ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ধানের বাম্পার ফলনের পরও ভরা মৌসুমে বেড়েছে চালের দাম

চালের বাজার হঠাৎ অস্থির, জড়িত অসাধু চক্র

প্রকাশিত: ০৫:০৪, ১২ জানুয়ারি ২০১৯

 চালের বাজার হঠাৎ অস্থির, জড়িত অসাধু চক্র

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ উৎপাদন এলাকায় দাম বৃদ্ধির প্রভাবে ঢাকার বাজারে বেড়েছে চালের দাম। বেড়েছে দেশের অন্যান্য স্থানেও। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সরকারের পক্ষ থেকে বাজারে কঠোর তদারকি থাকায় ব্যবসায়ীরা দাম বাড়াতে পারেনি। নির্বাচনের পর হঠাৎ সক্রিয় হয়ে উঠেছে অসাধু সিন্ডিকেট। আর অসাধু চক্রের কারসাজিতে ধানের বাম্পার ফলনের পরও ভরা মৌসুমে বেড়েছে চালের দাম। তবে শীঘ্রই চালের দাম কমবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। শুক্রবার গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধুর মাজার জিয়ারত শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, চালের দাম বাড়ানোর কোন সুযোগ নেই। দেশে সরকারী- বেসরকারী পর্যায়ে চালের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। তিনি বলেন, দাম কমাতে সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেয়া হবে। শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খুচরা পর্যায়ে কেজিতে ২ থেকে ৪ টাকা পর্যন্ত চালের দাম বেড়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, মিলাররা বেশি দামে চাল বিক্রি করছেন। এর প্রভাব পড়েছে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে। প্রতিকেজি ভালমানের মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৪৮ টাকায়। এছাড়া চায়না স্বর্ণা ও ইরি মোটা ইরি চালও ৪০/৪২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। সবচেয়ে ভালমানের মিনিকেট সংগ্রহ করতে ক্রেতাকে গুনতে হচ্ছে ৬০/৬৫ টাকা পর্যন্ত। এছাড়া মাঝারি মানের পাইজাম ও লতা ৪৮ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কাপ্তান বাজারের নূরু রাইস এজেন্সির মালিক নূরুল ইসলাম নূরু জনকণ্ঠকে বলেন, সারাদেশে চালের দাম বেড়েছে। বিশেষ করে দিনাজপুর, নওগাঁ ও কুষ্টিয়ার মোকামে চালের দাম বেশি। মিলমালিকরা বাড়তি দামে চাল বিক্রি করছেন। এর কারণে পাইকারিতেও দাম বেড়েছে। এতে খুচরা পর্যায়ে দাম বাড়াই স্বাভাবিক। তিনি বলেন, নির্বাচনের পরপরই মিলাররা চালের দাম বাড়ানোর অপচেষ্টা চালাতে থাকে। সেই অপচেষ্টায় তারা সফল, আর এ কারণেই দাম বেশি। তার মতে খুচরা পর্যায়ে চাল মজুদের কোন সুযোগ নেই। সপ্তায় সপ্তায় চাল এনে তাদের বিক্রি করতে হয়। এছাড়া মূলধনও সামান্য। তিনি বলেন, নির্বাচনের আগে বেশ কয়েক মাস চাল নিয়ে কেউ দাম বাড়ানোর সুযোগ পায়নি। সে সময় বাজার মনিটরিং ব্যবস্থাও কঠোর ছিল। এদিকে, চালের বাজার হঠাৎ অস্থির হওয়ায় পাইকারি ব্যবসায়ীরাও বলছেন, মিল মালিকদের দাম বৃদ্ধিতে বেশি দামে বেচতে হচ্ছে তাদের। অপরদিকে মালিকরা বলছেন বাজারে ধানের সঙ্কট থাকায় এর প্রভাব পড়েছে চালের বাজারে। যদিও গত কয়েক বছরের মধ্যে এবার আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। এছাড়া সামনের বোরোর উৎপাদন ভাল হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন সংশ্লিষ্টরা। উৎপাদন ভাল হওয়ার পরও চালের দাম বেশি হওয়ায় অসুবিধায় পড়েছে স্বল্প আয় ও দিন মজুর শ্রেণীর মানুষ। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে পর্যায়ক্রমে প্রতিবস্তা (৫০ কেজি) চালের দাম বেড়েছে ১৫০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত। কাওরান বাজারে চাল কিনতে আসা রিক্সাচালক বারেক মিয়া বলেন, চালের দাম বাড়লেও খেতে হবে, তাই আমাদের কিছু করার নেই। বেশি দাম দিয়ে চাল কেনা হয়েছে। তিনি বলেন, দাম বাড়িয়ে আমাদের মতো গরিব মানুষকে কষ্টে ফেলা হয়েছে। তিনি বলেন, মোটা চালের দাম সহনীয় হওয়া প্রয়োজন। সেই সঙ্গে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকারের মনিটরিং কঠোর হতে হবে। নইলে চালের দাম বাড়বেই। একই বাজারের চালের পাইকারি ব্যবসায়ী বাবুল গাজী জানান, আমরা যে দামে কিনি তার থেকে সামান্য লাভ করে বিক্রি করি। চালের দাম আমাদের ওপর নির্ভর করে না। মিলমালিকরা বাজারে চালের সঙ্কট সৃষ্টি করে দাম বাড়িয়েছে। এ কারণে আমাদেরও বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। বিক্রি করতে হচ্ছে বাড়তি দামে। এদিকে, চালের বর্তমান বাজার পরিস্থিতি নিয়ে ইতোমধ্যে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে একটি বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে মিলমালিক ও চাল সংশ্লিষ্ট অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে নতুন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার চালের সরবরাহ বাড়াতে মিল মালিকদের নির্দেশ দেন। অন্যদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেও বাজার মনিটরিং জোরদারের কথা জানানো হয়েছে। সরকারের এসব উদ্যোগে চালের দাম কমতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
×