ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

খাঁজকাটা পাইল বসেছে পাঁচটি, বটম তৈরি চারটির

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ১২ জানুয়ারি ২০১৯

  খাঁজকাটা পাইল  বসেছে পাঁচটি, বটম তৈরি চারটির

মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল, মুন্সীগঞ্জ থেকে ॥ পদ্মা সেতুর খাঁজকাটা (ট্যাম) পাইল বসে গেছে পাঁচটি। আরও চারটি পাইলের বটম সেকশন হয়েছে। বিশে^র প্রথম এই খাঁজকাটা পাইলের সফল স্থাপনের মধ্য দিয়ে পদ্মা সেতুর কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে উন্নীত হলো। শুক্রবার সন্ধ্যায় দায়িত্বশীল প্রকৌশলীগণ সর্বশেষ তথ্য দিয়ে জানান, সেতুর ৩২ নম্বর খুঁটিতে ৩টি খাঁজকাটা পাইল বসে গেছে। আর ৩১ নম্বর খুঁটিতে বসেছে দুটি পাইল। আর ৩১ নম্বর খুঁটিতে আরও একটি পাইলের বটম সেকশন হয়েছে। এছাড়া মাওয়া প্রান্তের ৮ নম্বর খুঁটিতে আরও তিনিটি খাঁজকাটা পাইলের বটম সেকশন বসেছে। ১১টি খুঁটিতে মোট ৭৭টি খাঁজকাটা পাইল বসবে। নদীতে ৪০টি খুঁটির মধ্যে মোট ২৬২টি পাইল বসবে। তার মধ্যে এই নিয়ে ১৯০টি পাইল বসে গেছে। এখন বাকি রয়েছে এখন ৬৮টি পাইল এবং চারটি পাইলের টপ সেকশন। পদ্মা সেতুর পাইল স্থাপনের সঙ্গে সঙ্গে খুঁটিও উঠছে সমানে। ৩৬ নম্বর খুঁটির পর এখন ৩৫ নম্বর খুঁটিও সম্পন্ন হওয়ার পথে। এদিকে ৩৬ নম্বর ও ৩৭ নম্বর খুঁটির ওপর বসতে যাচ্ছে সেতুর ৬ষ্ঠ স্প্যান। এই স্প্যান বসানোর জন্য সব কিছুই ঠিকঠাক। এখন বাদ সেধেছে শুধু নাব্য সঙ্কট। স্প্যান বহন করার জন্য ভাসমান ক্রেনবাহী জাহাজ বসে আছে কুমারভোগস্থ বিশেষায়িত ওয়ার্কসপের ঘাটে। স্প্যানও প্লেস করা আছে। কিন্তু নাব্য সঙ্কটের কারণে রওনা হতে পারছে না। এই তথ্যদিয়ে প্রকৌশলীগণ জানিয়েছেন, দিনরাত পদ্মা সেতুর চ্যানেলে নাব্য সঙ্কট কাটাতে কাজ চলছে। কিন্তু প্রায় তিন হাজার টন ওজনের স্প্যান নিয়ে বিশাল এই ভাসমান ক্রেন যাওয়ার মতো পানি নদীতে নেই। এখন চায়না মেজর ব্রিজ কোম্পানির তিনটি ড্রেজার এবং স্থানীয় আরও চারটি ড্রেজারসহ সাতটি ড্রেজার কাজ করছে। তবে নদী শাসনের কাজে থাকা সিনো হাইড্রো কোম্পানির উচ্চ ক্ষমতার তিনটি ড্রেজার এই চ্যানেলে নাব্য ফিরিয়ে আনার কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও দিন দশেক আগে নদী শাসনের কাজে জাজিরা প্রান্তে ফিরে গেছে। তাই ড্রেজিংয়ে কাজটি কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। দায়িত্বশীল এক প্রকৌশলী জনকণ্ঠকে জানান, মাঝেরচর নামের বিশাল চর কেটে সেতুর জন্য যে চ্যানেল করা হয়েছিল, তার প্রায় পুরোটাতে ব্যাপকভাবে পলি জমেছে। একরকম নতুন করে চ্যানেল কাটার মতোই আবার ড্রেজিং করতে হয়েছে বা হচ্ছে। অব্যাহত ড্রেজিংয়েও চ্যানেলটিতে নাব্য ফিরে না আসার কারণে মধ্য জানুয়ারিতে যে ৬ এফ নম্বর স্প্যান স্থাপনের কথা ছিল, তা সম্ভব হচ্ছে না। তাই চলতি জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে স্প্যানটি বসানো সম্ভব হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে নাব্য সমস্যার কারণে এখনও নতুন তারিখ নির্ধারণ করা যায়নি। অন্যদিকে চীন থেকে রওনা হয়ে সমুদ্র পথে আরও দু’টি স্প্যান মংলা সমুদ্র বন্দরের কাছাকাছি রয়েছে। শীঘ্রই এই দু’টি স্প্যান মাওয়ার কুমারভোগের বিশেষায়িত ওয়ার্কসপে নিয়ে আসা হবে। এ পর্যন্ত ১৯টি স্প্যান চীন থেকে মাওয়ায় পৌঁছেছে। এর মধ্যে ৫টি স্প্যান জাজিরা প্রান্তে স্থায়ীভাবে স্থাপন করা হয়েছে। আরেকটি স্প্যান মাওয়া প্রান্তে খুঁটির ওপর বসানো হয়েছে। তবে এটি ৬ ও ৭ নম্বর খুঁটি সম্পন্ন হওয়ার পর সরিয়ে নেয়া হবে। বাকি ১৩টি খুঁটি রয়েছে কুমারভোগের বিশেষায়িত ওয়ার্কসপে। দু’টি অর্থাৎ ৬এফ ও ৬ নম্বর স্প্যান ফিটিং ও চূড়ান্ত রং করার পর এখন ঘাটের পাশে রাখা হয়েছে। এই দু’টি স্প্যানই এখন স্থাপন করার মতো। এছাড়া ৭টি স্প্যান ফিটিং করার পর এখন পেন্টিং ওয়ার্কসপে রয়েছে বা যাওয়ার জন্য প্রস্তুত আছে। আরও তিনটি স্প্যান ওয়েল্ডিং করে ফিটিংয়ের কাজ চলছে। বাকি একটি স্প্যানের খ-িত যন্ত্রাংশ রাখা আছে। ফিটিংয়ের স্থান খালি হলেই এটিরও ফিটিং কাজ শুরু হবে। এই প্রকৌশলী জানান, বিশাল আকৃতির এই স্প্যান রাখারও জায়গা সংকুলান হচ্ছে না। তাই চীনে স্প্যান তৈরি হয়ে থাকা সত্ত্বে আনা যাচ্ছে না। তবে এখন যেভাবে খুঁটি উঠে গেছে, তাই খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে একরপর এক স্প্যান উঠতে থাকবে। সেতুতে বসে যাওয়া স্প্যানে এখন স্লাব বসানোর কাজ চলছে। এরই মধ্যে ১১২টি রেলওয়ে স্লাব বসে গেছে। কাজ চলছে একেরপর এক স্লাব তৈরির। তিন হাজারেও বেশি স্লাব প্রয়োজন হবে। এ পর্যন্ত রেলওয়ে স্লাব তৈরি হয়েছে ১২শ’র বেশি। এই রেলওয়ে স্লাব তৈরি হচ্ছে মাওয়া প্রান্তের কুমারভোগ ওয়ার্কসপে। আর রোড ওয়ে স্লাব হচ্ছে দু’পাড়েই। কুমারভোগ ওয়ার্কসপে রোড ওয়ে স্লাব হয়েছে ৬৪টি, ওপারের জাজিরা প্রান্তের ওয়ার্কসপে তৈরি হয়েছে আরও ১৯১ রোড ওয়ে স্লাব। এদিকে সেতুর সব খুঁটি নক্সা অনুমোদন হলেও সবার আগে শুরু হওয়া সেতুটির মাওয়া প্রান্তে ৬ ও ৭ নম্বর খুঁটির নক্সা সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জও সফল সমাপ্তি হচ্ছে। নক্সাটি চূড়ান্ত হয়েছে উল্লেখ করে দায়িত্বশীল প্রকৌশলী জানান, এটি এখন অনুমোদন পর্যায়ে রয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যেই অনুমোদিত এই নক্সা হাতে এসে পৌঁছবে। ৬.১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ মূল সেতুর পাশাপাশি এখন প্রায় ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ সংযোগ সেতুর (ভায়াডাক্ট) কাজও অনেক এগিয়ে গেছে। জাজিরা প্রান্তের ৪০টি খুঁটির মধ্যে ১৩টি খুঁটি সম্পূর্ণ হয়েছে এবং আরও ২২টি খুঁটি উঠে যাওয়ার চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। মাওয়া প্রান্তের এই সংযোগ সেতুর ৩৯টি খুঁটির মধ্যে ৫টি খুঁটি সম্পন্ন হয়েছে। আরও ১৮টির কাজ খুঁটিও উপরের দিকে অনেকাংশ উঠে গেছে। এদিকে ৯ ও ১০ জানুয়ারি অর্থাৎ বুধ ও বৃহস্পতিবার পদ্মা সেতুর মাসিক অগ্রগতি সভা হয়েছে সেতুটির প্রকল্প পরিচালকের সভাপতিত্বে। বুধবার ছিল মূল সেতুর সভা। এই সভায় সেতুর অগ্রগতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। সেখানেও নাব্য সঙ্কট গুরুত্বপায়। বৃহস্পতিবার ছিল সেতুর নদী শাসনের কাজের মাসিক অগ্রগতি সভা। এই সভায়ও নদী শাসন কাজ দ্রুত এগিয়ে নেয়ার তাগিদ দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে শুষ্ক মৌসুমে নদী শাসনের প্রয়োজনীয় কাজ সম্পন্ন করার জন্য বলা হয়।
×