ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ভোট টিআইবির প্রতিবেদন সম্পূর্ণরূপে মনগড়া : রফিকুল ইসলাম

প্রকাশিত: ০৩:১৮, ১৫ জানুয়ারি ২০১৯

ভোট টিআইবির  প্রতিবেদন  সম্পূর্ণরূপে মনগড়া  : রফিকুল ইসলাম

অনলাইন রিপোর্টার ॥ ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে বিতর্কিত, প্রশ্নবিদ্ধ আখ্যা দিয়ে যে গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তা প্রত্যাখ্যান করে নির্বাচন কমিশন বলেছে—এটি পূর্বনির্ধারিত, মনগড়া। বিষয়গুলো নিয়ে বক্তব্য চাওয়া হলে নির্বাচন কমিশন (ইসি) থেকে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, টিআইবি যে প্রতিবেদনটিকে গবেষণা বলে দাবি করছে, তা কোনো গবেষণা নয়। প্রতিবেদন মাত্র। কেননা, গবেষণা করতে যে সকল পদ্ধতি প্রয়োগ করতে হয়, তা এখানে প্রয়োগ করা হয়নি। এটি সম্পূর্ণরূপে মনগড়া প্রতিবেদন। এছাড়া বলা হয়েছে, এটা তাদের প্রাথমিক প্রতিবেদন। তার অর্থই হচ্ছে এই প্রতিবেদন পূর্বনির্ধারিত প্রতিবেদন। নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম আরো বলেন, টিআইবি বলেছে গবেষণাটি গুণবাচক, মুখ্য তথ্যদাতার সাক্ষাৎকার ও পর্যবেক্ষণ, ক্ষেত্রবিশেষে সংখ্যাবাচক তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করা হয়েছে। তথ্য নেওয়া হয়েছে পরোক্ষ উৎস থেকে। এভাবে কোনো গবেষণা হয়? ভোটের কারচুপির তথ্য নিলে অবশ্যই সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তার কাছ থেকে তথ্য নিতে হবে বা অথবা লিখিত কোনো ডকুমেন্ট থেকে তথ্য নিতে হবে, এসব করা হয়নি। কোন সোর্স থেকে কী প্রক্রিয়ায় তথ্য নিয়ে তারা বলছে, ভোটের আগের রাতে সিল মারা হয়েছে-এসব কিছু উল্লেখ নেই। কাজেই এটা কোনো গবেষণা হয়নি। বাছাইকৃত প্রার্থীদের কাছ থেকে তারা তথ্য নিয়েছে বলা হচ্ছে। এক্ষেত্রে জামায়াতের প্রার্থীদের কাছ থেকে তথ্য নিলেও গবেষণা প্রতিবেদন এক রকম হবে। আর আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের কাছ নিলে তো আরেকরকম হবে। টিআইবির গবেষণায় এগুলো স্পষ্ট নয়। রফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা এই প্রতিবেদন আমলে নিচ্ছি না। যদি গবেষণা হতো তবে আমলে নিতে পারতাম। এর আগে, মঙ্গলবার (১৫ জানুয়ারি) সকালে রাজধানীর মাইডাস সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলন করে দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী সংস্থাটি এক গবেষণাপত্র উপস্থাপন করে জানায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৪৭টি আসনের প্রতিটিতে এক বা একাধিক ভোটকেন্দ্রে নির্বাচনী অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ৪১ আসনে পড়েছে জাল ভোট। আর ৩৩ আসনে আগের রাতে ব্যালটে সিল মারা হয়েছে। ২৯৯ আসনের মধ্যে দ্বৈবচয়নের ভিত্তিতে ৫০টি আসনে গবেষণা করে এমন তথ্য দেয় টিআইবি। সে মোতাবেক ৯৪ শতাংশ আসনে নির্বাচনী অনিয়ম হয়েছে। জাল ভোট পড়েছে ৮২ শতাংশ আসনে। নির্বাচনের আগের রাতে ব্যালট বাক্সে সিল মারা হয়েছে ৬৬ শতাংশ আসনে। টিআইবি তার গবেষণাপত্রের ব্যাখ্যায় বলেছে, এ গবেষণায় গুণবাচক পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে। এসব পদ্ধতির মধ্যে রয়েছে- আধেয় বিশ্লেষণ, মুখ্য তথ্যদাতার সাক্ষাৎকার ও পর্যবেক্ষণ এবং ক্ষেত্রবিশেষে সংখ্যাবাচক তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে নির্বাচন প্রক্রিয়ারে বিভিন্ন ধাপ পর্যালোচনা করার ক্ষেত্রে পরোক্ষ উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। অন্যদিকে স্থানীয় পর্যায়ের প্রক্রিয়া পর্যালোচনার ক্ষেত্রে কয়েকটি বাছাইকৃত আসনের বাছাইকৃত প্রার্থীদের কার্যক্রমের ওপর পর্যবেক্ষণ ও সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক বলেন, এই প্রতিবেদন গবেষণার প্রাথমিক প্রতিবেদন। তারা নির্বাচনে পরের একমাস পর্যন্ত গবেষণা কার্যক্রমটি পরিচালনা করবেন। গবেষণা প্রতিবেদনেও টিআইবি বলেছে, সরকারী দলীয় প্রার্থীরা সবচেয়ে বেশি আচরণবিধি লঙ্ঘণ করেছেন। তাদের প্রার্থীরা নির্বাচনী ব্যয়সীমাও লঙ্ঘন করেছেন বেশি। ২৯৯ আসনের মধ্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ২৫৭টি আসন, জাতীয় পার্টি ২২টি আসন, বিকল্পধারা বাংলাদেশ ২টি আসন, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি ৩টি আসন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ ২টি আসন, জাতীয় পার্টি-জেপি ১টি আসন ও বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন ১টি আসন পেয়েছে। মহাজোট মোট আসন পেয়েছে ২৮৮টি। অন্যদিকে বিএনপি ৬টি ও গণফোরাম ২টি আসন পেয়েছে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট মোট ৮টি আসন পেয়েছে। আর স্বতন্ত্র থেকে নির্বাচিত হয়েছেন ৩ প্রার্থী।
×