ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সরকারের উন্নয়ন যাত্রা ও জনগণের প্রত্যাশা

প্রকাশিত: ০৪:৩৫, ১৬ জানুয়ারি ২০১৯

সরকারের উন্নয়ন যাত্রা ও জনগণের প্রত্যাশা

২০১৯ বাংলাদেশের জন্য শুভ বার্তা বয়ে এনেছে। আর সে শুভ বার্তাটি হচ্ছে, জাতীয় ভোটে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষ শক্তির বিশাল জয়ের। সে শুভ বার্তাটি হচ্ছে, উন্নয়নের পথে মহাযাত্রার এবং দেশকে একটি যথার্থ মাইলফলকে পৌঁছে দেয়ার সুন্দর সূচনার। যা উন্নয়নশীল এই দেশটিকে কাক্সিক্ষত সাফল্যের লক্ষ্যে নিয়ে যাবে দ্রুততর গতিতে। আর বাংলাদেশের মানুষ উৎসবের মধ্য দিয়ে ভোটে অংশগ্রহণের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শেখ হাসিনাকেই তাদের যোগ্য কা-ারী হিসেবে নির্বাচিত করেছেন। এর মধ্য দিয়েই উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার পথে নতুন বছরে নতুন যাত্রা শুরু হলো বাংলাদেশের। বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচনের ফল যদি এ রকম না হতো তাহলে নতুন বছরটা যে দেশবাসীর জন্য চরম অশান্তির হয়ে উঠতো, তাতে কোন সন্দেহ নেই। সারাদেশে রক্তের হোলি খেলা শুরু হতো। অপশক্তির তা-ব হানাহানিতে দেশবাসীর ঘুম হারাম হয়ে যেত। সারাদেশে আজ বিরাট স্বস্তি। নির্বাচন পরবর্তী নৃশংস সহিংসতা নেই। হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, লুণ্ঠন, দখল, অগ্নিসংযোগ নেই। নৌকার ভোটারসহ ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিপদে পড়ার ভীতি নেই। দেশে নতুন বছরের শুরুতে একটি উৎসবের পরিবেশ বিরাজ করছে। আমার মতো অনেকেরই শঙ্কা, বিএনপি বা ঐক্যফ্রন্ট জিতলে দেশটা অন্ধকার পথে হাঁটা শুরু করত। দেশের মানুষ উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার পক্ষে যে ভোটবিপ্লব ঘটিয়েছে তা অভূতপূর্ব। মানুষ জানিয়ে দিয়েছে তারা উন্নয়নের সঙ্গেই থাকতে চায়। বাংলাদেশের উন্নয়নের এই মহাযাত্রায় বিশ^ নেতৃবৃন্দও অভিভূত। নতুন বছরে বাংলাদেশের মানুষের এই রায় ও আকাক্সক্ষাকে বিশ^ নেতারাও অভিনন্দিত করেছেন। যা আমাদের উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে সাফল্যম-িত করার পথ ত্বরান্বিত করবে। বিজয়ের মাসে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভূমিধস বিজয়ের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা চতুর্থবারের মতো দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পেলেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে এটি একটি রেকর্ড ভঙ্গকারী ঘটনা। এ বিজয় মুক্তিযুদ্ধের, এ বিজয় দেশের শান্তি, স্থিতিশীলতা, সার্বিক উন্নয়নের, এ বিজয় স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র কাঠামো রক্ষার। এ ঐতিহাসিক বিজয়ের মাধ্যমে দেশের অগ্রযাত্রার পথ মসৃণ হলো। বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী সগৌরবে উদযাপনের পথ সুগম হলো। বাঙালী জাতির সৌভাগ্য যে, দেশের সফল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফের রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে পেরেছেন। এর মধ্য দিয়ে কেবল যে বাংলাদেশের গত ১০ বছরের উন্নয়নের ধারাবাহিকতাই রক্ষা পাবে তা নয়, বরং বিশে^ দেশের মর্যাদা সুউচ্চ হবে এবং বিশ্ব নেতৃত্বের আসনে উপনীত হবেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যা বাংলাদেশের মানুষের জন্য গর্ব করার বিষয়ে পরিণত হবে। আমাদের সামনে এখন সে দিনটিই সমাগত। বাঙালী জাতিকে স্বাধীনতা উপহার দিয়েছেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বিপথগামী সেনাদের একটি ঘাতক চক্রের হাতে সপরিবারে খুনের শিকার হয়ে এ অবিসংবাদিত নেতা তাঁর দেশগড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে যেতে না পারলেও তাঁরই সুযোগ্য কন্যা এশিয়ার লৌহমানবী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানা এক দশকের শাসনে বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে অনন্য মাত্রায় নিয়ে গেছেন। এবার সেই উন্নয়ন কাঠামো আরও সুদৃঢ় হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নতুন সরকারে এক ঝাঁক নতুন মুখ দেখে অনেকের মতো আমিও চমকিত হয়েছি। ৪৭ সদস্যের নতুন মন্ত্রিসভার ২৭ জন একেবারে নতুন। এই নতুনদের স্বাগত জানিয়েছেন অনেকেই। ভূমিধসের মতো বড় বিজয় নিয়ে ক্ষমতায় এসেছে এবারের সরকার। মানুষের অনেক আশা, প্রত্যাশা। নতুনদের নিয়ে সেসব পূরণ করা একটা বড় চ্যালেঞ্জ বটে। তবে আমাদের সব ভরসার জায়গা হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি খুবই শক্ত হাতে হাল ধরেন, তাহলে নতুনদের নিয়ে সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা অবশ্যই সম্ভব। এবার দৃষ্টি দিতে হবে নির্বাচনী ইশতেহারের দিকে। জনগণকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ করার সময় এখন। বর্তমান মন্ত্রিসভার এ সদস্যদের নিয়ে দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা হবে প্রথম চ্যালেঞ্জ। এই কাজটি দক্ষতার সঙ্গে সব রকম বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে দৃঢ়তার সঙ্গে এগিয়ে নিতে হবে। জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে হবে। দুর্নীতির বিষয়ে জিরো টলারেন্সের প্রতিশ্রুতি ভুলে গেলে চলবে না। দুর্নীতি শক্ত হাতে নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। দলমত নির্বিশেষে আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। দুর্নীতি দমন কমিশনের পরিধি বৃদ্ধি করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় আইন সংস্কার করতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, বর্তমান মন্ত্রিসভার সদস্যরা যেহেতু পরীক্ষিত কর্মী ও সব ধরনের অভিযোগমুক্ত তাঁরা সমাজকে দুর্নীতিমুক্ত করার ব্যাপারে শেখ হাসিনাকে যথাযথ সহযোগিতা করতে পারবেন। দেশের ব্যাংকিং খাত নিয়ে অনেক সংশয়, অনেক প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। ঋণখেলাপী সংস্কৃতি বেড়ে গিয়েছে অস্বাভাবিকভাবে। এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী ইতোমধ্যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা শুরু করেছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে খেলাপী ঋণের বিস্তারিত বিবরণ চেয়েছেন এবং তিনি বলেছেন বিশেষ কৌশল অবলম্বন করে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ঋণখেলাপী সংস্কৃতির অবসান ঘটানো হবে। আমি তাঁর সাফল্য কামনা করি। ঘুষ-দুর্নীতি মহামারী আকারে বিস্তৃত হয়েছে। বর্তমান মন্ত্রিসভার পরিচ্ছন্ন প্রকৃতির সদস্যদের দৃঢ় অবস্থান পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটাতে সফল হবে। যুদ্ধ অপরাধীদের বিচারকাজ অব্যাহত রাখতে হবে। জঙ্গীদের সমূলে উৎখাত করতে হবে। জামায়াতে ইসলামী দল বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্যের অঙ্গীকার না করলে ও স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তাদের কৃতকর্মের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা না করলে তাদের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে হবে। আমাদের চাওয়ারও শেষ নেই। যানজট থেকে দেশকে মুক্ত করতে হবে। শিক্ষাক্ষেত্রে যে নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়েছে তার অবসান ঘটাতে হবে। শুধু জিপিএ ফাইভ নিয়ে নাচানাচি না করে শিক্ষার মান বৃদ্ধির জন্য বাস্তব পদক্ষেপ নিতে হবে। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে যে সব সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে তার সমাধান করতে হবে। উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য গঠিত এ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিলকে অবিলম্বে কার্যকর করতে হবে। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ ও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শক্রমে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নিয়োগ, পদোন্নতির প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও ত্রুটিমুক্ত করতে হবে। একটি সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে দেশের সকল সরকারী বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি নিশ্চিত করে জনগণের ভোগান্তির নিরসন করা খুবই জরুরী। বিগত বেশ কয়েক বছর যাবত এ বিষয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে অনেক উদ্যোগ নেয়া হয়েছে কিন্তু কোনটাই সফল হয়নি। এর মূল কারণ এসব ভর্তি পরীক্ষার নামে সুবিধাভোগীশ্রেণী তৈরি হয়েছে যারা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর স্বায়ত্তশাসনের আইনের বর্মে সুরক্ষিত হয়ে আছে। এর একটিই সমাধান- যা হলো একটি অর্ডিন্যান্স জারির মাধ্যমে সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন করা। এই যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করলে দেশের সাধারণ জনগণ উপকৃত হবে। সরকারকে ধন্য ধন্য বলে অভিনন্দিত করবে। নতুন বছরের নতুন উদ্যোগের সঙ্গে এই পুণ্য কাজটি করতে পারলে ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ হবে সরকারের সাফল্য। সরকারকে দৃষ্টি দিতে হবে কর্মসংস্থানে। দৃষ্টি দিতে হবে স্বাস্থ্য খাতে, পরিবেশ খাতে এবং সর্বোপরি ধনী দরিদ্রের বৈষম্য দূর করার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। মানুষের অনেক আশা অনেক চাওয়া। কতটুকু সফল হবে সরকার, কতটুকু হতাশ হবে জনগণ- সবকিছু নির্ভর করছে জননেত্রী শেখ হাসিনার ওপর। তাঁর ওপর আস্থা সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্ব নেতৃবৃন্দও আজ বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়া নিয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছে। আগামীতে একটি সুন্দর সফল ও সুখী বাংলাদেশ দেখার প্রত্যাশায়। লেখক : শিক্ষাবিদ ও রাজনীতি বিশ্লেষক
×