ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

দুই সাংবাদিকের সাজা বহাল

প্রকাশিত: ০৪:২২, ১২ জানুয়ারি ২০১৯

দুই সাংবাদিকের সাজা বহাল

মিয়ানমারে কারাদন্ডপ্রাপ্ত রয়টার্সের দুই সাংবাদিক ওয়া লোন (৩২) ও কিয়াও সোয়ে ওওর (২৮) আপীল আবেদন শুক্রবার খারিজ করে দিয়েছে দেশটির হাইকোর্ট। আশা করা হচ্ছিল তারা শীঘ্রই মুক্তি পাবেন। তবে তা আরও বিলম্বিত হলো। ওই সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে সাত বছরের দন্ড দেয়া হয়। এনডিটিভি। রায়ে হাইকোর্টের বিচারক অং নাইং বলেন, নিজেদের নির্দোষ প্রমাণ দাবির পক্ষে তারা যথেষ্ট প্রমাণ উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হয়েছেন। এটা তাদের জন্য উপযুক্ত শাস্তি। দুই সাংবাদিক জার্নালিস্টিক ইথিকস মেনে চলেননি। তাদের ফাঁদে ফেলে আটক করার বিষয়টি নিয়ে আদালত নিশ্চিত হতে পারেনি। তাই এই আপীল খারিজের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। রায়ের বিপক্ষে তারা সুপ্রীমকোর্টে আপীল করতে পারবেন। ছয় মাসের মধ্যে তা শুরু করতে হবে। আদালতের সিদ্ধান্তে সাংবাদিকদের স্ত্রীরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তারা এই রায়ের তীব্র নিন্দা জানান। আদালতে যখন রায় ঘোষণা করা হয় তখন দন্ডপ্রাপ্ত দুই সাংবাদিক সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে মিয়ানমারের একটি নিম্ন আদালত সাংবাদিক লোন ও ওওরকে দোষী সাব্যস্ত করে দন্ড দেয়। ইয়াঙ্গুনের জেলা জজ আদালতের ওই রায়ের পর বিশ্বজুড়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। মানবাধিকার ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংগঠন মিয়ানমারের সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। শুক্রবারের রায়ের পর বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রধান সম্পাদক স্টেফেন এক বিবৃতিতে বলেন, ওয়া লোন ও কিয়াও সোয়ে ওওর ওপর যেসব নিপীড়ন চালানো হচ্ছে আজকের রায় সেসব অন্যায়ের একটি। তারা এখনও গরাদের পেছনে থাকার একটাই কারণ: যারা ক্ষমতায় আছে তারা সত্যের মুখ বন্ধ করতে চাইছে। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি আরও বলেন, সংবাদ সংগ্রহ করা অপরাধ নয়। যতক্ষণ পর্যন্ত মিয়ানমার এই ভয়ঙ্কর ভুল শুধরে না নেবে ততক্ষণ পর্যন্ত দেশটিতে সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা আসবে না। মিয়ানমার আইনশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা ও গণতন্ত্রের চর্চার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সেটা নিয়েও সন্দেহ থেকে যাবে। মিয়ানমারে নিযুক্ত ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ) দূত ক্রিস্টিয়ান স্কিমিড বলেন, তিনি এখন মিয়ানমারের প্রেসিডেন্টের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন। যাতে তিনি এই অন্যায়কে ঠিক করে তাদের ক্ষমা করে দেন। গতমাসে আপীল আবেদনের শুনানিতে দুই সাংবাদিকের আইনজীবীরা তাদের কাছে পুলিশের ফাঁদ পাতার প্রমাণ থাকার এবং তাদের মক্কেলদের বিরুদ্ধে অপরাধের পর্যাপ্ত প্রমাণ না থাকার দাবি করেন। নিম্ন আদালত এই মামলা ভুলভাবে উপস্থাপন করে নিজেদের নির্দোষ প্রমাণের দায় দুই সাংবাদিকের ওপর চাপিয়ে দিয়েছেন বলেও অভিযোগ করেন তারা। তারা বলেন, রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্য সংগ্রহ এবং তা মিয়ানমারের শত্রুদের কাছে পাচার করে জাতীয় নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলার অভিযোগের সপক্ষে প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। সরকার পক্ষের আইনজীবী খিনে সোয়ে বলেন, আপীলের শুনানির সময় দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গোপন নথি সংগ্রহ এবং তা নিজেদের কাছে রাখার প্রমাণ পাওয়া গেছে। জাতীয় নিরাপত্তা ও জাতীয় স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত করাই তাদের উদ্দেশ্য ছিল। যে সময় ওই দুই সাংবাদিক আটক হন তখন তারা দশ রোহিঙ্গার হত্যাকান্ডের ওপর অনুসন্ধান চালাচ্ছিলেন। প্রকৃত বিচার নিয়ে বিশ্বব্যাপী দাবির পরিপ্রেক্ষিতে মার্কিন ভাইস-প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সও তার মত দেন। তিনি মিয়ানমারের বিচার ব্যবস্থা নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান। দেশের বাইরে রয়টার্সের দুই সাংবাদিক গণমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রতীক হিসেবে পরিণত হন। তাদের ২০১৮ সালে টাইম ম্যাগাজিন হত্যার শিকার ও নিহত সাংবাদিকদের সঙ্গে যৌথভাবে পার্সন অব দ্য ইয়ার ঘোষণা করে। তবে মিয়ানমারে তাদের প্রতি সামান্যই সহমর্মিতা দেখা যায়। ২০১৭ সালে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর সামরিক বাহিনীর অভিযানের পরিপ্রেক্ষিতে সাত লাখ ২০ হাজার লোক সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে চলে এসেছে।
×