ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সড়কে শৃঙ্খলা ফিরতে শুরু করেছে, তবে ধীর গতিতে

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ১৭ জানুয়ারি ২০১৯

সড়কে শৃঙ্খলা ফিরতে শুরু করেছে, তবে ধীর গতিতে

গাফফার খান চৌধুরী ॥ সড়কে শৃঙ্খলা ফিরতে শুরু করেছে। যদিও গতি কম। যানজট কমেনি। তবে অনেক জায়গায় সহনীয় পর্যায়ে এসেছে। বুধবার ট্রাফিক সপ্তাহের দ্বিতীয় দিনে রাজধানীর বেশ কয়েকটি পয়েন্টে সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র। যদিও পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, পুরো রাজধানীতে ইলেকট্রনিক সিগন্যালিং সিস্টেম না থাকায় যানজটের ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা ফেরেনি। পুরো নগরে ইলেকট্রনিক অটোমেটিক ট্রাফিক সিগন্যালিং শুরু হলে যানজট অনেকটাই সহনীয় পর্যায়ে আসবে। তবে পুরোপুরি যানজট মুক্ত হবে না। যার প্রধান কারণ প্রয়োজনের তুলনায় রাস্তার স্বল্পতা। ফুটপাথ দখলে থাকা, উন্নয়ন কর্মকা- চলমান থাকাসহ নানা কারণ রয়েছে এর পেছনে। ট্রাফিক সপ্তাহের প্রথম দিন মঙ্গলবার প্রায় সাত হাজার যানবাহনের বিরুদ্ধে প্রায় সাড়ে ৩৭ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাজধানীর শেরে-বাংলানগর, আগারগাঁও, বিজয় সরণি, খেজুরবাগান মোড়ে দেখা গেছে যানবাহনের দীর্ঘ সারি। অন্যান্য দিন এসব যানবাহনকে যত্রতত্র ইচ্ছেমত চলতে দেখা যেত। এদিন দেখা গেল সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ানো। বাম পাশের লেন ফাঁকা করে যানবাহনগুলো দাঁড়িয়ে আছে। অথচ অন্যান্য দিন ইচ্ছেমতো আগে যাওয়ার জন্য বাম লেন বন্ধ করে যানবাহনগুলো থাকত। জেব্রা ক্রসিংয়ের অন্তত দুই ফুট আগেই গাড়ির মাথা। মানুষজন অনায়াসে জেব্রা ক্রসিং দিয়ে রাস্তা পার হচ্ছে। তাও আবার সিগন্যাল পড়ার পর। পাশেই পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তাসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালন করছেন। পেছন ফিরে দেখি ততক্ষণে গাড়ির সারি প্রায় বাণিজ্য মেলার কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। সেখান থেকে সিগন্যাল ছাড়লে দ্বিতীয় দফায় ফার্মগেটের কাছেই দেখা গেল দীর্ঘ সারি। এখানে পুরো রাস্তাজুড়ে গাড়ি। কৃষি অধিদফতরের সামনের রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে। অথচ সামনের বাম দিকের লেন ফাঁকা। পুলিশের মামলা খাওয়ার ভয়ে কেউ সে পথ মাড়াচ্ছেন না। অনেকেই বাম লেনে গিয়ে মাঝপথ দিয়ে আবার সঠিক লেনে উঠেছেন। এমন তিনজন মোটরসাইকেল চালককে শনাক্ত করতে দেখা গেল পুলিশকে। তারা বলছিলেন, আমরা সঠিক লেনেই এসেছি। পুলিশ বলছিল, আপনারা অন্য রাস্তায় এসে আবার ঠিক রাস্তায় ঢুকেছেন। এজন্য তাদের জরিমানাসহ মামলা করা হলো। এমন চিত্র দেখা গেছে, মানিক মিয়া এভিনিউ, আসাদগেট ক্রসিং, কলাবাগান ক্রসিং, রাসেল স্কোয়ার ক্রসিং, বাংলামোটর ক্রসিংসহ বিভিন্ন জায়গায়। আর ফুটওভারব্রিজের সামনে পুলিশ সদস্যদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। তারা রাস্তা দিয়ে কাউকে পার হতে দেননি। তাদের নির্দেশনা মোতাবেক সবাইকে ফুটওভারব্রিজ ব্যবহার করে রাস্তা পার হতে হয়েছে। শুধু বৃদ্ধ, পঙ্গুরা এমন নিয়মের বাইরে ছিলেন। তবে রাস্তায় রেডক্রিসেন্ট বা অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যদের দেখা মেলেনি। রাস্তার লেনগুলো মার্কিং করা হয়নি। ক্রসিংগুলোতে এবং বিভিন্ন চেকপোস্টে রাস্তা পারাপারের নিয়ম জানিয়ে মাইকিং করার দৃশ্য চোখে পড়েছে। তবে তা পরিমাণে কম। লিফলেটও কম বিতরণ করতে দেখা গেছে। তবে পুলিশের তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। বাসগুলোকে নির্ধারিত স্টপেজে থেমে যাত্রী উঠানামা করতে দেখা গেছে। ট্রাফিক কার্যক্রমের সবচেয়ে বেশি তৎপরতা দেখা গেছে ফার্মগেটে। সেখানে অন্তত শ’খানেক পুলিশ সদস্যকে ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। ডিএমপির মিডিয়া বিভাগের উপকমিশনার মাসুদুর রহমান জনকণ্ঠকে জানান, পনেরো দিনব্যাপী ট্রাফিক সপ্তাহের প্রথম দিন মঙ্গলবার ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ট্রাফিক আইন অমান্য করায় ৬ হাজার ৯০৯টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় জরিমানা করা হয়েছে ৩৭ লাখ ১৫ হাজার টাকা এবং এটা আদায় করা হয়েছে। অভিযানে ৩৮টি গাড়ি ডাম্পিং ও ৮৮৯টি গাড়ি রেকার করা হয়েছে। যার মধ্যে উল্টোপথে গাড়ি চালানোর কারণে প্রায় ১২শ’ ৯০টি গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এছাড়া হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহার করার দায়ে ২১৮টি, হুটার ও বিকনলাইট ব্যবহার করার জন্য ১১টি গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। মাইক্রোবাসে কালো কাঁচ ব্যবহারের কারণে ২৩টি মামলা হয়েছে। এছাড়া ২৭শ’ ৬৮টি মোটরসাইকেলের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। ১৩৯টি মোটরসাইকেল আটক করা হয়েছে। গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল ফোনে কথা বলার অপরাধে চালকের বিরুদ্ধে ২৬টি মামলা দেয়া হয়েছে। এই পুলিশ কর্মকর্তা বলছেন, প্রয়োজনের তুলনায় রাস্তা কম থাকায়, ঢাকার সব রাস্তায় অটোমেটিক সিগন্যালিং সিস্টেম না থাকায়, লেন মার্কিং না থাকায়, ফুটপাথ দখলে থাকার কারণে ও অনেক রাস্তার মাঝ দিয়ে উন্নয়ন কর্মকা- চলমান থাকায় যানজট সহনীয় পর্যায়ে আনা যাচ্ছে না। তবে সে চেষ্টা অব্যাহত আছে। প্রসঙ্গত, বিদায়ী বছরের ২৯ জুলাই দুপুরে রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কের কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সামনে এমইএস বাসস্ট্যান্ডে যাত্রীবাহী জাবালে নূর পরিবহনের একটি বাসের চাপায় শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্রী দিয়া খানম মীম ও বিজ্ঞান বিভাগের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র আব্দুল করিম রাজিব নিহত হয়। আহত হয় অন্তত ১৫ শিক্ষার্থী। এমন ঘটনার পর সারাদেশের শিক্ষার্থীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে পড়ে। তারা রাস্তা অবরোধ করে পুরো দেশের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানোর আশ্বাস দিলে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন ছেড়ে ক্লাসে ফেরে। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে মঙ্গলবার থেকে ১৫ দিনব্যাপী ‘ট্রাফিক শৃঙ্খলা পক্ষ- ২০১৯’ উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধন শেষে ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, এবার ৫৭টি পয়েন্টে চেকপোস্ট স্থাপন করা হয়েছে। এসব পয়েন্টে নিয়মিত ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা মনিটরিং করা হচ্ছে। ১৩০টি বাস স্টপেজ করা হয়েছে। ট্রাফিক শৃঙ্খলা পক্ষ পালনের পরই নগরীর ফুটপাথ দখলমুক্ত করার অভিযান শুরু হবে। উবার-পাঠাওসহ বিভিন্ন রাইড শেয়ারিং নিয়ন্ত্রণ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। মূল সড়কের পাশে অবস্থিত স্কুল কলেজের ক্লাস শুরুর এবং ছুটির সময়ে উক্ত এলাকায় ট্রাফিক পুলিশ ও স্কুল কলেজের ভলান্টিয়ার মোতায়েন করা হবে। এসব জায়গায় যথাযথ ট্রাফিক সাইন স্থাপন করা হবে। ট্রাফিক আইন অমান্যকারীদের আইনের আওতায় আনতে মোবাইল কোর্ট কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ ৩০ ফুটওভারব্রিজ ব্যবহারে পথচারীদের উদ্বুদ্ধকরণে পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। মডেল করিডোর হিসেবে ঘোষিত বিমানবন্দর থেকে শহীদ জাহাঙ্গীর গেট, ফার্মগেট, সোনারগাঁও, শাহবাগ, মৎস্য ভবন, কদম ফোয়ারা, পুরাতন হাইকোর্ট হয়ে জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ভিআইপি সড়কের ইন্টারসেকশনসমূহে রিমোট কন্ট্রোল সরবরাহ নিশ্চিত করে অটোমেটিক ও রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে সিগন্যাল পরিচালনা অব্যাহত রাখা হবে। ফার্মগেট থেকে সাতরাস্তা পর্যন্ত রাস্তাটিকে গাড়ি চলাচলের জন্য উন্মুক্ত রাখা হবে।
×