ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

পাশে জাতিসংঘ

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ১৭ জানুয়ারি ২০১৯

পাশে জাতিসংঘ

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের পর স্বাধীন দেশে বাংলা ভাষার কবি আবুল হাসান লিখেছিলেন, ‘মৃত্যু আমাকে নেবে, জাতিসংঘ আমাকে নেবে না।’ বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামীরা পাকিস্তানী হানাদারদের গণহত্যার শিকার যখন, তখন জাতিসংঘ পাশে এসে দাঁড়ায়নি। গণহত্যা বন্ধে কার্যকর কোন পদক্ষেপও নেয়নি। শরণার্থীদের সাহায্য সহায়তায় সেভাবে দাঁড়ায়নি। আজ যেমন মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়িয়েছে, গণহত্যার বিরুদ্ধে সোচ্চার, মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের আয়োজনে সক্রিয়, একাত্তর সালে বাংলাদেশ সেভাবে পায়নি। স্বাধীনতার পাঁচ দশকের মাথায় সেই জাতিসংঘ অন্যরূপে আবির্ভূত। বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে জাতিসংঘ ভূয়সী প্রশংসা করে আসছে। টেকসই উন্নয়নে বাংলাদেশ যে রোল মডেল হতে পারে জাতিসংঘের কণ্ঠে তা-ই উচ্চারিত হচ্ছে। এমনকি বাংলাদেশ যে উন্নয়নশীল দেশের পথে এগিয়ে যাচ্ছে, তার স্বীকৃতিও দিয়েছে জাতিসংঘ। নিম্নমধ্যম আয়ের দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার ক্ষেত্রে জাতিসংঘ বাংলাদেশকে সমর্থন যুগিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য বাংলাদেশের টানা তৃতীয় দফার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নানা পদকেও ভূষিত করেছে। রোহিঙ্গা বাস্তুচ্যুতদের আশ্রয়দান এবং সার্বিক সহায়তাদানের ক্ষেত্রে শেখ হাসিনার মানবিক সমর্থন ও মানবতার দিশারী হিসেবে অবস্থান জাতিসংঘসহ বিশ্ববাসীর কাছে প্রশংসিত হয়েছে। সেই জাতিসংঘ একাদশ সংসদ নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে গঠিত শেখ হাসিনার নয়া সরকার ও অন্য সহযোগীদের সঙ্গে কাজ করতে তৈরি আছে বলে ঘোষণা করেছে। সংস্থার এই ঘোষণা বাংলাদেশের আরও এগিয়ে যাবার পথকে সমুন্নত করবে। অবশ্য সংস্থাটি এমনটাই চায় যে, বাংলাদেশে ২০৩০ সালে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ, শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক সমাজ, সুশাসন এবং আইনের শাসন সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আর সে কারণে সরকার ও সংশ্লিষ্ট অন্যদের সঙ্গে কাজ করতে চায়। গত ৭ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিসভার শপথ গ্রহণের মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে নয়া সরকার। ইতিবাচক পরিবর্তন আনায় বাংলাদেশ জাতিসংঘের মানবাধিকার সনদ ও আন্তর্জাতিক চুক্তির আলোকে মানবাধিকারের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নেও বাংলাদেশের সঙ্গে একযোগে কাজ করতে চাওয়ার কথাও বলেছে। এছাড়া জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের নয়া সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ সরকারের কার্যকর ও সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণেও স্বাগত জানিয়েছে। নির্বাচনের বেশ আগেই জাতিসংঘে ধরনা দিয়েছিল বিএনপি-জামায়াত জোটের নেতা ও লবিসরা। বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে আয়োজনের কথাও তুলে ধরেছিল। কিন্তু বাংলাদেশের পরিস্থিতি এমন নয় যে, জাতিসংঘকে হস্তক্ষেপ করতে হবে। তাই তারা এসব আবেগ ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়েছে। উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথযাত্রায় বাংলাদেশ জাতিসংঘকে পাশে পাওয়ার অর্থই হচ্ছে উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তরিত হওয়ার পথ সুগম হওয়া। শুধু জাতিসংঘ নয়, বিশ্বের আরও বহু দেশ শেখ হাসনিার নয়া সরকারের সঙ্গে কাজ ও সহযোগিতা করার কথা জানিয়েছে। ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থা তথা ওআইসির সব দেশ শেখ হাসিনার নয়া সরকারের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে বলেছে, গত দশ বছরে প্রধানমন্ত্রীর অক্লান্ত পরিশ্রমের ফল হিসেবে এই বিজয় এসেছে। সব মুসলিম দেশ চায় বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে। অতীতে বাংলাদেশের কোন সরকার এমন একচেটিয়া ও বাস্তবিক সমর্থন যেমন পায়নি, তেমনি সহায়তাও নয়। বিশ্ববাসীর কাছে সফল রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে শেখ হাসিনা আজ সমাদৃত। তার পাশে তাই দাঁড়াতে চায় বিশ্বের উন্নত উন্নয়নশীল দেশ শুধু নয়, নিম্ন আয়ের দেশগুলোও। বাংলাদেশ আজ বিশ্ব মানচিত্রে বিশ্ববাসীর সমর্থনপুষ্ট একটি দেশে উন্নীত হয়েছে। তাই জাতিসংঘসহ সবার সহযোগিতার হাত প্রশস্ত হচ্ছে, তেমনি অনুসরণীয়ও হয়ে উঠছে। তাই বাঙালী ক্রমশ বিশ্ব মানবের মাঝে ঠাঁই নিচ্ছে। এ যাত্রা অব্যাহত রাখাই এখন দেশবাসীরও কাজ সরকারের পাশাপাশি।
×