ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

রাজধানীতে চেকপোস্ট ৫৭

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ১৬ জানুয়ারি ২০১৯

রাজধানীতে চেকপোস্ট ৫৭

গাফফার খান চৌধুরী ॥ সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে মরিয়া সরকার। এবার ট্রাফিক আইন অমান্যকারীদের ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাজা দেয়ার ব্যবস্থা থাকছে। পাশাপাশি ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা সুশৃঙ্খল করতে এবার রাজধানীতে ৫৭টি পয়েন্টে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। আর নির্ধারণ করা হয়েছে ১৩০টি বাস থামানোর জায়গা। নির্ধারিত জায়গায় বাস বা অন্যান্য যানবাহন না থামালে জরিমানা করা হবে। কোন কোন ক্ষেত্রে চালকের লাইসেন্স বাতিল করার নির্দেশনাও রয়েছে। যানজট সহনীয় পর্যায়ে আনতে এবং দুর্ঘটনায় প্রাণহানি কমাতেই এমন কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এমন ব্যবস্থাপনা টেকসই করার জন্য নিয়মিত মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মঙ্গলবার থেকে আবারও টানা পনেরো দিন ট্রাফিক সপ্তাহ ঘোষণা করা হয়েছে। ট্রাফিক সপ্তাহ শুরুর আগের দিন সোমবারই আইন অমান্য করায় প্রায় ৩২ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে সাড়ে পাঁচ হাজারের বেশি মামলা হয়েছে। দিন দিন ট্রাফিক অভিযানের মাত্রা বাড়িয়ে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানোর কড়া নির্দেশনা জারি করা হয়েছে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে। বিদায়ী বছরের ২৯ জুলাই দুপুরে রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কের কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সামনে এমইএস বাসস্ট্যান্ডে যাত্রীবাহী জাবালে নূর পরিবহনের একটি বাসের চাপায় শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্রী দিয়া খানম মীম ও বিজ্ঞান বিভাগের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র আব্দুল করিম রাজিব নিহত হয়। আহত হয় অন্তত ১৫ শিক্ষার্থী। এমন ঘটনার পর সারাদেশের শিক্ষার্থীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে পড়ে। তারা রাস্তা অবরোধ করে পুরো দেশের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানোর আশ্বাস দিলে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন ছেড়ে ক্লাসে ফেরে। এরপর নতুন সরকারের সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও ক্ষমতা লাভের আগে ক্ষমতা পেলে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানোর আশ্বাস দেন। তারই ধারাবাহিকতায় নতুন করে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে মঙ্গলবার রাজধানীর গুলিস্তানে ‘ট্রাফিক শৃঙ্খলা পক্ষ- ২০১৯’ উদ্বোধন করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। এ সময় মন্ত্রীর সঙ্গে ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া, অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম, কৃষ্ণপদ রায়, মীর রেজাউল আলম, ট্রাফিক বিভাগের উপকমিশনারসহ উর্ধতন পুলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, নিজেদের জন্যই ট্রাফিক আইন মানা প্রয়োজন। দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছানোর চেয়ে জীবন অনেক মূল্যবান। তাই সবার উচিত ট্রাফিক আনা মেনে চলা। ট্রাফিক আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন তিনি। এ ক্ষেত্রে কোন ছাড় দেয়া হবে না। মন্ত্রী বলেন, ট্রাফিক আইন মানুন, যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং করবেন না, বেপরোয়া গাড়ি চালাবেন না, হেলমেট ব্যবহার করুন, মোবাইলফোন খুবই গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। কিন্তু মোবাইলফোনে কথা বলা অবস্থায় সড়ক পারাপার হবেন না ও গাড়ি চালাবেন না, নিকটস্থ ফুটওভার ব্রিজ ও আন্ডারপাসটি ব্যবহার করুন। ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, গত বছর নিরাপদ সড়কের দাবিতে দেশজুড়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পর সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতেই এমন উদ্যোগ। উদ্যোগটি কার্যকর থাকবে। কার্যকর থাকার জন্য টেকসই মনিটরিং ব্যবস্থা থাকছে। ট্রাফিক আইনের বিষয়ে পুলিশের নজরদারি থাকার কারণে গত কয়েক মাসের মধ্যে রাস্তায় হেলমেটবিহীন মোটরসাইকেল আরোহী নেই বললেই চলে। এছাড়া ঢাকায় ১৩০টি বাস স্টপেজ চিহ্নিত করা হয়েছে। স্টপেজগুলো সুন্দর করতে সিটি কর্পোরেশন কাজ করে যাচ্ছে। এবার ৫৭টি পয়েন্টে চেকপোস্ট স্থাপন করা হয়েছে। এসব পয়েন্টে নিয়মিত ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা মনিটরিংসহ মানুষকে সচেতন করার কার্যক্রমও চলবে। সড়কে উন্নয়নমূলক কাজ চলছে, যার ফলে সঙ্গত কারণেই যানজট রয়েছে। কিন্তু এই যানজট সহনশীল রাখার চেষ্টা চলছে। ডিএমপি ট্রাফিক বিভাগের সাড়ে চার হাজার কর্মী কাজ করছেন। বছরব্যাপী এমন প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে। ট্রাফিক শৃঙ্খলা পক্ষ পালনের পরই নগরীর ফুটপাত দখলমুক্ত করার অভিযান শুরু হবে। উবার-পাঠাওসহ বিভিন্ন রাইড শেয়ারিং এ্যাপগুলো বিপুল পরিমাণ পরিবহন নামিয়ে দিয়েছে। এদের নিয়ন্ত্রণে আনার চিন্তা ভাবনা করা হচ্ছে। ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রেড ক্রিসেন্ট কাজ করবে। প্রয়োজনে পরে রোভার স্কাউটকেও যুক্ত করা হবে। ডিএমপির মিডিয়া বিভাগের উপকমিশনার মাসুদুর রহমান জানান, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ট্রাফিক আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে সোমবার অভিযান পরিচালনা করে ৫ হাজার ৬৮৪টি মামলা দায়ে করা হয়েছে। এসব মামলায় ৩১ লাখ ৭৮ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়াও অভিযানকালে ৩১টি গাড়ি ডাম্পিং ও ৮৭৬টি গাড়ি রেকারিং করা হয়েছে। এসব মামলার মধ্যে শুধু উল্টোপথে গাড়ি চালানোর কারণে ১২শ’ ৮টি গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এই পুলিশ কর্মকর্তা আরও জানান, ট্রাফিক সপ্তাহের উদ্বোধন উপলক্ষে সচেতনতামূলক লিফলেট, প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন, গাইড বই বিতরণ অব্যাহত থাকবে। সমাজের সম্মানিত ব্যক্তিদের নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে সচেতনতামূলক কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। রোভার স্কাউট, রেড ক্রিসেন্ট, গার্ল গাইডস, বিএনসিসি সদস্যদের ট্রাফিক কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করা হবে। ঢাকা সিটি কর্পোরেশন উত্তর ও দক্ষিণের সঙ্গে সমন্বয় করে অবশিষ্ট জেব্রা ক্রসিং ও রাস্তাগুলো মার্কিং করা হবে। মূল সড়কের পাশে অবস্থিত স্কুল কলেজের ক্লাস শুরুর এবং ছুটির সময়ে উক্ত এলাকায় ট্রাফিক পুলিশ ও স্কুল কলেজের ভলান্টিয়ার মোতায়েন করা হবে। এসব জায়গায় যথাযথ ট্রাফিক সাইন স্থাপন করা হবে। হাইড্রলিক হর্ন, দ্রুতগতির যানবাহন, বেপরোয়া গতি, হুটার, বিকন লাইট, উল্টো পথে চলাচল এবং মোটরসাইকেলের আরোহীদের হেলমেট পরিধানসহ সব প্রকার ট্রাফিক আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে বিশেষ ট্রাফিক অভিযান ও মোবাইল কোর্ট কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হবে। ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ ৩০টি ফুটওভারব্রিজ ব্যবহারে পথচারীদের উদ্বুদ্ধকরণে পুলিশ সদস্য মোতায়েন কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। গাড়ি চালানোর সময় স্টপেজ ব্যতীত সব সময় গাড়ির দরজা বন্ধ থাকবে। জেব্রা ক্রসিংয়ের আগে নির্ধারিত জায়গায় লাইন করে গাড়ি দাঁড় করাতে হবে। স্টপেজ ছাড়া যত্রতত্র গাড়ি থামানো যাবে না। বামলেন ঘেঁষে নির্ধারিত স্টপেজে গাড়ি থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা করাতে হবে। ভিডিওর মাধ্যমে মামলা করার কার্যক্রম আরও বাড়ানো হবে। ইতোপূর্বে মডেল করিডোর হিসেবে ঘোষিত বিমানবন্দর থেকে শহীদ জাহাঙ্গীর গেট, ফার্মগেট, সোনারগাঁও, শাহবাগ, মৎস্য ভবন, কদম ফোয়ারা, পুরাতন হাইকোর্ট হয়ে জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ভিআইপি সড়কের ইন্টারসেকশনসমূহে রিমোর্ট কন্ট্রোল সরবরাহ নিশ্চিত করে অটোমেটিক ও রিমোর্ট কন্ট্রোলের মাধ্যমে সিগন্যাল পরিচালনা অব্যাহত রাখা হবে। ফার্মগেট থেকে সাতরাস্তা পর্যন্ত রাস্তাটিকে গাড়ি চলাচলের জন্য উন্মুক্ত রাখা হবে।
×