ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

৪৭ বছরে প্রথমবার মন্ত্রী নেই কিশোরগঞ্জে

প্রকাশিত: ০৬:৪১, ৯ জানুয়ারি ২০১৯

৪৭ বছরে প্রথমবার মন্ত্রী নেই কিশোরগঞ্জে

মাজহার মান্না, কিশোরগঞ্জ, ৮ জানুয়ারি ॥ গোপালগঞ্জের পর আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় দুর্গ হিসেবে পরিচিত কিশোরগঞ্জ। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ১৮ ডিসেম্বর সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের সমর্থনে ভিডিও কনফারেন্সে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা তার বক্তৃতায়ও কিশোরগঞ্জকে নৌকার ঘাঁটি হিসেবে উল্লেখ করেন। বক্তৃতায় আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেছিলেন, ‘কিশোরগঞ্জ সব সময় নৌকার জায়গা। কাজেই এখানে নৌকার ‘বাইয়া যাও’, এটা বেয়ে যেতে হবে। এখানে আমাদের পাঁচজন আর জাতীয় পার্টির একজন। জাতীয় পার্টি যেহেতু মহাজোটে আছে, তাকে আমরা নমিনেশন দিয়েছি। কাজেই সবগুলো সিট যেন আমরা পাই।’ এ সময় তিনি আরও বলেছিলেন, ‘এটা আওয়ামী লীগের ঘাঁটি। নৌকার ঘাঁটি হিসেবেই থাকবে, এটা আমি চাই।’ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার এই প্রত্যাশাকে সম্মান জানিয়ে ছয় আসনই তাকে উপহার দিয়েছেন কিশোরগঞ্জবাসী। কিন্তু শপথ নেয়ার আগেই সবাইকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে চিরবিদায় নিয়েছেন কিশোরগঞ্জ-১ (সদর-হোসেনপুর) আসনে টানা পাঁচবারের সংসদ সদস্য কিশোরগঞ্জবাসীর অহংকার সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। রবিবার প্রিয় নেতাকে শেষ বিদায় জানাতে শোক মিছিলের শহরে পরিণত হয়েছিল কিশোরগঞ্জ। লাখো মানুষের অকৃত্রিম শ্রদ্ধা আর ভালবাসায় সিক্ত হয়ে দুপুরে অন্তিম যাত্রায় কিশোরগঞ্জ ছাড়েন শুদ্ধ রাজনীতির এই মানুষটি। অনভূতির এমন চিরপ্রস্থানে কিশোরগঞ্জবাসী যখন শোকে মুহ্যমান, তখনই আসে খবরটি। স্বাধীনতার ৪৭ বছর পর এই প্রথম মন্ত্রিপরিষদে নেই কিশোরগঞ্জ জেলার কেউ। কিশোরগঞ্জে মন্ত্রিত্বের স্বর্ণযুগ শুরু শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলামের হাত ধরে। বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেয়া সৈয়দ নজরুল ইসলাম ১৯৭২ সালের ১২ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে নতুন মন্ত্রিসভা গঠিত হলে তিনি শিল্পমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। সেই শুরুর পর মন্ত্রিত্বের দরজা আর কখনও বন্ধ হয়নি কিশোরগঞ্জের জন্য। ১৯৭৩ সালের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বঙ্গবন্ধু সরকারের মন্ত্রিসভায় কিশোরগঞ্জ জেলা দুটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় পায়। হোসেনপুর ও পাকুন্দিয়া নিয়ে গঠিত ময়মনসিংহ-২৬ আসনের সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান খান পাটমন্ত্রী এবং কটিয়াদী থানা নিয়ে গঠিত ময়মনসিংহ-২৭ আসনের সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট মনোরঞ্জন ধর আইন, সংসদ ও বিচার বিষয়ক মন্ত্রীর দায়িত্ব লাভ করেন। ১৯৭৫ সালে খন্দকার মোস্তাক আহমদের মন্ত্রিসভায় আসাদুজ্জামান খান বন্দর, নৌবাহিনী এবং অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন মন্ত্রী ছিলেন। ১৯৭৯ সালের দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর জিয়াউর রহমানের মন্ত্রিসভায়ও কিশোরগঞ্জ মন্ত্রিত্বের স্বাদ পায়। কিশোরগঞ্জ সদর আসনের সংসদ সদস্য ডাঃ আবু আহম্মদ ফজলুল করিম পান স্বাস্থ্য, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি এবং গৃণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব। ১৯৮৬ সালের তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর এরশাদের মন্ত্রিসভায়ও কিশোরগঞ্জের প্রতিনিধিত্ব অটুট থাকে। এরশাদ সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এম সাইদুজ্জামান পান অর্থ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব। এছাড়া করিমগঞ্জ-তাড়াইল নিয়ে গঠিত তৎকালীন কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হিসেবে মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পান। ১৯৮৮ সালের চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর এরশাদের মন্ত্রিসভায় কিশোরগঞ্জ থেকে ঠাঁই পান বিচারপতি হাবিবুল ইসলাম ভূঞা। তিনি আইন, সংসদ ও বিচার বিষয়ক মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯১ সালের পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বেগম খালেদা জিয়ার মন্ত্রিসভায়ও প্রতিনিধিত্ব করে কিশোরগঞ্জ। হোসেনপুর ও পাকুন্দিয়া নিয়ে গঠিত তৎকালীন কিশোরগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য এবিএম জাহিদুল হক নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হিসেবে মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পান। ১৯৯৬ সালের ১২ জুন অনুষ্ঠিত সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভায় কিশোরগঞ্জ থেকে দুইজন প্রতিনিধিত্ব করেন। তাদের মধ্যে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মোঃ জিল্লুর রহমান এলজিআরডি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী এবং প্রয়াত সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বেসরকারী বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বেগম খালেদা জিয়ার মন্ত্রিসভায় কিশোরগঞ্জ থেকে ঠাঁই পান ডঃ এম ওসমান ফারুক। ২০০৮ সালে নির্বাচিত আওয়ামী লীগের পাঁচ সংসদ সদস্যের মধ্যে মোঃ জিল্লুর রহমান রাষ্ট্রপতি, মোঃ আবদুল হামিদ স্পীকার এবং সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এলজিআরডি মন্ত্রীর দায়িত্ব লাভ করেন। আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যের বাইরে এ জেলার একমাত্র জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভায় যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৪ সালে মন্ত্রিসভায় কিশোরগঞ্জ থেকে দুইজন প্রতিনিধিত্ব করেন। তাদের মধ্যে প্রয়াত সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। এছাড়া মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু দায়িত্ব পালন করেন।
×