ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রাজস্ব ফাঁকি দেয়ায় এমএল ডাইংকে ২ কোটি টাকা জরিমানা

প্রকাশিত: ০৭:০৯, ১৩ জানুয়ারি ২০১৯

রাজস্ব ফাঁকি দেয়ায় এমএল ডাইংকে ২ কোটি টাকা জরিমানা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ প্রণোদনা সুবিধায় আনা কাঁচামাল অবৈধভাবে অপসারণ করে রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত এমএল ডায়িং লিমিটেড। ঢাকা বন্ড কমিশনারেটের অনুসন্ধানে রাজস্ব ফাঁকি প্রমাণ হওয়ায় জরিমানাসহ কোম্পানিটির কাছে প্রায় ২ কোটি টাকা দাবি করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে এ অর্থ পরিশোধ না করলে কাস্টমস আইন অনুযায়ী শাস্তির কথা জানিয়ে এরই মধ্যে এমএল ডায়িংকে চিঠিও দিয়েছে সংস্থাটি। এনবিআরের কর্মকর্তারা বলছেন, স্থানীয় শিল্প বিকাশে প্রণোদনা হিসেবে রফতানির শর্তে কাঁচামাল আমদানিতে বিশেষ বন্ড সুবিধা দিয়ে আসছে সরকার। এ সুবিধায় শুল্কমুক্তভাবে কাঁচামাল আমদানি করে ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। তবে কোম্পানিকে এনবিআরের অনুমতি নিয়ে কাঁচামাল ব্যবহার ও পণ্য রফতানি করতে হয়। এমএল ডায়িংয়ের বিরুদ্ধে এ বন্ড সুবিধা নিয়ে তা অপব্যবহারের অভিযোগে আসে এনবিআরে। অভিযোগের ভিত্তিতে কোম্পানিটির কারখানা ও প্রধান কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে কাঁচামাল অবৈধভাবে অপসারণের প্রমাণ পাওয়া যায়। ৪ কোটি ৯ লাখ টাকার কাঁচামাল অবৈধভাবে অপসারণ করার অভিযোগে কোম্পানিটির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। পরবর্তীতে শুনানি শেষে কোম্পানিটিকে ৫০ লাখ টাকা জরিমানা ও অবৈধ অপসারণকৃত কাঁচামালের বিপরীতে ১ কোটি ২৮ লাখ টাকা শুল্ক দাবি করা হয়েছে। ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে তা পরিশোধ না করলে কাস্টমস আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। এনবিআরের কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের একজন কর্মকর্তা বলেন, বন্ড কমিশনারেটের প্রিভেন্টিভ টিমের অনুসন্ধানে এমএল ডায়িংয়ের বিরুদ্ধে কাঁচামাল আমদানি করে ওয়্যারহাউসে রাখার ক্ষেত্রে অনিয়ম ও অবৈধভাব অপসারণের অভিযোগ তোলে। কোম্পানিটির বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে ১ কোটি ২৮ লাখ টাকার রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে মামলা করা হয়। পরবর্তীতে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের শুনানি শেষে অভিযোগটি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ হয়। ফলে তাদের বিরুদ্ধে ১৯৬৯ সালের কাস্টমস আইনের ১৫৬(১) ধারার ক্লজ ৯০-এর ক্ষমতা বলে আরও ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ১৫ দিনের মধ্যে জরিমানাসহ ফাঁকি দেয়া রাজস্ব পরিশোধে ৩ জানুয়ারি কোম্পানিটিকে চূড়ান্ত আদেশপত্র দেয়া হয়েছে। মামলার বিবরণ অনুযায়ী, মেসার্স এমএল ডায়িং ময়মনসিংহের ভালুকায় অবস্থিত একটি তৈরি পোশাক কারখানা। কোম্পানিটি ২০০২ সালে এনবিআর থেকে বন্ড লাইসেন্স নেয়, যার নিবন্ধন নম্বর ১৬৫ ও মূসক নম্বর ১৮০৬১০০১৯২৪। গত বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি এমএল ডায়িং কারখানায় অনুসন্ধানে যায় ঢাকা বন্ড কমিশনারেটের প্রিভেন্টিভ টিম। সরেজমিন তদন্ত করে কোম্পানিটির কারখানায় আমদানিকৃত কাঁচামালের মধ্যে ইয়ার্ন ৬ হাজার ১৪৫ কেজি, ডাইস ৬ হাজার ২০০ কেজি, লবণ ২৪ হাজার ৯৫০ কেজি, কস্টিক সোডা ৩ হাজার কেজি, লাইম পাউডার ৬ হাজার ৪০০ কেজি ও অন্যান্য কেমিক্যাল ৫৫ হাজার ৭১৫ কেজি কম পাওয়া যায়। এছাড়া কোম্পানিটির কারখানায় বিপুল পরিমাণ মেয়াদোত্তীর্ণ কাঁচামাল জব্দ করে প্রিভেন্টিভ টিম। পরবর্তীতে এনবিআরের এ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সফটওয়্যারের সঙ্গে কোম্পানির আমদানি তথ্য যাছাই করে তাদের বিরুদ্ধে বন্ড সুবিধার ৪ কোটি ৯ লাখ টাকার শুল্কায়নযোগ্য কাঁচামাল অবৈধভাবে অপসারণের প্রমাণ পাওয়া যায়। ফলে কোম্পানিটির বিরুদ্ধে ওই পণ্যের ওপর প্রযোজ্য ১ কোটি ২৮ লাখ টাকার শুল্ক দাবিসহ ১৯৬৯ সালের কাস্টমস আইনে মামলা করা হয়। এনবিআর থেকে কোম্পানির কাছে পাঠানো চূড়ান্ত আদেশপত্রে বলা হয়েছে, এমএল ডায়িংয়ের কর্মকর্তাদের শুনানি শেষে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ হয়েছে। এ অবস্থায় ১৯৬৯ সালের কাস্টমস আইনের ১৫৬(১) ধারার ক্লজ ৯০ অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ৫০ লাখ টাকা জরিমানা ও দাবিকৃত শুল্ক পরিশোধ করতে হবে। এ আদেশ জারির পরবর্তী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে তা ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে জমা দিয়ে এনবিআরকে অবহিত করতে হবে। সম্প্রতি প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে শেয়ারবাজার থেকে অভিহিত মূল্যে ২০ কোটি টাকা মূলধন সংগ্রহ করে এমএল ডায়িং। গতবছরের ৮ থেকে ১৯ জুলাই চাঁদা গ্রহণ শেষ করে উত্তোলিত এ অর্থ যন্ত্রপাতি ক্রয় ও স্থাপনে ব্যয় করবে বলে জানায় কোম্পানিটি। আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী এর অনুমোদিত মূলধন ২১০ কোটি টাকা ও পরিশোধিত মূলধন ১৬০ কোটি ৪১ লাখ টাকা। কোম্পানির মোট শেয়ার সংখ্যা ১৬ কোটি ৪ লাখ ১০ হাজার। এর মধ্যে উদ্যোক্তা পরিচালক ৩১ দশমিক ৪০ শতাংশ, প্রতিষ্ঠান ২৪ দশমিক ৬৩, বিদেশী বিনিয়োগকারী ২১ দশমিক ৮৯ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ২২ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।
×