ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মোহিত কামালের তিন উপন্যাস সমগ্রের প্রকাশনা উৎসব

প্রকাশিত: ০৫:১০, ১২ জানুয়ারি ২০১৯

 মোহিত কামালের তিন উপন্যাস সমগ্রের প্রকাশনা উৎসব

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গত ২ জানুয়ারি ছিল কথাসাহিত্যিক ও মনোচিকিৎসক মোহিত কামালের ৬০তম জন্মদিন। এ উপলক্ষে শুক্রবার একসঙ্গে প্রকাশিত হলো লেখকের তিনটি উপন্যাসসমগ্র। চারটি উপন্যাসে সাজানো উপন্যাসসমগ্র তিনটি হচ্ছে ‘মনোভুবন’, ‘চলার পথে ফাঁদ’ ও ‘জীবনঝঞ্ঝা’। অনিন্দ্য প্রকাশ থেকে প্রকাশিত তিন উপন্যাস সমগ্রের প্রকাশনা উৎসব অনুষ্ঠিত হলো শুক্রবার। বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। একই আয়োজনে লেখককে জন্মদিনের ফুলের ভালবাসা জানায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানসহ বিশিষ্টজনরা। রেজওয়ানা চৌধুরীর রবীন্দ্রসঙ্গীত পরিবেশনার মাধ্যমে শুরু হয় অনুষ্ঠান। শ্রোতার হৃদয় রাঙিয়ে শিল্পী গেয়ে শোনান প্রার্থনাসঙ্গীত ‘আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে বিরাজ সত্যসুন্দর’ ও ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলো রে’ শিরোনামের দুটি গান। এরপর মোড়ক উন্মোচন করেন অতিথিরা। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজ ও শিশু একাডেমির চেয়ারম্যান কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। গ্রন্থটি নিয়ে আলোচনা করেন রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ, প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হরিশংকর জলদাস ও শিশুসাহিত্যিক আখতার হুসেন। সভাপতিত্ব করেন সাবেক মুখ্য সচিব কবি কামাল চৌধুরী। স্বাগত বক্তব্য দেন অনিন্দ্য প্রকাশের প্রকাশক আফজাল হোসেন। অনুভূতি প্রকাশ করে বক্তব্য দেন মোহিত কামাল। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সেলিনা হোসেন বলেন, এই আয়োজনে বইয়ের জন্মের সঙ্গে সমান্তরালে উদ্্যাপিত হলো লেখকের জন্মদিন। মোহিত কামাল গদ্যভাষা অত্যন্ত সৃজনশীল। লেখনীর মাধ্যমে তিনি মাদক ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। সময়ের ক্রান্তিকালকে উপেক্ষা না করে তিনি ধারণ করেছেন সাহিত্যে। হতাশার বদলে তরুণ প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়েছেন আশার আলো। তাদের মনোজগতের আলোড়ন তোলার চেষ্টা করেছেন। সাহিত্যের ভেতর দিয়ে মননশীল সমাজ গড়ার কাজটি করে যাচ্ছেন নিরবচ্ছিন্নভাবে। এভাবেই বাংলা সাহিত্যে নতুন মাত্রা যুক্ত করেছেন মোহিত কামাল। আলোচনায় বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, এই লেখকের উপন্যাস, ছোটগল্প, শিশুতোষ রচনা পাঠকপ্রিয়। তার লেখালেখি আমাদের প্রাণিত করে। কারণ, জীবনকে তিনি দেখেছেন ইতিবাচকভাবে। নষ্ট জীবনের আরাধনার বদলে সাহিত্যের আশ্রয়ে বলেছেন কল্যাণময় জীবনের কথা। তার রচিত ‘উড়াল বালক’ নামের বইটির শিশু-কিশোরদের স্বপ্নমুখী করে তোলে। তার লেখার ভাষা সহজ এবং বর্ণনাভঙ্গি জটিলতামুক্ত। সাহিত্যের মাধ্যমে মননশীল মানুষ তৈরির আকাক্সক্ষায় লিপ্ত এই লেখক। হরিশংকর জলদাস বলেন, মাত্র ১২ বছরের লেখক জীবনে ১৭টি উপন্যাস লিখেছেন মোহিত কামাল। তার লেখনীর মধ্যে রয়েছে বোধ ও বুদ্ধির প্রাধান্য। ছোট ছোট অপরিহার্য শব্দটিকে বেছে নেন অনায়াসে। ঢাকা শহর, উচ্চবিত্ত শ্রেণী কিংবা আধুনিক তরুণ-তরুণীরা হয় তার লেখার পটভূমি। লেখকের প্রতি অনুরোধ, তিনি আগামীতে গ্রামীণ জীবন নিয়ে কিছু লিখবেন। আখতার হুসেন বলেন, আমার অবাক লাগে, মোহিত কামালের মতো একজন তুমুল কর্মব্যস্ত মনোচিকিৎসক কেমন করে মধ্যপ্রাচ্যের শ্রমিকদের উপজীব্য করে ‘মরুঝড়’ নামের উপন্যাস নির্মাণ করেন। বাংলা ভাষায় মধ্যপ্রাচ্যের শ্রমিকদের নিয়ে এটাই প্রথম উপন্যাস। সেই সূত্রে এই লেখক একজন পর্যবেক্ষণশীল মানুষ। তার সাহিত্য অভিযাত্রা উন্মোচিত করেছে নতুন দিগন্ত। ‘উড়াল বালক’ ও ‘সুস্মিতার বাড়ি ফেরা’ বই দুটিও আমাকে মুগ্ধ করেছে। চরিত্র অঙ্কনে তিনি মুনশীয়ানার পরিচয় দেন। মনস্তত্ত্ববিষয়ক উপন্যাসে যোগ করেছেন নতুন মাত্রা। জীবনকে দেখার প্রতিফলন ঘটে তার লেখায়। মোহিত কামালকে নিবেদিত আশীর্বচনে অংশ নেন কবি আসাদ চৌধুরী নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার। তার জীবনী পাঠ করেন স্বীকৃতি বড়ুয়া। লেখকের লেখার নির্বাচিত অংশ পাঠ করেন আবৃত্তিশিল্পী তাহেরা আফরোজ। তিনটি উপন্যাসসমগ্রেরই প্রচ্ছদ এঁকেছেন ধ্রুব এষ। প্রতিটি উপন্যাসসমগ্রের মূল্য ধরা হয়েছে ১ হাজার টাকা।
×