ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

হারিয়ে যেতে বসেছে ধুপখোলা খেলার মাঠ

প্রকাশিত: ০২:৩০, ১৬ জানুয়ারি ২০১৯

হারিয়ে যেতে বসেছে ধুপখোলা খেলার মাঠ

জবি সংবাদদাতা ॥ রাজধানীর পুরান ঢাকার গ্যান্ডারিয়ায় অবস্থিত একমাত্র খেলার মাঠ ধুপখোলা। ঐতিহ্যবাহি এই মাঠটি একসময় শিশু-কিশোর ও যুবকদের শরীরচর্চা আর খেলাধুলায় মুখরিত থাকত। জায়গাটি ছিল নানা বয়সী নারী-পুরুষের নির্মল বিনোদনের মিলনমেলা। বর্তমানে খেলার মাঠটি আর আগের মত নেই। কয়েক যুগ কর্তৃপক্ষের কোন ধরণের তদারকি না থাকায় এবং দখলবাজদের দৈরাত্মে মাঠের অধিকাংশ জায়গা বেদখল হয়ে পড়েছে। তিন অংশে বিভক্ত মাঠটির এক অংশ স্থানীয় জনসাধরণের জন্য উন্মুক্ত থাকলেও সেখানে বসেছে চটপটির বাজার এবং নানা ধরণের যানবাহনের গ্যারেজ। মাঠের সীমানার মধ্যেই টিনের চালা তুলে দিব্যি বেশ কিছু সংখ্যক চায়ের স্টল নির্মান করা হয়েছে। মাঠ বলতে সেখানকার বড় অংশই দখলে চলে গেছে। প্রতিদিন বিকালে বসে ভ্যান রিক্সা চালকদের সাপ-লুডুর মাধ্যেম জুয়ার খেলার মহা উৎসব। এক কথায় মাদকসেবি আর জুয়ারিদের নিরাপদ আস্তানা হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে ধুপখোলা মাঠটি। ধুপখোলা মাঠের বেহাল দশা উল্লেখ করে ইতোপূর্বে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ করলেও সংস্কারের কোন উদ্যোগ নেই নি কর্তৃপক্ষ। মাঠটির প্রধান তিনটি ফটকের দুইটি ফটক ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। চারপাশের গ্যালারি ভেঙ্গেচুরে ঝুকিপূর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে। আশপাশের লোকজন গ্যালারির ছাদে পায়খানা-প্রসাব অর্থাৎ খোলা স্থানে মলাত্যাগের জায়গা হিসেবে ব্যবহার করছে। মাঠটির চারপশে বেশ কয়েক বছর ধরে বসেছে অবৈধ কাঁচা বাজার ও ফলের দোকান। এই সমস্ত বাজার ও দোকান-পাট থেকে উৎপাদিত মায়লা আবর্জনা খেলার মাঠটির অভ্যন্তরে যত্রতত্রভাবে স্তূপ করে রাখা হচ্ছে। কোথাও কোথাও রয়েছে ইট-পাথর ও নির্মাণ সামগ্রীর স্তুপ। পাশাপাশি চলছে বালি এবং ইটের ব্যবসা। এদিকে কষায়দের কিনে আনা গরু-ছাগল মাঠে বেঁধে রাখা হয়েছে। ঐতিহ্যবাহী একটি মাঠের এভাবে দখল হয়ে যাওয়ার ব্যাপারে স্থানীয়রা দুষছেন কর্তৃপক্ষের উদাসিনতা আর কিছু সংখ্যক দখলবাজদের নৈরাজ্য। আর কর্তৃপক্ষের বার বার দেওয়া আশ্বাস আশ্বাসই থেকে যাচ্ছে। এলাকাবাসী জানায়, ধূপ খোলা মাঠটি ১৯৮৪ সালে এরশাদের শাসনামলে তিন ভাগে ভাগ করা হয়। তার এক ভাগ দেয়া হয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে। আর একটি অংশ ‘ইস্ট এন্ড ক্লাবের অপর অংশটি রাখা হয় স্থানীয় জনসাধারণ জন্য উন্মুক্ত। সরজমিনে দেখা যায়, ধূপখোলা মাঠটি নানা মুখি দখলের শিকার হয়ে আছে। মাঠের জনসাধারনের জন্য রাখা অংশটি গাড়ি রাখার গ্যারেজ হিসেবে ভাড়া দেওয়া হচ্ছে। বিল্লাল ও বাতশা নামে দুই ব্যক্তি প্রতিদিন গাড়ি পতি এক’শ বিশ টাকা আর মাসিক ২৫’শ টাকা হারে গাড়ি পার্কিং ও গ্যারেজ বাবদ ভাড়া উত্তোলন করছে। এসময় পাভেজ নামে এক লেগুনা চালক বলে তার গাড়ি রাখার জন্য প্রতিদিন ৬০ টাকা হারে দিতে হয়। পাশাপাশি এক রিক্সা চালক বলেন তার রিক্সা রাখার জন্য দিতে হয় সাপ্তাহিক ১’শ টাকা। এছাড়া জসিম নামে এক কাভার্ড ভ্যানের চালক বলে তাকে দিতে হয় মাসে ২৫’শ টাকা আর এক দিনের জন্য রাখলে ১’শ টাকা। চা স্টলের রিয়াজ নামে এক দোকানিকে তার দোকানটি বসানোর জন্য কোন কর্তৃপক্ষ বিশেষ করে সিটি করপরেশনের অনুমতি নিয়েছে কি না এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, আমার কারোর অনুমতি নেই নি। জায়গা পড়ে আছে তই কি করব দোকন বসায়েছি। এর জন্য আমাকে পাশের এই ক্লাবকে দিন পতি ১’শ টাকা ভাড়া দিতে হয়। তাই কোন সমস্য হয় না। বাবুল নামে এক রিক্সা গ্যারেজ মিস্ত্রি জানান, তার গ্যারেজে প্রায় শতাধিক গাড়ি পার্কিং করা হয়। তিনি দুই বছর যাবৎ এই গ্যারেজে কাজ করছে। গাড়ি পতি ২০ টাকা উত্তোলন করে শাহ আলম নামে একজন প্রভাব শালীকে দেয়া হয়। প্রায় এক বছর কাজ করছে এক রিক্সা গ্যারেজ মিস্ত্রি জানান, তিনি কামাল ও খোকন নামে দুই ব্যক্তির অধিনে গ্যারেজে কাজ করেন। তার গ্যারেজে প্রায় দুই থেকে আড়াই’শ রিক্সা পার্কিং করা হয়। এটা বৈধ কিনা জানতে চায়লে তিনি বলেন, আমাকে আনছে তাই আমি কাজ করছি আমাকে চলে যেতে বল্লে চলে যাব। এতে বৈধ অবৈধ কিছু বুঝি না। কথা হয় মাঠে রিকসা পরিস্কার করতে থাকা লতিফ নামে এক লোকের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এটা সরকারি জায়গা। তাই সবাই রিকসা, মাইক্রোবাসসহ বিভিন্ন গাড়ি রাখে। তাই আমি ও রেখেছি। যদি সরকার বা কর্তৃপক্ষ থেকে বলা হয় এখানে কিছুই রাখা যাবে না তাহলে আমরা রাখবনা। এদিকে মাঠের অপর অংশ ‘ইস্ট এন্ড ক্লাবের খেলার মাঠ’ হিসেবে পরিচিত। সেখানে নানা ধরণের খেলার টুর্ণামেন্ট হওয়ার কথা থাকলেও সেখানে কোরবানির ঈদ উপলক্ষে বসে গরুর হাট। শীতের মৌসুমে বসে মাস ব্যাপি বাণিজ্য মেলা। স্থানীয় লোকজনের বিয়ে-গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান। কিছু অংশ ব্যবহার করা হয় বহিরাগত গাড়ি পার্কিং এর জন্য। অন্যদিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশটি অন্য দু’টি অংশের চেয়ে মোটামুটি দখলমুক্ত রয়েছে। তবে সেখানেও ভাঙ্গা ইটের টুকরো ছড়িয়ে রয়েছে পুরো মাঠ জুড়ে। ঝুঁকি নিয়ে এই অংশেই স্থানীয় স্কুল ও কলেজ শিক্ষার্থীরা খেলাধূলা করছেন। এ বিষয়ে গ্যান্ডারিয়া ৪৫ নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি ও ইস্ট এন্ড ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো: হাসান আসকারী বলেন, আমাদের ক্লাবের মাঠে প্রতিনিয়ত খেলা ধুলা হচ্ছে। সম্প্রতি ক্রিকেট খেলার টুর্নামেন্ট ছাড়া হয়েছে। তবে পাবলিক মাটটি একেবারে বেদখল হয়ে গেছে। এটা নিয়ে কথা বলার মত কেউ নেই। আমরা চেষ্টা করেও এই জায়গার কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির জন্য কিছুই করতে পারছি না। তবে এবিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পরেশনের মেয়র মো: সাইদ খোকনের নিকট একাধিক বার মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তিনি ফোন ধরেননি। হাসান ইমাম সাগর
×