ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

টানা চতুর্থ জয় ঢাকার

ফ্রাইলিঙ্ক ঝলকে ‘সুপারওভারে’ চিটাগংয়ের জয়

প্রকাশিত: ০৫:২১, ১৩ জানুয়ারি ২০১৯

ফ্রাইলিঙ্ক ঝলকে ‘সুপারওভারে’ চিটাগংয়ের জয়

মিথুন আশরাফ ॥ মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে শনিবার দিনের প্রথম ম্যাচে শ্বাসরুদ্ধকর, চরম প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ, উত্তেজনাকর মুহূর্তের দেখা মিলেছে। এতটাই প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে, ‘সুপারওভারে’ গেছে খেলা। ম্যাচটিতে খুলনা টাইটান্সকে ‘সুপারওভারে’ ১ রানে হারিয়েছে চিটাগং ভাইকিংস। ফ্রাইলিঙ্কের ব্যাটিং-বোলিং ঝলকে দ্বিতীয় জয় তুলে নিয়েছে চিটাগং। আরেকদিকে খুলনা টানা চার ম্যাচে হারের তিক্ত স্বাদ পায়। দিনের দ্বিতীয় ম্যাচে সিলেট সিক্সার্সকে ৩২ রানে হারায় ঢাকা ডায়নামাইটস। ঢাকাকে কোন দলই ঠেকাতে পারছে না। ওয়ার্নারের সিলেটকে হারিয়ে টানা চার জয় তুলে নিয়েছে সাকিবের দল। পয়েন্ট তালিকার শীর্ষেই থাকে। বিপিএল ইতিহাসে অসাধারণ একটি ম্যাচ হলো। প্রথমবারের মত লীগের কোন ম্যাচ ‘সুপারওভারে’ গেল। ‘সুপারওভারে’ খেলা যাওয়া মানেই হচ্ছে নির্ধারিত ৪০ ওভারে দুর্দান্ত প্রতিদ্ব›িদ্বতা হওয়ার পর ম্যাচ টাই হয়েছে। এরপর ম্যাচের ফলাফল বের করতে ‘সুপারওভারে’ খেলা গড়িয়েছে। চিটাগং ভাইকিংস-খুলনা টাইটান্স ম্যাচটি এমনই হয়েছে। শেষপর্যন্ত বাজিমাত করেছে চিটাগংই। দলটিকে জেতান রবি ফ্রাইলিঙ্ক। দক্ষিণ আফ্রিকার এ অলরাউন্ডার অসাধারণ খেলছেন। প্রতি ম্যাচেই ব্যাট নয়ত বল হাতে তার দ্যুতি দেখা যাচ্ছে। এবার ব্যাট-বল দুই বিভাগেই ঝলক দেখান। টস হেরে আগে ব্যাট করে ইংল্যান্ডের ডেভিড মালানের ৪৫ ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের ৩৩ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ২০ ওভারে ১৫১ রান করে খুলনা। বড় স্কোরই গড়ে। টানা তিন ম্যাচ হারের পর চতুর্থ ম্যাচে ভাল অবস্থান তৈরি করে। কিন্তু ফ্রাইলিঙ্ক যে শেষমুহূর্তে ঝড় তুলবেন, তাতে জয়ের সম্ভাবনায় থাকা খুলনার শেষপর্যন্ত ‘সুপারওভার’ খেলতে হবে, হারবে খুলনা; তা ভাবাই যায়নি। নির্ধারিত ওভারের শেষ ৬ বলে জিততে ১৯ রান দরকার ছিল। আরিফুল হকের করা ২০তম ওভারের প্রথম বলে কোন রান হয়নি। তাতে আরও চাপে পড়েন চিটাগংয়ের ফ্রাইলিঙ্ক ও নাঈম হাসান। খুলনার জয়ের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। দ্বিতীয় বলেই লং অন দিয়ে ছক্কা হাঁকিয়ে দেন নাঈম। ৪ বলে জিততে ১৩ রানের দরকার থাকে। তৃতীয় বলে গিয়ে নাঈমকে আউট করে দেন আরিফুল। ৩ বলে জিততে লাগে ১৩ রান। অতি মানবীয় ব্যাটিং ছাড়া এই ম্যাচে খুলনাকে হারানো সম্ভব নয়। এমন যখন আলোচনা চলছে, পরপর দুই বলে দুই ছক্কা হাঁকান ফ্রাইলিঙ্ক। খুলনাকে ম্যাচ থেকে ছিটকে ফেলেন। ম্যাচ তখনই ‘টাই’ হয়ে যায়। খুলনার করা ১৫১ রানের সমান করে ফেলে চিটাগং। এক বলে জিততে ১ রান লাগে। তখন চিটাগংয়ের জয় যে নিশ্চিত, তাই ধরে নেয়া হয়। এখানে আরও নাটকীয়তার দেখা মিলে। যে ফ্রাইলিঙ্ক টানা দুই বলে দুই ছক্কা মারেন, তিনি কিনা শেষ বলটিতে ব্যাটই ছোঁয়াতে পারেননি। আবার রান আউটও হয়ে যান ফ্রাইলিঙ্ক (১৩ বলে ২৩ রান)। ম্যাচ টাই-ই থাকে। তবে টি২০তে টাই হলে ‘সুপারওভারে’ খেলা নিষ্পত্তি হওয়ার বিধান আছে। সেই ‘সুপারওভারে’ খেলা গড়ায়। সুপারওভারে এক ওভার করে খেলা হয়। চিটাগং আগে ব্যাটিং করে। দুই দক্ষিণ আফ্রিকান ফ্রাইলিঙ্ক ও ক্যামেরন ডেলপোর্ট ব্যাট হাতে নামেন। পাকিস্তানী পেসার জুনায়েদ খানের করা ওভারের প্রথম বলে ডেলপোর্ট বাউন্ডারি হাঁকান। দ্বিতীয় বলে ১ রান নিতে পারেন। ফ্রাইলিঙ্ক এবার বাউন্ডারি হাঁকান। রান ৯ হয়ে যায়। চতুর্থ বলে গিয়ে ফ্রাইলিঙ্ক আউট হয়ে যান। মুশফিকুর রহীম ব্যাট হাতে নেমে পঞ্চম বলে ১ রান নিতে পারেন। ষষ্ঠ বলে ডেলপোর্টও ১ রান নেন। ১১ রান হয়। টার্গেট দাঁড়ায় ১২ রান। টি২০তে এই রান এক ওভারে তোলা খুবই সহজ। কিন্তু নির্ধারিত ওভারের ম্যাচে ৪ ওভারে ৩২ রান দিয়ে ১ উইকেট নিয়ে চিটাগংকে নিশ্চিত হার থেকে বাঁচানো ফ্রাইলিঙ্ক বল হাতে তুলে নেন। ইংল্যান্ডের ডেভিড মালান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ কার্লোস ব্রেথওয়েট ব্যাট হাতে নামেন। ফ্রাইলিঙ্ক এত সুন্দর বোলিংই করেন, মালান ও ব্রেথওয়েট কিছুই করতে পারেননি। প্রথম বলে লো ফুলটস বল দেন ফ্রাইলিঙ্ক। ১ রান নেন ব্রেথওয়েট। দ্বিতীয় বলে কাভার দিয়ে বাউন্ডারি হাঁকান মালান। ৫ রান হয়। জিততে ৪ বলে ৭ রানের দরকার থাকে। হার্টহিটার মালান ও ব্রেথওয়েটের পক্ষে খুবই সম্ভব। কিন্তু তৃতীয় বলে ২ রানের বেশি নিতে পারেননি মালান। চতুর্থ বলে বাউন্ডারি হাঁকানোর তাড়নায় ব্যাট উপরে ওঠান মালান, ফ্রাইলিঙ্ক গতি বাড়িয়ে দিয়ে মালানের পা বরাবর বল ফেলেন। ১ রান নিতে গিয়ে রান আউট হয়ে যান ব্রেথওয়েট। ২ বলে জিততে তখন ৫ রান লাগে। আয়ারল্যান্ডের পল স্টারলিং ব্যাট হাতে নামেন। যে কোন এক বলে একটি বাউন্ডারি হলে আবার ম্যাচ টাই হয়ে যাবে। সেই নাটকীয়তাই কী আবার দেখার মিলবে? এমন প্রশ্ন উঠতে দেরি হয়েছে, পঞ্চম বলে স্টারলিং ২ রানের বেশি নিতে পারেননি। তাতে করে ১ বলে জিততে ৩ রানের দরকার থাকে। যে কোন দল জিততে পারে। কিন্তু বোলারটি ফ্রাইলিঙ্ক। যিনি ব্যাট হাতে জৌলুস ছড়িয়ে আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে নিয়েছেন। বল হাতেও শেষ বলে সেই জৌলুস দেখিয়ে দেন। ইয়র্কার দেন ফ্রাইলিঙ্ক। স্টারলিং কিছুই করতে পারেননি। ১ রান নেন। কিন্তু ২ রান নিতে গিয়ে রান আউট হয়ে যান স্টারলিং। ব্যাট হাতে নিশ্চিত হারা ম্যাচ ‘টাই’ করে দেন ফ্রাইলিঙ্ক। আবার বল হাতেও ম্যাচ জেতান। মহাচাপের ম্যাচে ফ্রাইলিঙ্কের অলরাউন্ড ঝলকে জিতে পয়েন্ট তালিকার তৃতীয় স্থানেও উঠে যায় চিটাগং। ঢাকা ও সিলেটের ম্যাচে রনি তালুকদারের (৫৮) অসাধারণ ব্যাটিংয়ের সঙ্গে সুনীল নারাইনের ২৫, সাকিব আল হাসানের ২৩ রানের পর শেষমুহূর্তে নাঈম শেখের অপরাজিত ২৫ ও নুরুল হাসান সোহানের অপরাজিত ১৮ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে ২০ ওভারে ১৭৩ রান করে ঢাকা। হযরতুল্লাহ জাজাই এবারও ঝলক দেখাতে ব্যর্থ হন। তবে এবার রনি তালুকদার জৌলুস ছড়ান। দেশি ব্যাটসম্যানদের মধ্যে এখন পর্যন্ত ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ইনিংসটি রনিরই হয়ে গেল। দ্বিতীয় উইকেটে নারাইন-রনি মিলে আবার ৬৭ রানের জুটি গড়েন। দলের ৭১ রানে গিয়ে নারাইন আউট হওয়ার পর দলের ১০৬ রানে গিয়ে রনিও ৩৪ বলে ৫ চার ও ৩ ছক্কায় ৫৮ রানের ইনিংস খেলে সাজঘরে ফেরেন। এরপর থেকে ৩ উইকেট নেয়া তাসকিন আহমেদের হ্যাটট্রিক আশা জাগানো বোলিংয়ে ১২৫ রানের মধ্যেই ৭ উইকেট হারিয়ে বসে ঢাকা। চাপে পড়ে যায় দলটি। তবে আর কোন উইকেট হারাতে হয়নি। শেষে নাঈম ও সোহান মিলে ৪৬ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে দলকে ১৭৩ রানে নিয়ে যান। এই রান অতিক্রম করতে গিয়ে শুরুতেই যখন সাকিবের বলে ডেভিড ওয়ার্নারের ক্যাচটি অসাধারণভাবে ধরে ফেলেন কাইরন পোলার্ড, তখনই ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়ে সিলেট। ওয়েস্ট ইন্ডিজের নিকোলাস পুরান ৩৮ বলে হাফসেঞ্চুরি করার পর শেষপর্যন্ত ৪৭ বলে ১ চার ও ৯ ছক্কায় ধুন্ধুমার ব্যাটিং করে ৭২ রানের ইনিংস খেলতে পারেন পুরান। কিন্তু দল ৯ উইকেট হারিয়ে ২০ ওভারে ১৪১ রানের বেশি করতে পারেনি। সিলেটকে হারিয়ে ঢাকা টানা চতুর্থ জয় তুলে নেয়।
×