ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

মজুরি বৃদ্ধির পর-

প্রকাশিত: ০৪:৩০, ১৬ জানুয়ারি ২০১৯

মজুরি বৃদ্ধির পর-

দেশের রফতানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি কাঠামোর ছয়টি গ্রেডে বেতন বাড়িয়েছে সরকার। এতে সর্বোচ্চ মূল বেতন বেড়েছে ৫২৫৭ টাকা। সে হিসাবে প্রথম গ্রেডের একজন শ্রমিক ১৮ হাজার ২৫৭ টাকা বেতন পাবেন। আর সর্বনিম্ন ২৭০০ টাকা হিসাবে সপ্তম গ্রেডে একজন শ্রমিক সর্বনিম্ন বেতন পাবেন ৮ হাজার টাকা। শ্রম মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে মালিক-শ্রমিক ও সচিব কমিটির ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠক শেষে নতুন মজুরি কাঠামো ঘোষণা করেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুন্নুজান সুফিয়ান। এ গ্রহণযোগ্য সমাধানের পরও সোমবারে অনেক কারখানার শ্রমিক কাজে যোগ দেননি। ফলে একটি মহল পরিস্থিতি অশান্ত করতে চাইছে কিনা, সেটি বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। অবশ্য মঙ্গলবার এরাও কাজে ফিরে গেছেন। তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পোশাক শিল্পের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার লক্ষ্যে একটি মহল চক্রান্ত করছে। মজুরি নিয়ে পোশাক শ্রমিকদের ভেতর অসন্তোষ নতুন কিছু নয়। গত বেশ কিছুদিন ঢাকার পোশাক-শিল্পাঞ্চলের সামগ্রিক পরিবেশ অশান্ত হয়ে ওঠে। শ্রমিকরা আন্দোলন শুরু করেন। শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষে একজন শ্রমিকের মৃত্যুর মতো দুঃখজনক ঘটনাও ঘটেছে। এটি ছিল অনাকাক্সিক্ষত। সদ্য গঠিত সরকার অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। উল্লেখ্য, দেশের পণ্য রফতানির আয়ের ৮৪ শতাংশ পোশাক খাত থেকে আসে। এ খাতে কাজ করেন প্রায় ৩৬ লাখ শ্রমিক। ১৯৯৪ সালে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ছিল ৯৩০ টাকা। ২০০৬ সালে সেটি বৃদ্ধি করে ১ হাজার ৬৬২ টাকা ৫০ পয়সা করা হয়। ২০১০ সালের মজুরি বোর্ডে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ৩ হাজার টাকা করা হয়। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে ৫ হাজার ৩০০ টাকা মজুরি কার্যকর হয়েছিল। সাবেক শ্রম প্রতিমন্ত্রী বলেছিলেন, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো শ্রমিকের মজুরি বাড়ানোর কথা বলে অথচ দাম বাড়ানোর কথা বললে এড়িয়ে যায়। এই বাস্তবতায় আবার অর্থনীতিবিদরা বলে থকেন, প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশের গার্মেন্ট শিল্প একটি বিশ্বশিল্পের অংশ। এর মধ্য দিয়ে যে উদ্বৃত্ত মূল্য তৈরি হয় তা বিতরণ হয় বিশ্বব্যাপী। বিশ্ববাজারের বিভিন্ন পক্ষ সম্পর্কে সংগৃহীত তথ্য থেকে একটা গড় হিসাব দেয়া যায়। বাংলাদেশের যে তৈরি পোশাক কারখানা মালিক বিক্রি করছেন ১৫-২০ ডলারে, তা ইউরোপে বা যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি হচ্ছে ১০০ ডলারে, গড়ে তার মধ্যে ২৫-৩০ ডলার নিচ্ছে সেই রাষ্ট্র, ৫০-৬০ ডলার নিচ্ছে বিদেশী কোম্পানিগুলো আর শ্রমিক পাচ্ছে অনেক কম। আমরা মনে করি এ অবস্থা আর চলতে দেয়া যায় না। বিদেশী ক্রেতাদেরকে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাব বাস্তবায়নে কৌশলী হতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের সক্রিয়তা ও বিচক্ষণতাই কাম্য। আমাদের প্রত্যাশা নতুন মজুরি ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে শ্রমিকরা কাজে ফিরেছেন। কোন পরিস্থিতিতেই দেশের পোশাক শিল্পকে ক্ষতিগ্রস্ত করা যাবে না।
×