ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ইতিহাসের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা ‘ডেল্টা প্ল্যান ২১০০’

প্রকাশিত: ০৪:২৭, ১২ জানুয়ারি ২০১৯

ইতিহাসের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা ‘ডেল্টা প্ল্যান ২১০০’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ‘ডেল্টা প্ল্যান ২১০০’ বা বাংলাদেশ বদ্বীপ পরিকল্পনা ইতিহাসের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা উল্লেখ করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পানি ও ভূসম্পদ ব্যবস্থাপনাকে মূল বিবেচনায় নিয়ে এই পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এটি একটি বিজ্ঞানসম্মত পরিকল্পনা। এই প্রথম কোন পরিকল্পনা জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে করা হয়েছে। জাতীয় কোন প্ল্যানের সঙ্গে এর কোন অসঙ্গতি নেই বলে তারা উল্লেখ করেন। শুক্রবার খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ মিলনায়তনে ২ দিনব্যাপী বদ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০ এবং বাংলাদেশের স্থায়িত্বশীল উন্নয়ন বিষয়ক বিশেষ সম্মেলনে তারা এই মত প্রকাশ করেন। পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্ট নেটওয়ার্ক (বেন) সহ ৪০ টি পরিবেশবাদী সংগঠনের পক্ষ থেকে এই সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সম্মেলনে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব ড. শামসুল আলম ডেল্টা প্ল্যানের ইতিবাচক দিক তুলে ধরে বলেন, দেশে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এখানে দিন দিন দৃশ্যমান হয়ে পড়ছে। আইপিসিসি প্যানেলের রিপোর্টেও বাংলাদেশকে বিশ্বের ষষ্ঠ দুর্যোগপূর্ণ দেশ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। আড়াই বছর ধরে জলাবায়ু পরিবর্তন নিয়ে ২৬টি গবেষণার তথ্য নিয়ে ডেল্টা প্ল্যান করা হয়েছে। এটি এক শ’ বছরের প্ল্যান হলেও বাস্তবায়ন হবে পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার অধীনে। ফলে এই প্ল্যানে যদি কোন কিছু ঘাটতি থাকে তাহলে পরের পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় নতুন করে তা আপডেট করা সম্ভব হবে। এটিকে তিনি দেশের নিজস্ব পরিকল্পনা উল্লেখ করে বলেন, ডেল্টা পরিকল্পনা অনুযায়ী বন্যা ও জলাবদ্ধতার হাত থেকে রক্ষা পেতে অধিকহারে পোল্ডার নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে। পোল্ডারের মাধ্যমে বন্যা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হবে। এতে বন্যায় কোন ক্ষতির আশঙ্কা নেই। পোল্ডার হলে দেশকে বন্যার হাত থেকে যেমন রক্ষা করা যাবে, তেমনি এসব এলাকায় তিনটি করে ফসল উৎপাদন করা যাবে। দেশে যেসব পোল্ডার রয়েছে তা মূলত রক্ষণাবেক্ষণের কারণে কোন কাজে আসছে না। এটি ঠিক মতো রক্ষণাবেক্ষণ করা গেলে তখন কোন সমস্যা থাকবে না। উপকূলীয় এলাকায় যেসব স্লুইসগেট রয়েছে সেগুলো নতুন করে ডিজাইন করতে হবে। তিনি বলেন, খুলনায় যেসব জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে তা পোল্ডারের কারণে নয়। মূলত মনুষ্য সৃষ্ট কারণে। অনেকে বাঁধ কেটে ড্রেনেজ সিস্টেম না করে মাছ চাষ করছে। ফলে দেখা দিচ্ছে জলাবদ্ধতা। ঢাকা ডিএনডি বাঁধে অভ্যন্তণে যে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে তা পরিকল্পনায় ভুল থাকার কারণে হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন। বলেন বাঁধের অভ্যন্তরে কোন ড্রেনেজ সিস্টেম না থাকায় বন্যার কবলে পড়ছে। নদীগুলোর চ্যানেল করে প্রবাহ ঠিক রাখতে হবে। দেশের অভ্যন্তরে প্রবাহিত নদীগুলো অধিক এলাকাজুড়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে বন্যার সময় দীর্ঘ এলাকা যেমন ডুবে থাকছে, শুষ্ম মৌসুমে এসব এলাকা চর পড়ে যাচ্ছে। চ্যানেল করে প্রবাহ ঠিক রাখলে নদীর পানি উপচে অন্য এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা থাকবে না। এ জন্য প্রতি বছর নদী ড্রেজিংয়ের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, বদ্বীপ পরিকল্পনায় সারাদেশে নৌ পরিবহন ব্যবস্থা সচল রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। কারণ এটি এখনও সহজ লভ্য পরিবহন ব্যবস্থা। চলনবিল উদ্ধারে করে পূর্বের অবস্থা ফিরে আনার বিষয়টি ডেল্টা প্ল্যানে উল্লেখ করা হয়েছে। খাল বিল ও পুকুর উদ্ধার ও খনন করার বিষয়টি এই পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ঢাকার শহরের খাল উদ্ধারে জোর দেয়া হয়েছে এই প্ল্যানে। এছাড়া জেলাভিত্তিক খাল উদ্ধারের কথা বলা হয়েছে।
×