ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

উদ্দেশ্য নির্বাচন, রাষ্ট্র ও সরকারবিরোধী অপপ্রচার চালানো

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়াতে গড়ে তোলা হয়েছে বিশেষ চক্র

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ১৭ জানুয়ারি ২০১৯

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়াতে গড়ে তোলা হয়েছে বিশেষ চক্র

শংকর কুমার দে ॥ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন শেষে নির্বাচনকে বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ করতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে রাষ্ট্র ও সরকার বিরোধী বানোয়াট-মিথ্যা তথ্য অপ-প্রচার, গুজব ছড়াচ্ছে অশুভ মহল। এমনকি প্রধানমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর পরিবার, আত্মীয়স্বজন, মন্ত্রিপরিষদ, নির্বাচন কমিশনার, সেনাবাহিনী প্রধান, পুলিশ মহাপরিদর্শক, ডিজি র‌্যাব ও ডিএমপি কমিশনারসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে টার্গেট করছে ওই চক্র। গত এক মাসে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্নস্থান থেকে এই ধরনের অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে ২২ জনকে। দেশে তো বটেই, এমনকি বিদেশে বসেও রাষ্ট্র ও সরকারের বিরুদ্ধে এই ধরনের অপ-প্রচার চালাচ্ছে ওই চক্রের সদস্যরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে মনিটরিং ও নজরদারি শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে এ খবর জানা গেছে। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, একাদশ জাতীয় নির্বাচনের সময় এবং আগে গুজব ও অপপ্রচার ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা শুরু করে। নির্বাচনের সময়ে কঠোর মনিটরিং ও নজরদারির কারণে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের এই ধরনের অপরাধ অনেকটাই দমন করা গেছে। কিন্তু নির্বাচন পরবর্তী আবারও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেশ-বিদেশে ভুয়া আইডি খুলে গুজব, অপপ্রচার করার অভিযোগ আসছে। তবে নির্বাচন পরবর্তী সময়ে মনিটরিং সেলগুলোর কার্যক্রম আরও জোরদার করে আরও কার্যকরভাবে পরিচালনার জন্য প্রযুক্তিগত সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে পুলিশ সদর দফতরের দাবি। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, একাদশ জাতীয় নির্বাচন শেষ হয়ে গেলেও সরকার ও রাষ্ট্রবিরোধী অপপ্রচার চলছে। নির্বাচনকে বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ করতে বিভিন্নভাবে অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন গুজব ও বিভ্রান্তিকর খবর রটানো হচ্ছে। এসবের অভিযোগে সর্বশেষ গত ক’দিনে র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ৭ জনকে গ্রেফতার করেছে। রাজধানীর উত্তরা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, মাদারীপুর, কুমিল্লা, কিশোরগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৭ জনকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে র‌্যাব। গ্রেফতারদের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে রাষ্ট্র ও সরকারবিরোধী বানোয়াট-মিথ্যা তথ্য প্রচার, গুজব ছড়ানো, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিপরিষদ, নির্বাচন কমিশনার, সেনাবাহিনী প্রধান, পুলিশ মহাপরিদর্শক, ডিজি র‌্যাব ও ডিএমপি কমিশনারসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির ছবি বিকৃত করে প্রচারের অভিযোগ রয়েছে। অপপ্রচার ও গুজব প্রতিরোধে কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলো। এছাড়াও বিভিন্ন মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট হলে তারাও বিষয়টি গুজব প্রতিরোধ সেলকে অবহিত করে। যে গুজব রাষ্ট্রের শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য ক্ষতিকর, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করে, নাশকতা, সহিংসতা ও গণবিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে সেসব বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবহিত করা হয়। তারা দ্রুত সেসবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর পুত্র ও স্বজনদের বিরুদ্ধে গুজব, অপপ্রচার ছড়ানোর বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরে এসেছে। গত ১১ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ স্বাক্ষরিত ওই প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে অভিযোগ করা হয় যে, ‘গত কিছুদিন ধরেই আমরা অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে- বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা, কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা, বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক এবং বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্রী সায়মা ওয়াজেদ হোসেন পুতুলের নামে কিছু ‘ফেইক ফেসবুক পেজ’ (ভুয়া ফেসবুক) বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের বাইরে থেকে পরিচালিত হচ্ছে এবং সেই পেজগুলো থেকে নানা রকম মিথ্যা সংবাদ প্রচার করা হচ্ছে। জনসাধারণ ও সাংবাদিকদের অবগতির জন্য আমরা আবারও জানাচ্ছি যে, বঙ্গবন্ধুর কন্যাদ্বয় শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা ও শেখ হাসিনার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ হোসেন পুতুল এমনকি তাদের পরিবারের কারোই এখনও অফিসিয়ালি কোন ফেসবুক পেজ চালু হয়নি। এরকম পেজগুলোর এ্যাডমিনদের আমরা অনুরোধ করব পেজগুলোকে ‘আনঅফিসিয়াল’ হিসেবে ঘোষণা দিয়ে আমাদের সহযোগিতা করবেন- অন্যথায় অতিসত্বর আইনগত ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে বাংলাদেশ আওয়ামী। এই ধরনের গুজব, অপপ্রচার কারা কিভাবে চালাচ্ছে সেই বিষয়ে ইতোমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। র‌্যাব সদর দফতরের একজন কর্মকর্তা বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়ানোর অভিযোগে ২০১৮ সালে ৪৮ জনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। শুধুমাত্র ডিসেম্বরেই ২২ জনকে গ্রেফতার করা হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য দিয়ে গুজব ছড়ানো একটি গুরুতর অপরাধ। এই অপরাধ নিয়ন্ত্রণে র‌্যাব সার্বক্ষণিকভাবে কাজ করছে। নির্বাচনের আগে যেভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে মনিটরিং করা হয়েছে, ঠিক সেইভাবে ভবিষ্যতেও মনিটরিং করা হবে। শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মনিটরিং আরও জোরদার করা হবে। এ বিষয়ে কোন ছাড় নেই। পুলিশ সদর দফতরের একজন কর্মকর্তা বলেন, একাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে পুলিশের পক্ষ থেকে দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় মনিটরিং সেল গঠন করা হয়। এজন্য পুলিশ সদর দফতরে একটি সমন্বয় সেলও গঠন করা হয়। পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানায়, নির্বাচনের আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে গুজব ঠেকাতে পুলিশ সদর দফতরের পক্ষ থেকে বেশ কিছু উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। পুলিশ সদর দফতরেই একটি সাইবার মনিটরিং সেল গঠন করা হয়। সারাদেশের পুলিশ সুপারদের এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে ও সার্বক্ষণিক নজরদারি করতে বলে দেয়া হয়। এছাড়াও স্থায়ীভাবে এ বিষয়ে পুলিশের নতুন একটি ইউনিট গঠনেরও প্রক্রিয়া চলছে। ইউনিটটি গঠনের প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। কোন অবস্থাতেই কেউ গুজব ও অপপ্রচার ছড়িয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে না পারে সেজন্য কঠোর নজরদারি ও মনিটরিং করাসহ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে পুলিশ কর্মকর্তার দাবি।
×