ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিষয়টি এখনও উদ্বেগজনক

দেশে দৈনিক গড়ে ১৪ মা প্রসবজনিত কারণে মারা যান

প্রকাশিত: ০৪:২৭, ১২ জানুয়ারি ২০১৯

 দেশে দৈনিক গড়ে ১৪ মা প্রসবজনিত কারণে মারা যান

নিখিল মানখিন ॥ দেশে প্রতিদিন গড়ে ১৪ মা প্রসবজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করছেন। মাতৃ স্বাস্থ্যসেবার মান বাড়লেও এখনও মাত্র ৫৫ শতাংশ মায়ের ‘নিরাপদ মাতৃত্ব’ সুবিধা নিশ্চিত করতে পেরেছে সরকার। গর্ভকালীন শতকরা ১৪ মহিলাই নানাবিধ ঝুঁকিপূর্ণ জটিলতায় ভোগেন, যা মাতৃমৃত্যুর জন্য বহুলাংশে দায়ী। প্রসব পরবর্তী রক্তক্ষরণ, খিঁচুনি, গর্ভকালীন জটিলতা, ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভাবস্থা ও পরিবারের অবহেলা মাতৃমৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ। তবে শতকরা ৫১ ভাগ মৃত্যুই রক্তক্ষরণ ও খিঁচুনির জন্য হয়ে থাকে। শতকরা মাত্র ৬৮ ভাগ গর্ভবতী মহিলা একটি প্রসবপূর্ব সেবা এবং ২৬ ভাগ মহিলা চারটি প্রসবপূর্ব সেবা গ্রহণ করে থাকেন। পাশাপাশি বেড়েছে সিজারিয়ান পদ্ধতিতে সন্তান নেয়ার প্রবণতা, যা অনেকাংশেই মাতৃ স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি। ৫৮ শতাংশ গর্ভবতীর ডেলিভারি হয় অশিক্ষিত ধাত্রী বা আত্মীয়-স্বজনের হাতে। ক্লিনিক বা হাসপাতালে প্রসব হয়ে থাকে মাত্র ৩৭ শতাংশ গর্ভবতীর। মা ও শিশু মৃত্যুর অন্যতম কারণ বাড়িতে প্রশিক্ষণহীন ধাত্রী বা আত্মীয়স্বজনের হাতে প্রসবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদফতর, পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতর ও পপুলেশন কাউন্সিল সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। মাত্র ৪২ শতাংশ প্রসব প্রশিক্ষিত সেবিকার হাতে ॥ ডেমোগ্রাফিক এ্যান্ড হেলথ সার্ভের সর্বশেষ রিপোর্টে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে প্রতি বছর ৩১ লাখ শিশু জন্ম দিতে গিয়ে ৫ হাজার ২৭০ মারা যান। অর্থাৎ ৬শ’ শিশু জন্ম দিতে গিয়ে একজন মা মারা যায়। মাত্র ৪২ শতাংশ প্রসব প্রশিক্ষিত সেবিকার হাতে হয়ে থাকে, বাকি ৫৮ শতাংশ গর্ভবতীর ডেলিভারি অপ্রশিক্ষিত ধাত্রী বা আত্মীয়-স্বজনের হাতে হয়। এর মধ্যে আবার ৬৩ শতাংশ গর্ভবতীর প্রসব বাড়িতে হয় আঁতুরঘরে। মাত্র ৩৭ শতাংশ গর্ভবতীর ক্লিনিক বা হাসপাতালে প্রসব হয়ে থাকে। মা ও শিশু মৃত্যুর অন্যতম কারণ বাড়িতে অপ্রশিক্ষিত ধাত্রী বা আত্মীয়স্বজনের হাতে প্রসব করানোয়। কিশোরী মায়ের সংখ্যা বৃদ্ধি, স্থায়ী পদ্ধতি গ্রহণে অনীহা ॥ বাংলাদেশে জননীতি ও স্বাস্থ্য জরিপের (বিডিএইচএস) এর সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের যেসব দেশে কিশোরীদের মধ্যে গর্ভধারণের হার বেশি, বাংলাদেশ তার অন্যতম। এদেশের মহিলাদের প্রায় অর্ধেকের বয়স বিয়ের সময়ে ১৮ বছরের কম থাকে। আর শতকরা ৫৮ ভাগ ২০ বছরের আগেই প্রথম সন্তানের মা হন। এ বয়সে যথাযথ যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য তথ্য ও সেবাপ্রাপ্তির সুযোগ অপর্যাপ্ত। দেশে প্রতি হাজার শিশুর জন্ম দিতে গিয়ে ২ দশমিক ৯ মা মারা যান। তাদের মধ্যে কিশোরী মায়ের সংখ্যাই বেশি। অপূর্ণ চাহিদার ক্ষেত্রে একটি উদ্বেগজনক বিষয় হলো, ১৫ থেকে ১৯ বছরের বিবাহিত মহিলাদের মধ্যেই অপূর্ণ চাহিদার হার সবচেয়ে বেশি। এ হার ১৯.৮ শতাংশ। তাদের মধ্যে মাত্র ৩৭.৬ শতাংশ পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি ব্যবহার করেন। ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই দেশের ৬৬ শতাংশ কিশোরীর বিয়ে হয়। আর বিবাহিতদের মধ্যে কিশোরী অবস্থাতেই গর্ভধারণ করেন শতকরা ৬৪ দশমিক ৩ ভাগ। এই হিসেবে দেশের ১৬ মিলিয়ন কিশোরী প্রতিবছর সন্তান জন্ম দেয়। শহরের তুলনায় গ্রামে কিশোরী অবস্থায় মা হওয়ার প্রবণতা বেশি। প্রসূতি নিয়ে ব্যবসা ॥ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সিজারিয়ান সেকশন এখন দেশের বেশিরভাগ প্রাইভেট হাসপাতাল-ক্লিনিকের বড় ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। এ প্রবণতা রোধ করা তো যাচ্ছেই না, বরং দিন দিন প্রাইভেট হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলো আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে। কোন প্রসূতি পেলেই প্রাইভেট হাসপাতাল-ক্লিনিকে এক শ্রেণীর চিকিৎসক থেকে শুরু করে সবাই বিভিন্ন অজুহাতে রোগীকে নরমাল ডেলিভারির ব্যাপারে কৌশলে মানসিকভাবে ভীতসন্ত্রস্ত করে তোলে। এমনকি সিজার না হলে মা কিংবা নবজাতকের ক্ষতি হওয়ার ভয়ও দেখানো হয় অনেক ক্ষেত্রে। নিরুপায় হয়ে প্রসূতি ও তার স্বজনরা নিরাপদ মাতৃত্ব ও সুস্থ সন্তানের স্বার্থে হাসপাতালের প্রত্যাশায় সায় দেয়। আর সিজারিয়ানের মাধ্যমে প্রসব পদ্ধতিতে রাজি হলেই শুরু হয় টাকা হাতানোর হিসাব কষাকষি।
×