কথন। নাগরিক মানুষের মনের জটিলতা, অসহায়ত্ব, নিরুপায়তাকে ধারণ করেই দিব্যেন্দু পালিত তাঁর গল্প-উপন্যাস লিখে গিয়েছেন। সেই সব নাগরিক কথন ধরা রয়েছে তাঁর ‘ঘরবাড়ি’, ‘সোনালী জীবন’, ‘ঢেউ’, ‘সহযোদ্ধা’, ‘আমরা’, ‘অনুভব’-এ। পাশাপাশি তাঁর একাধিক ছোটগল্প বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে। যেমন— ‘জেটল্যাগ’, ‘গাভাসকার’, ‘হিন্দু’, ‘জাতীয় পতাকা’, ‘ত্রাতা’, ‘ব্রাজিল’...। ১৯৮৪-তে আনন্দ পুরস্কার, ১৯৮৬-তে রামকুমার ভুয়ালকা পুরস্কার, ১৯৯০-এ বঙ্কিম পুরস্কার, ১৯৯৮-এ সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার-সহ একাধিক সম্মান ও পুরস্কার পেয়েছেন দিব্যেন্দুবাবু। ইংরেজি ও বিভিন্ন ভারতীয় ভাষায় অনূদিত হয়েছে তাঁর অনেক লেখা। চলচ্চিত্র, দূরদর্শন এবং রেডিয়োতেও রূপায়িত হয়েছে অনেক কাহিনি। সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
×