ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ডিজিটাল যুদ্ধ এবং শেখ হাসিনার অভাবনীয় বিজয়!

প্রকাশিত: ০৪:০০, ১৫ জানুয়ারি ২০১৯

ডিজিটাল যুদ্ধ এবং শেখ হাসিনার অভাবনীয় বিজয়!

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে সারা বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের যোগাযোগের এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে, যার মূলে ছিল সারাদেশে ‘ফাইবার অপটিক্সনেট ওয়ার্ক’ স্থাপন! বর্তমানে কারাবন্দী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নির্বুদ্ধিতা এবং ভুল সিদ্ধান্তের কারণে জাতি বেশ অনেক বছর আগে এই ‘ফাইবার অপটিক্স নেটওয়ার্ক’ স্থাপনের সুযোগ পেয়েও বঞ্চিত হয়। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে শোচনীয় পরাজয়ের পর বরাবরের মতোই বিএনপি নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করেছে এবং নালিশ নিয়ে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের দ্বারস্থ হতে যাচ্ছে। এর কারণ তাদের আর জনসম্মুখে মুখ দেখানোর মতো অবস্থা নেই, আর নেই পরাজয়ের প্রধান কারণগুলো গভীরভাবে অনুসন্ধান করার মতো মানসিকতা এবং যোগ্যতা। বলা হয়ে থাকে, নেতৃত্বহীনতা এবং অযোগ্য নেতৃত্বই বিএনপির পরাজয়ের মূল কারণ। ফলে বিএনপি নির্বাচনে জয়ী হলে তাদের ভবিষ্যত প্রধানমন্ত্রী কে হবেন এই নিয়ে কোন সুস্পষ্ট মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকে। গ্রেনেড হামলাসহ বহু মামলার পলাতক আসামি, বিএনপির অস্থায়ী চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভবিষ্যত প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন এই আশঙ্কা দোদুল্যমান এবং তরুণ ভোটারদের চরমভাবে আতঙ্কিত করে। এরই পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা, দক্ষতা এবং প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিরঙ্কুশ গ্রহণযোগ্যতার কারণে তরুণ এবং সিদ্ধান্তহীনতায় থাকা ভোটাররা নৌকাতেই ভোট দেন। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি এবং ‘হাওয়া ভবনের’ কীর্তিকলাপ এখনও সামরিক বাহিনী এবং বেসামরিক প্রশাসনের কাছে বিভীষিকাময়। এছাড়াও তারেকের প্রতিহিংসাপরায়ণতার কথা এবং প্রতিশোধ গ্রহণের নামে পদ্মা সেতুসহ সমস্ত উন্নয়ন কর্মকা- বন্ধ করার মনোভাবের কথা ‘ওপেন সিক্রেট’। তাই সামরিক বাহিনী এবং বেসামরিক আমলাতন্ত্রের কাছে তারেক রহমানের গ্রহণযোগ্যতা শূন্যের কাছাকাছি। জামায়াতের সঙ্গে সখ্য এবং অতিরিক্ত পাকিস্তানপ্রীতিও বিএনপি-জামায়াত জোটের পরাজয়ের অন্যতম কারণ বলে অনেক মনে করেন। কিন্তু বিএনপির পরাজয়ের অন্যতম কারণ, যা সাধারণের কাছে অগোচরে এবং অজানা রয়ে গেছে তা হলো আওয়ামী লীগের ‘সিক্রেট উইপন বা গোপন অস্ত্র’, যা হলো সামাজিক মাধ্যমে ডিজিটাল যুদ্ধ বা ‘সাইবার ওয়ার’। গত বছর কোটাবিরোধী আন্দোলন এবং নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনের সময় ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা টের পান যে, সম্পূর্ণ অরাজনৈতিকভাবে শুরু হওয়া এই দুই অন্দোলোনকে সামাজিক মাধ্যমে গুজব এবং মিথ্যা অপপ্রচার ছড়িয়ে কিভাবে বিএনপি-জামায়াত-শিবির এই আন্দোলনকে হাইজ্যাক করে সরকার উৎখাত অন্দোলনের দিকে ধাবিত করেছিল। এক পর্যায়ে তারা ধানম-িতে অবস্থিত আওয়ামী লীগের সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয় প্রায় দখল এবং ধ্বংসের কাছে চলে গিয়েছিল। সেদিন বিএনপি-জামায়াত-শিবির সফল হলে তা হতো সরকারের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। সোশ্যাল মিডিয়ায় গুজব এবং মিথ্যা অপপ্রচারের মুখে সেদিন আওয়ামী লীগ ছিল সম্পূর্ণ অপ্রস্তুত। যদিও সেদিনের ব্যবহৃত এই ডিজিটাল মাধ্যমের স্বপ্নদ্রষ্টা এবং রূপকার হলেন জননেত্রী শেখ হাসিনা এবং সজীব ওয়াজেদ জয়। এই দুই অনভিপ্রেত ঘটনা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার এমএ সবুরের নেতৃত্বে এবং সরাসরি নির্দেশনায় আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি বিষয়ক কেন্দ্রীয় উপ-কমিটি ভবিষ্যতে বিশেষ করে নির্বাচনের আগে বিএনপি-জামায়াত-শিবির পরিচালিত এই ধরনের সম্ভাব্য সাইবার আক্রমণের মোকাবেলায় সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করে। ইঞ্জিনিয়ার এমএ সবুরের মতে ‘তার সামনে ছিল বিএনপি-জামায়াত-শিবির পরিচালিত এই ধরনের সম্ভাব্য সাইবার আক্রমণের হাত থেকে দেশ এবং দলকে রক্ষা করার বিরাট এক চ্যালেঞ্জ।’ কিন্তু দল ও সভানেত্রীকে রক্ষা করার জন্য তিনি ছিলেন অবিচল, দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ও যে কোন ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত। আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার নাজমুল আহসান শেখের বক্তব্য অনুযায়ী ইঞ্জিনিয়ার এমএ সবুর বাছাইকৃত প্রায় শ’খানেক নিবেদিতপ্রাণ ইঞ্জিনিয়ার এবং আইটি প্রফেশনালদের নিয়ে তার ‘মিশন’ শুরু করেন। এই শ’খানেক নিবেদিত ইঞ্জিনিয়ার এবং আইটি প্রফেশনালদের সবাই প্রাক্তন এবং বর্তমান ছাত্রলীগ কর্মী, যারা গত কয়েক মাস ধরে প্রতিদিন পালাক্রমে দিনরাত পরিশ্রম করে গেছেন। সবুরের সামনে ছিল বহুমুখী চালেঞ্জ। এক. প্রচারকারী ব্যক্তি বা ফেসবুক সাইট শনাক্ত, নিয়ন্ত্রণ এবং বন্ধ করা; দুই. প্রকৃত এবং সত্য তথ্য প্রচার করার মাধ্যমে বিভ্রান্তি দূর করা এবং উন্নয়নমূলক কর্মকা-ের ভিডিও তৈরি ও প্রচার; তিন. আওয়ামী লীগের জন্য নিজস্ব এ্যাপ (জয় বাংলা এ্যাপ) প্রস্তুত করা। আর এসবই করতে হবে নির্বাচনের কমপক্ষে মাস দুইয়েক আগে, যাতে করে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার মতো পর্যাপ্ত সময় থাকে। তাই নির্বাচনের কয়েক সপ্তাহ আগে সবুর আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির মাধ্যমে এক বিশাল কর্মশালার আয়োজন করেন, যার মাধ্যমে কয়েক হাজার ছাত্রলীগ এবং আওয়ামী মনোভাবসম্পন্ন কর্মী বাহিনীকে সাইবার ওয়ার ও ডিজিটাল ক্যাম্পেইন বিষয়ে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। যখন অফিসিয়াল নির্বাচনী প্রচার শুরু হয়, এবার আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির দ্বারা প্রশিক্ষিত কর্মী বাহিনী, ইঞ্জিনিয়ার আরআইটি বিশেষজ্ঞরা ছিলেন প্রস্তুত। তারা সময় ও স্থান উপযোগী ভিডিও ক্লিপ প্রচারের মাধ্যমে সোশ্যাল মিডিয়ায় আধিপত্য বিস্তার করেন। আতি দ্রুত গুজব রটনাকারী ব্যক্তি ও সাইটগুলো শনাক্ত, নিয়ন্ত্রণ এবং বন্ধ করতে সক্ষম হন। জয় বাংলা এ্যাপের মাধ্যমে সারাদেশের আওয়ামী লীগের প্রশিক্ষিত কর্মীদের এক প্লাটফর্মে নিয়ে আসার ফলে মুহূর্তেই নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ ও তথ্য আদান-প্রদান সম্ভব হয়। এই অপ্রত্যাশিত পাল্টা আক্রমণ ও প্রতিরোধের মুখে বিএনপি-জামায়াত-শিবির ছিল অপ্রস্তুত। তারা সোশ্যাল মিডিয়া এবং সাইবার ওয়ারে পরাজিত হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে আওয়ামী লীগের এই সাইবার সক্ষম বাহিনীর বিজয়ই ছিল নির্বাচনে অভাবনীয় জয়ের অন্যতম কারণ। ইঞ্জিনিয়ার নাজমুল আহসান শেখের ভাষায় জয় বাংলা এ্যাপ দ্বারা সুসজ্জিত এবং সংযুক্ত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এখন এবং ভবিষ্যতে যে কোন সাইবার আক্রমণ মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত। আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার এমএ সবুরের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক কেন্দ্রীয় উপ-কমিটি এবং সাইবার বাহিনীর সদস্যরা জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী প্রদত্ত দায়িত্ব আশাতীতভাবে পালনের মাধ্যমে তাদের অসামান্য অবদানের জন্য প্রশংসার দাবিদার। লেখক : সাংবাদিক
×