কোন মানুষই একা বসবাস করতে পারে না। তাকে সমাজবদ্ধ হয়ে বসবাস করতে হয়। নিজের পরিবার, আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী নিয়েই সমাজ গঠিত হয়। আর এই সমাজে বসবাস করতে হলে সমাজের প্রতি কিছু দায়িত্ব পালন করতে হয়। শুধু নিজের আত্মীয়-স্বজনের প্রতি দায়িত্ব পালনের মাধ্যমেই তাঁর কর্তব্য শেষ নয় বরং সমাজের উঁচু-নিচু সব মানুষের প্রতি দায়িত্ব পালন করতে হবে। মানুষ মরণশীল, একটা নির্দিষ্ট সময়ে একটা মানুষ পৃথিবীর বুকে বেঁচে থাকে এরপর তাঁর সময় ফুরিয়ে গেলে পৃথিবীর বুক থেকে চিরতরে হারিয়ে যায়। একটা সময় হারিয়ে যাওয়া মানুষকে সবাই ভুলে যায়। কিন্তু কর্তব্যনিষ্ঠ ব্যক্তি অর্থাৎ যারা সমাজের প্রতি সঠিক দায়িত্ব পালন করেন তাঁরা হয়ে থাকেন চিরস্মরণীয়। অর্থ, শ্রম, স্বদিচ্ছা সময় দিয়ে সমাজের প্রতি দায়িত্ব পালন করতে হয়। সমাজের অর্থবান ব্যক্তিদের দায়িত্ব সমাজের গরিব শ্রেণীর মানুষদের অর্থ দিয়ে সাহায্য করা। সৃষ্টিকর্তা কোন মানুষকেই সকল কিছুর অধিকারী করে দুনিয়ায় পাঠাননি। মানুষ বিভিন্ন কারণে একে অপরের ওপর নির্ভরশীল আর মানুষের অপূর্ণ জিনিসগুলো পূর্ণ করবে সাহায্য করে সমাজের অন্য মানুষরা। এটা তাঁদের দায়িত্ব। এভাবে সমাজের সকলের প্রতি সকলের দায়িত্ববোধ রয়েছে। সৃষ্টিকর্তা কাউকে অর্থের অধিকারী করেছেন, কাউকে করেছে শ্রমের অধিকারী। অর্থবানদের দায়িত্ব অর্থ দিয়ে সমাজের দরিদ্র মানুষদের সাহায্য করা। পৃথিবীর সকল স্মরণীয় ব্যক্তি সমাজের প্রতি তাঁদের দায়িত্ব যথাযথ পালন করেছিলেন যেমন, আমাদের প্রিয়নবী হযরত মুহম্মদ (স), বেগম রোকেয়া, মাদার তেরেসা, হাজী মোহাম্মদ মহসীন, মহাত্মা গান্ধী, ঈশ^রচন্দ্র বিদ্যাসাগরসহ অনেক গুণী ব্যক্তি সমাজের জন্য অনেক কাজ করে গিয়েছেন।
এসব সুমহান ব্যক্তিরা জাতি ও সমাজের প্রতি অসামান্য দায়িত্ব পালন করে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন। মানুষের প্রতি দায়িত্ব পালন করতে কিছু না কিছু ত্যাগ করতে হয়। কিছু ত্যাগ হলেও অনেকে এতে আবার সুখ খুঁজে পায়। সমাজে শুধু নিজের কথা চিন্তা করলেই সমাজে উন্নতি করা সম্ভব নয়। যিনি সামাজিক হতে পারবেন না তিনি স্মরণীয় হতেও পারবেন না। একজন মানুষ যদি সমাজে সবার কথা ভাবেন, সবার প্রতি যথাযথ দায়িত্ব পালন করেন তাহলে সবাই একদিন সেই মানুষটাকে নিয়ে ভাববে। তাই সর্বদা নিজের স্বার্থের কথা না ভেবে মানুষের কথা ভাবা উচিত। অন্যের সুখের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে সমাজের প্রতি দায়িত্ব পালন করতে হবে। কবি বলেছেন, পরের কারণে স্বার্থ দিয়া বলি/এ জীবন মন সকলি দাও/তার মতো সুখ কোথাও কি আছে?/আপনার কথা ভুলিয়া যাও।
সকলের উচিত সমাজের প্রতি যথায়থ দায়িত্ব পালন করা। তবেই দেখবেন একজন মানুষ সামাজিক হয়ে উঠবে। কেউ যদি সমাজের মানুষের প্রতি দায়িত্ব পালন না করে, তাহলে সে সমাজের সকলের কাছে অসামাজিক বলে বিবেচিত হবে। এমনকি মৃত্যুর পরও তাঁর বদনাম ঘোচা সম্ভব হয় না। মানুষ মানুষের জন্য। আমাদের সমাজে বাস করতে হলে তাই মানুষের কথা চিন্তা করতে হবে। সমাজে সুখ, সমৃদ্ধি বজায় রাখার জন্য শুধু নিজের কথা না ভেবে অন্যের সুখের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দিতে হবে। সকলের মনে ধারণ করতে হবে মানবতার চিরায়ত বাণী,
‘সকলের তরে সকলে আমরা/প্রত্যেকে মোরা পরের তরে’
চাঁদপুর, ফরিদগঞ্জ থেকে