ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

যুক্তরাষ্ট্রে প্লাস্টিক রফতানি বাড়ছে

প্রকাশিত: ০২:৪১, ১৪ জানুয়ারি ২০১৯

যুক্তরাষ্ট্রে প্লাস্টিক রফতানি বাড়ছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের প্লাস্টিক রফতানি ধীরে ধীরে বাড়ছে। বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে চীন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়ে যুক্তরাষ্ট্র এখন বাংলাদেশ থেকে প্লাস্টিক পণ্য আমদানি বাড়িয়েছে। ফলে বাংলাদেশের প্লাস্টিক শিল্পের ভবিষ্যত অনেক উজ্জ্বল বলে জানিয়েছেন এখাতের উদ্যোক্তারা। সোমবার ১৪ তম আন্তর্জাতিক প্লাস্টিক পণ্য মেলা উপলক্ষ্যে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান বাংলাদেশ প্লাস্টিক দ্রব্য প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক এ্যাসোসিয়েশনের (বিপিজিএমইএ) সভাপতি মো.জসিম উদ্দিন। আগামী ১৭-২০ জানুয়ারি চারদিনব্যাপী ঢাকার ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় এ মেলার আয়োজন করা হয়েছে। এবারের মেলায় ১৯ টি দেশের প্লাস্টিক পণ্য খাত সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করবেন। বিপিজিএমইএ সভাপতি বলেন, রফতানি খাতে প্লাস্টিক পণ্যের ভবিষ্যত অনেক উজ্জ্বল ও সম্ভাবনাময়। কারণ প্রতিবছর রফতানি বাড়ছে। বর্তমান ঢাকা ও ঢাকার আশপাশে প্রায় রেজিস্টার্ড দেড় হাজার কারখানা রয়েছে প্লাস্টিকের। দেশে মাথাপিছু এখন ৫-৬ কেজি প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার করছে। আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে যার পরিমাণ হবে প্রায় ৩৪ কেজি। তাই সরকারের ভিশন ও এসডিজি বাস্তবায়নে এখাত উন্নয়নে নীতি সহায়তা প্রয়োজন। তিনি বলেন, রফতানিতে এখাতে ১০ শতাংশ নগদ সহায়তা দেয়া হচ্ছে। কিন্তু যাদের বন্ড লাইসেন্স রয়েছে কিংবা ইপিজেডে কারখানা রয়েছে তারা এ সুবিধার বাইরে রয়েছেন। আগামীতে ছোট বড় সবার জন্য এই সুবিধা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। তিনি বলেন, বর্তমান ৫৭টি দেশে প্লাস্টিক পণ্য রফতানি হচ্ছে। উদ্যোক্তারা রফতানির বিষয়টি মাথায় রেখে গ্রীণ ফ্যাক্টরি ও কমপ্লায়েন্সে সর্বোচ্চ জোর দিচ্ছেন। এছাড়া চীনের পর এখন বাংলাদেশে খেলনা সামগ্রী উৎপাদনে বেশ এগিয়ে গেছে। এই অগ্রযাত্রা ধরে রাখতে হলে খেলনা ইন্ডাস্ট্রি সম্পূর্ণ ভ্যাটমুক্ত করতে হবে। আগামী বাজেটে এ বিষয়টিতে সবচেয়ে বেশি জোর দিবে বিপিজিএমইএ। মো. জসিম উদ্দিন বলেন, প্লাস্টিক কখনো বর্জ্য পণ্য হয় না। রিসাইক্লিন করে আবার কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তাই সংগ্রহের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যারা বর্জ্য হিসেবে ফেলে দেন, তাদের এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে। তারা সচেতন হলে কালেকশনটি ভাল হবে। জানা গেছে, এবারের মেলায় ১৯টি দেশ থেকে ৪৮০টি কোম্পানি ৭৮০টি স্টল ও বুথ নিয়ে মেলায় অংশগ্রহণ করবে। বর্তমান দেশে ২৫ হাজার কোটি টাকার প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদন ও বিপণন হচ্ছে। সরকারের কোষাগারে প্রতিবছর রাজস্ব যোগ হচ্ছে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা। প্রতিবছর দেশ ও দেশের বাইরে প্রায় ২০ শতাংশ হারে প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার বাড়ছে। সরকার এ খাত উন্নয়নে কেরানীগঞ্জ ও আড়াই হাজারে দুটি প্লাস্টিক শিল্পনগরী গড়ে তুলতে সহযোগীতা করেছে। বিপিজিএমইএ সভাপতি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত রূপকল্প-২১ এবং উন্নত রাষ্ট্রের স্বপ্ন পূরণে রূপকল্প-৪১ বাস্তবায়নের জন্য যে বিপুল পরিমাণ কর্মসংস্থানের প্রয়োজন তা কেবল প্লাস্টিক শিল্পখাতে সম্ভব। কৃষি নির্ভর অর্থনীতি থেকে দেশ এখন শিল্পনির্ভর অর্থনীতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ছোট বড় মিলিয়ে দেশে বর্তমান প্রায় ৫ হাজার প্লাস্টিক শিল্প কারখানায় প্রতিবছর ২৫ হাজার কোটি টাকার পণ্য উৎপদান ও বিক্রি করছে। তিনি বলেন, রফতানি বাজার ধরে রাখতে কারখানা কমপ্লায়েন্স হওয়া জরুরী। এলক্ষ্যে শিল্পের কারখানাগুলো কমপ্লায়েন্স করতে আলাদা প্লাস্টিক শিল্পনগরী চাওয়া হয়েছে। গার্মেন্টসের কারণে রফতানিতে জিএসপি হারিয়েছে প্লাস্টিক শিল্পখাত। এ কারণে কারখানা কমপ্লায়েন্সে এখন সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া হয়েছে। জসিম উদ্দিন আরও জানান, এ শিল্পখাত উন্নয়ন এবং কাঁচামাল আহরণে রিসাইক্লিনটা জরুরী। এক্ষেত্রে সিটি কর্পোরেশনকে উদ্যোগী হতে হবে। পুরাণ ঢাকায় ইতোমধ্যে বেশকিছু রিসাইক্লিন কারখানা গড়ে উঠেছে। এদিকে, গার্মেন্টসের জন্য জিএসপি স্থগিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের প্লাস্টিক শিল্পখাত। যুক্তরােেষ্ট্রর বাজারে কখনই পোশাক রফতানিতে জিএসপি সুবিধা ছিল না। কিন্তু এই সুবিধা স্থগিত হওয়ার ফলে সরাসরি আঘাত আসে প্লাস্টিক শিল্পের উপরে। তবে আশার কথা হলো এত বাধার পরও ঘুড়ে দাঁড়িয়েছে এশিল্পখাত। রফতানিতে জায়গা করে নেয়ার পাশাপাশি অভ্যন্তরীন চাহিদা মেটাচ্ছে শতভাগ। অভ্যন্তরীণ বাজারে শক্ত ভিত গড়তে নিয়েছেন উদ্যোক্তারা। বিশ্বের দাবি ব্র্যান্ড কোকো কোলাও বাংলাদেশী প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার করছে। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির সাবেক সভাপতি এ এসএম কামাল উদ্দিন, মো. ইউসুফ আশরাফ, ফেরদৌস ওয়াহেদ, সামিম আহমেদ প্রমুখ।
×