ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রংপুরকে হারিয়ে অপরাজেয় ঢাকা

প্রকাশিত: ০৬:৪৪, ১২ জানুয়ারি ২০১৯

রংপুরকে হারিয়ে অপরাজেয় ঢাকা

মিথুন আশরাফ ॥ বিপিএলের এবারের আসরের দুই সেরা দল রংপুর রাইডার্স ও ঢাকা ডায়নামাইটস। গত আসরের চ্যাম্পিয়ন রংপুর ও রানার্সআপ ঢাকা। দুই দলের পরস্পরের বিপক্ষে লীগের প্রথম ম্যাচটি এবার চরম প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হলো। শেষপর্যন্ত বাজিমাত করল ঢাকা। আনকোরা স্পিনার আল ইসলাম এ্যালিসের (৪/২৬) হ্যাটট্রিকে ২ রানে জিতল ঢাকা। মাশরাফির রংপুরকে হারিয়ে টানা তিন ম্যাচে জিতে অপরাজেয়ও থাকল সাকিবের ঢাকা। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে টস জিতে রংপুর। আগে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেয়। শুরুতে ঢাকাকে চাপেও ফেলে দেয়। কিন্তু পোলার্ড (২৬ বলে ৬২ রান) ঝড়ে সেই চাপ সামাল দেয় ঢাকা। সঙ্গে সাকিবের (৩৭ বলে ৩৬ রান) দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে ৯ উইকেট হারিয়ে ২০ ওভারে ১৮৩ রান করে ঢাকা। শফিউল ইসলাম ৩ উইকেট শিকার করেন। জবাব দিতে নেমে রাইলি রুশো (৮৩) ও মোহাম্মদ মিঠুনের (৪৯) ব্যাটিং তা-বে জয়ের একেবারে কাছাকাছি চলে যায় রংপুর। কিন্তু শেষ মুহূর্তে আল ইসলামের অসাধারণ স্পিন ঘূর্ণিতে কাত হয় রংপুর। ৯ উইকেট হারিয়ে ২০ ওভারে ১৮১ রান করতে পারে রংপুর। এত বড় স্কোর অতিক্রম করতে গিয়ে ক্রিস গেইল আবারও ব্যর্থ হলেন। লং অফে ছক্কা হয়েই যাচ্ছিল। কিন্তু শূন্যে লাফিয়ে ওঠে বাউন্ডারির বাইরে থেকে বল বাউন্ডারির ভেতরে ছুড়ে মারেন আন্দ্রে রাসেল আর সেই বলটি মাটি স্পর্শ করার আগে কাইরন পোলার্ড ধরে ফেলেন। অসাধারণ ক্যাচ আউট হয়ে সাজঘরে ফেরেন গেইল (৮)। রংপুরের জেতার সম্ভাবনাও যেন কমে যায়। গেইলের পরপরই মেহেদী মারুফও একই পথের পথিক হন। ২৫ রানে ২ উইকেট পড়ার পর বিপর্যস্ত থাকা রংপুরকে পথ দেখান রাইলি রুশো ও মোহাম্মদ মিঠুন। দুইজন মিলে এগিয়ে যেতে থাকেন। দলের ৭৬ ও ৭৮ রানের সময় অবশ্য মিঠুনকে দুইবার আউট করার সুযোগ মিলে। দুইবারই শুভাগতর বলে শর্ট ফাইন লেগে ক্যাচ তুলে দেন মিঠুন। কিন্তু হাতে পড়া সহজ ক্যাচ ধরতে পারেননি প্রথমবার কোন প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেট খেলতে নামা আল ইসলাম আলিস। সুযোগটি পেয়ে আরও দ্রুতগতিতে রান তুলতে থাকেন মিঠুন। রুশোতো আগে থেকেই মারমুখী হয়ে খেলতে থাকেন। ১০ ওভারে ৮৯ রান স্কোরবোর্ডে যোগ করে ফেলে রংপুর। দুইজনের জুটি ৫০ ছাড়িয়ে এগিয়ে যেতে থাকে। রুশো ২৯ বলে হাফসেঞ্চুরিও করে ফেলেন। ১২ ওভারে রংপুর ১০০ রানেও চলে যায়। রুশো ও মিঠুন মিলে ১০০ রানের জুটিও গড়ে ফেলেন। রুশো এমন ব্যাটিং তা-বই চালান, সেঞ্চুরিই করে ফেলবেন, সেই সম্ভাবনা জেগে যায়। অবশেষে ৪৩ বলে ৮ চার ও ৪ ছক্কায় ৮৩ রান করে আনকোরা স্পিনার আল ইসলামের বলে স্ট্যাম্পিং হন রুশো। এবার বিপিএলের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস খেলে আউট হন রুশো। তাতে স্বস্তি ফিরে ঢাকা শিবিরে। রুশো-মিঠুনের জুটি ১২১ রান স্কোরবোর্ডে যোগ করতে পারে। রংপুরের বিপদ যেন দেখা হয়। আল ইসলাম দুই ক্যাচ মিস করে যেখানে দলকে ডুবাচ্ছিলেন, সেখানে রুশোকে আউট করে ম্যাচ জেতানোর সুযোগ তৈরি করে দেন। দলের তখন ১৪৬ রান থাকে। ২৮ বলে জিততে লাগে ৩৮ রান। রুশোর আউটের পর ঢাকাকে হারের স্বাদ দিতে পারবে রংপুর? সেই প্রশ্নও তখন উঠে। বোপারা ব্যাট হাতে নামেন, আর সাকিবের বলে আউট হয়ে যান। তবে ১৭ রানে দুইবার ‘নতুন জীবন’ পাওয়া মিঠুন জৌলুস ছড়াতে থাকেন। রংপুরকে জেতানোর কাছে নিয়ে যেতে থাকেন মিঠুন। সেই মিঠুনকেও (৩৫ বলে ৪৯ রান) বোল্ড করে দেন আল ইসলাম। মিঠুন যখন আউট হন, তখন ১৪ বলে জিততে ২৩ রান লাগে। হাতে থাকে ৫ উইকেট। সেখান থেকে হ্যাটট্রিক করেন অপরিচিত মুখ আল ইসলাম। ১৮তম ওভারের চতুর্থ বলে মিঠুনকে আউট করার পরের দুই বলেই মাশরাফি ও ফরহাদ রেজাকে আউট করে হ্যাটট্রিক করেন আল ইসলাম। ম্যাচের মোড় ঢাকার দিকে ঘুরে যায়। ১২ বলে জিততে লাগে ২২ রান। সোহাগ গাজীকে আউট করে দেন নারাইন। হাওয়েলের ক্যাচ মিস হয়। সুযোগ পেয়ে ছক্কা হাঁকিয়ে আউট হন হাওয়েল। ৯ উইকেটের পতন ঘটে যায়। চরম প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ একটি ম্যাচের দেখা মিলতে থাকে। ৬ বলে জিততে তখন লাগে ১৪ রান। আল ইসলাম বল করতে আসেন। শফিউল প্রথম দুই বলেই চার হাঁকান। চার বলে জিততে তখন লাগে ৬ রান। সেখান থেকে ম্যাচ হারে রংপুর। তৃতীয় বলে ১ রান নিয়ে নাজমুল ইসলাম অপুকে ব্যাটিংয়ে দেন শফিউল। চতুর্থ বলে অপু কোন রান নিতে পারেননি। পঞ্চম ও ষষ্ঠ বলে ১ রান করে নেয়া যায়। তাতেই ২ রানে ম্যাচ জিতে ঢাকা। অপরাজেয় থাকে ঢাকা। শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন। আবার প্রথম ম্যাচটিই রংপুর ও ঢাকার মধ্যকার। আর তাই দর্শকে ঠাসা ছিল স্টেডিয়াম। তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। কিন্তু এবার দর্শকদের মন জয় করতে পারলেন না হযরতুল্লাহ জাজাই। তার দিকেই নজর ছিল। প্রথম দুই ম্যাচেই যে ধুন্ধুমার ব্যাটিং করে ঢাকাকে জেতান জাজাই। টানা দুই ম্যাচেই হাফসেঞ্চুরি করা জাজাই এবার ১ রানের বেশি করতে পারলেন না। সোহাগ গাজীর স্পিন জাদুর কাছে হার মানেন। বোল্ড হয়ে যান। তাতে ঢাকার স্কোরবোর্ডে বেশি রান জমা হওয়ার সম্ভাবনাও কমে যায়। জাজাই না খেলতে পারলে যে ঢাকার কী অবস্থা হতে পারে, তারও ইঙ্গিত যেন মিলে গেল। মুহূর্তেই দলের ৩ উইকেট পড়ে গেল। ৩৩ রানেই ৩ উইকেট নাই হয়ে গেল। দলের ৯ রানে জাজাই আউটের পর ১০ রান স্কোরবোর্ডে যোগ হতেই সুনীল নারাইনকে সাজঘরে ফেরান মাশরাফি। রনি তালুকদার ধুমধারাক্কা ব্যাটিং শুরু করেছিলেন। কিন্তু সোহাগ বেশিক্ষণ রনিকেও (৮ বলে ২ চার ও ১ ছক্কায় ১৮ রান) টিকতে দেননি। তবে বেনি হাওয়েল মিডঅফ থেকে দৌড়ে গিয়ে যে বাউন্ডারিতে ক্যাচ ধরেন, এক কথায় তা অসাধারণ! তার এইভাবে ক্যাচ ধরায় প্রশংসাতেই শুধু ভাসেন হাওয়েল। রংপুরও যেন ঢাকাকে চাপে ফেলে দেয়। সাকিব ব্যাট হাতে নিজেকে মেলে ধরতে পারছিলেন না। তিনি এদিন চেষ্টা করেন। দলের বিপর্যয় দূর করার চেষ্টা করেন। মিজানুর রহমানকে নিয়ে এগিয়েও যেতে থাকেন। কিন্তু দলের ৬৪ রান হতেই, দুইজনের জুটি ৩১ রানে যেতেই হাওয়েলের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে যান মিজানুর। তিনি এত সুন্দর খেলছিলেন। ছক্কা-চার হাঁকিয়ে রানের গতি সচলও রাখেন। কিন্তু আর বেশি দূর এগিয়ে যেতে পারেননি। তাতে করে সাকিবের উপর চাপ আরও বেড়ে যায়। সাকিবকে চাপমুক্ত করেন কাইরন পোলার্ড। ব্যাট হাতে নেমে ছক্কা-চার হাঁকাতেই থাকেন। স্টেডিয়াম ভর্তি দর্শকরা যে রকম ব্যাটিং দেখতে চান, পোলার্ড তাই দেখান। নাজমুল ইসলাম অপুর এক ওভারে তো ৩টি ছক্কা হাঁকান পোলার্ড। লংঅফ দিয়ে একের পর এক ছক্কা হাঁকাতে থাকেন। ২১ বলেই ৫০ করে ফেলেন পোলার্ড। এবার বিপিএলে সবচেয়ে দ্রুত হাফসেঞ্চুরি করেন তিনি। ঢাকার স্কোরবোর্ডও মুহূর্তেই মজবুত হয়ে যায়। ৯ ওভারের শুরুতে যেখানে ৬৪ রান ছিল, সেখান থেকে ১৫ ওভারেই ১৪২ রান হয়ে যায়। সাকিব উইকেট আঁকড়ে থেকে শুধু পোলার্ডকে ব্যাটিং করার সুযোগ করে দেন। দুইজন মিলে যেভাবে ব্যাটিং করছিলেন, তাতে মনে হয়েছে ২০০ রান সহজেই করে ফেলবে ঢাকা। কিন্তু ১৬তম ওভারের প্রথম বলে গিয়ে পোলার্ডকে থামান হাওয়েল। তার আগেই ঝড় যা ওঠার উঠে যায়। ২৬ বলে ৫ চার ও ৪ ছক্কায় ৬২ রান করে সাজঘরে ফেরেন পোলার্ড। ঢাকাকে সুবিধাজনক অবস্থানে রেখে যান। পোলার্ডের পর আন্দ্রে রাসেলও ব্যাট হাতে নেমে টপাটপ তিন ছক্কা হাঁকিয়ে ফেলেন। তবে সাকিবের সঙ্গে রাসেলের জুটি দীর্ঘ হয়নি। দলের ১৬১ রানের সময় যে ৩৬ রান করা সাকিব আউট হয়ে যান। ১৭৭ রানে গিয়ে যখন রাসেলও (২৩) সাজঘরে ফেরেন, তখন ২০০ রান হওয়ার স্বপ্নই যেন শেষ হয়ে যায়। শেষপর্যন্ত ১৮৩ রান করতে পারে ঢাকা। ১৫ ওভারে যেখানে ১৪২ রান ছিল ঢাকার, সেখানে পরের ৫ ওভারে ৪১ রান করতে পারেন ঢাকার ব্যাটসম্যানরা। যে রান হয়েছে সেই রান নিয়ে শেষপর্যন্ত জিততে সক্ষম হয় ঢাকা। অপরাজেয়ও থাকে। স্কোর ॥ ঢাকা ডায়নামাইটস ইনিংস ১৮৩/৯; ২০ ওভার (জাজাই ১, নারাইন ৮, রনি ১৮, সাকিব ৩৬, মিজানুর ১৫, পোলার্ড ৬২, রাসেল ২৩, শুভাগত ৩, সোহান ৪, রুবেল ১*; শফিউল ৩/৩৫, হাওয়েল ২/২৫, সোহাগ ২/২৮)। রংপুর রাইডার্স ইনিংস ১৮১/৯; ২০ ওভার (গেইল ৮, মারুফ ১০, রুশো ৮৩, মিঠুন ৪৯, বোপারা ৩, হাওয়েল ১৩, মাশরাফি ০, ফরহাদ ০, সোহাগ ০, শফিউল ১০*, অপু ১; আল ইসলাম ৪/২৬)। ফল ॥ ঢাকা ডায়নামাইটস ২ রানে জয়ী। ম্যাচসেরা ॥ আল ইসলাম আলিস (ঢাকা ডায়নামাইটস)।
×