শিশুরাই জাতির ভবিষ্যত। তারাই আগামী দিনের নাগরিক। তারাই ভাবীকালে দেশ গড়ে তোলা শুধু নয়, দেশ পরিচালনাও করবে। তাই তাদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা জাতীয় দায়িত্ব ও কর্তব্যের আওতাভুক্ত। শিশুদের অধিকার রক্ষা করা তাই নাগরিক এবং অভিভাবকদের যেমন দায়িত্ব, তেমনি সরকার ও রাষ্ট্রের। সম্মিলিত উদ্যোগ তাই প্রয়োজন সর্বাগ্রে। শেখ হাসিনার বিদায়ী সরকার তাই শিশুদের অধিকার রক্ষার উদ্যোগ নিয়েছে। নয়া সরকার তা এগিয়ে নিয়ে যাবে স্বাভাবিকভাবেই। অধিকার রক্ষায় গঠন করা হচ্ছে জাতীয় শিশু অধিকার কমিশন। দেশে প্রথমবারের মতো এই উদ্যোগ নিয়েছে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়। গত অক্টোবরে এ সংক্রান্ত একটি খসড়া সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগে পাঠানো হয়েছে মতামতের জন্য। একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশনে তা বিল আকারে উপস্থাপনের তোড়জোড় চলছে। ২০০৯ সালে হাইকোর্ট এক রায়ে সরকারকে শিশুদের অধিকার রক্ষায় কমিশন গঠনের নির্দেশনা দিয়েছিল। এরই আলোকে মন্ত্রণালয় কমিশন গঠনের উদ্যোগ নেয় এবং জাতীয় শিশু অধিকার কমিশন আইন ২০১৮ শিরোনামে একটি খসড়া আইন প্রণয়ন করে। এটা তো বাস্তব এবং সত্য যে, শিশুর অধিকার রক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ সব বিষয়ে সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এরই মধ্যে অনেক উদ্যোগ সম্পন্ন হয়েছে। কমিশন গঠনের উদ্যোগও তারই একটি অংশ।
পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, দেশের মোট জনসংখ্যার ৪৫ শতাংশ শিশু। প্রায় সাত কোটি শিশুর সুষ্ঠুভাবে বেড়ে ওঠার পরিবেশ তৈরি তাদের অধিকার সংক্রান্ত বিষয়গুলো দেখা এবং সুরক্ষা প্রদানের নিশ্চয়তার লক্ষ্যে একটি স্বাধীন, স্বচ্ছ, গ্রহণযোগ্য ও জবাবদিহিমূলক প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো প্রতিষ্ঠার জন্য বহু বছর ধরেই দাবি জানানো হচ্ছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার পক্ষ থেকেই। শিশুদের প্রতি অব্যাহত নির্যাতন বন্ধে মানবাধিকার ও শিশু সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে একটি স্বাধীন নিরপেক্ষ শিশু অধিকার কমিশন গঠনের কথা বলা হয়েছিল। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন বিশেষত এই কমিশন গঠনের শীর্ষ উদ্যোগী। দেশের জনসংখ্যার ৪৫ শতাংশদের অধিকার নিশ্চিত করা এবং সার্বিক বিষয়ে মনিটর করতে থাকা উচিত একটি পৃথক সংস্থা। যে সংস্থা বিদ্যমান নীতিমালা, আইন এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থার ফাঁকফোকর ও ত্রুটি চিহ্নিত করে সমাধানের পদক্ষেপ নেবে। প্রয়োজনে আরও শক্তিশালী বিধিবিধান প্রণয়ন করে শিশু সুরক্ষার কমিটিকে সুদৃঢ় করবে। প্রস্তাবিত খসড়া অনুযায়ী যেসব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তা কার্যকর করা গেলে যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলা যায়। কমিশন শিশুদের প্রতি নির্যাতনের প্রতিটি ঘটনায় দ্রুততার সঙ্গে হস্তক্ষেপ করার মাধ্যমে তাদের জন্য ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার পথ প্রশস্ত করবে। শিশু অধিকার রক্ষায় সরকারের আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতিগুলো জাতীয় পর্যায়ে কতটুকু বাস্তবায়িত হচ্ছে তা তদারক করবে। একই সঙ্গে দেবে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা। এভাবে জবাবদিহির অভাব বা দায়হীনতার সংস্কৃতির অবসান ঘটিয়ে প্রতিটি শিশুর জন্য একটি আশ্রয়স্থল, একটি কার্যকর সুরক্ষা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় কমিশন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে বলে প্রত্যাশা থাকে। শিশু অধিকার বিষয়ক যে কোন ঘটনা তদন্ত করার ক্ষমতা কমিশনের থাকা উচিত। কমিশনের দেয়া আদেশ বা নির্দেশ যে কোন ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ অবশ্যই পালন করবে এমন বিধান রাখা সঙ্গত। কমিশনের নির্দেশ অমান্যকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা বাস্তবসম্মত। এই অপরাধের শাস্তি এক বছরের কারাদ- বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দ-েও দ-িত করার বিধান যুগোপযোগী। আমরাও মনে করি, দায়িত্ব পালন বা ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষেত্রে কমিশন সর্বাবস্থায় শিশু অধিকার এবং শিশুর সর্বোত্তম স্বার্থকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেবে এবং একই সঙ্গে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ থাকবে। শিশুর বাসযোগ্য পৃথিবী নিরাপদ থাকে যেন, সে পথ অবশ্যই হবে সর্বোত্তম পন্থা।